২ বছর লাভ ছাড়া তেল বেচবে বসুন্ধরা, যদি সরকার সহায়তা করে

কাঁচামাল আমদানি ও এলসি খুলতে সরকারের সহায়তা পেলে আগামী দুই বছর সয়াবিন তেল কোনো ধরনের লাভ ছাড়া বিক্রি করতে প্রস্তুত দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। এছাড়া সাপ্লাই চেইন ঠিক করা, চোরাকারবার বন্ধ করা, গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং সরকার নির্ধারিত ডলারের দামে ব্যাংকে এলসি খোলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে ভোজ্যতেল, চিনি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান মো. রেদোয়ানুর রহমান।

এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. বিন ইয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় বসুন্ধরা, মেঘনা, সিটি, এস আলম, দেশবন্ধু, এডিবল অয়েল, টি কে গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম ৫২ শতাংশ কমেছে কিন্তু আমাদের এখানে কেন কমেনি? দাম কমানো হবে কিনা? শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা গ্রুপের ফুড বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান রেদোয়ানুর রহমান বলেন, আমি বলি কোন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। আমি আমাদের কোম্পানির তথ্য সব কিছু নিয়ে এসেছি। এখানে তা প্রকাশ করতে পারি। এখানে আমি কিছু প্রস্তাব দিতে পারি। আজ থেকে দুই বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম, যতদিন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলবে আমরা কোনো লাভ ছাড়া পণ্য (সয়াবিন তেল) বিক্রি করতে পারি। এতে এক টাকাও প্রফিট করব না। আমাদের কারখানা ৪ মাস বন্ধ ছিল। আমরা তখন সরকারকে বলেছিলাম, আপনারা আমাদের ক্রুড ওয়েল দেন। যেহেতু ডলার সংকটের কারণে আমদানি করতে পারছি না। কারণ আমাদের কারখানায় ৫-৭ হাজার লোক কাজ করে, তারা বেকার হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, যে এডিবল অয়েল বিক্রি করা হয়, তা সফটওয়্যারে উল্লেখ থাকে। ভ্যাট চালান ছাড়া কোনো পণ্য বের হবেই না। আজকে ২১ তারিখ, আমি কোম্পানির পক্ষ থেকে বলছি, অন্তর্বর্তী সরকার বলেন বা অন্য কোনো সরকার বলেন। আমরা আরও দুই বছর জিরো প্রফিটে ব্যবসা করা লাগলে আমরা করব। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রস্তুত আছে। আমরা জিরো প্রফিটে ব্যবসা করতে চাই। আমাদের কোনো সমস্যা নাই। এখন এডিবল অয়েলে ৩০টি কোম্পানি আছে।

রেদোয়ানুর রহমান বলেন, সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে হবে। ক্রুড ওয়েল ব্রাজিল থেকে আনতে ৪৫ থেকে ৫৫ দিন লাগে। তেলবীজ এনে সেটা বাজারজাত করতে ৬০ দিনের ওপরে সময় লাগে। এ সময় কমিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আমরা ডলার কিনতে পারি না। ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংকের দাম অনুসারে পাওয়া যায় না। সব ব্যাংকেই ডলারের দাম বেশি রাখে। এই খরচটা গ্যাপ থেকে যায়। এই জায়গা ঠিক করতে হবে। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকার কম। এরপর থেকে ডলারের দাম বেড়ে হয়েছিল ১২২ টাকা।

সভায় সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ট্যারিফ কমিশন থেকে খোলা চিনির দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। তার মানে কমিশনের চেয়ে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬ টাকা কমে সয়াবিন তেল ও পাম ওয়েল বিক্রি করা হচ্ছে।

ভারতে ৭৮ টাকা কেজি চিনি বিক্রি হয় কীভাবে, ছাত্রদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারত চিনির ৫৭ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করে, বাকিটা তারা নিজেরা উৎপাদন করে। ওরা প্রতি কেজি চিনিতে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ দেয় ৩ টাকা ৭২ পয়সা। আর আমদের দিতে হয় ৪০-৪২ টাকা। এ অবস্থায় আমাদের চিনির দাম বেড়ে যায়।

সিটি গ্রুপের এই প্রতিনিধি বলেন, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের লোকসান হয়েছে ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসার কারণে। এখন ভারত থেকে ৪০ শতাংশ চিনি চোরাকারবারের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটা বন্ধ করতে হবে।

অন্যান্য কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আমরা ডলার কিনতে পারি না। ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংকের দাম অনুসারে পাওয়া যায় না। সব ব্যাংকেই ডলারের দাম বেশি রাখে। এই খরচটা গ্যাপ থেকে যায়। এই জায়গা ঠিক করতে হবে। সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে হবে। চোরাকারবার বন্ধ করতে হবে। এগুলো করা না গেলে দেশে ব্যবসা করা কঠিন হবে। গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। ব্যাংকে এলসি খোলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যেখানে সরকার নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যাবে।