ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্তকরণে নিজে নিজেই ঘরে বসে ৪টি ধাপে পরীক্ষা করুন

‘ব্রেস্ট ক্যান্সার’ এখন এক আতংকের নাম। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্তকরণে ঘরে বসেই সেলফ এক্সামিনেশন করতে পারেন খুব সহজে। জানিয়ে রাখি, এটি কিন্তু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বা ম্যামোগ্রামের বিকল্প না। কিন্তু প্রাথমিক ধাপে আপনি নিজে ব্রেস্টের অস্বাভাবিকতাগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারবেন কিছু লক্ষণ দেখে। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।

কেন করবেন?
ব্রেস্ট ক্যান্সার এমন এক প্রাণঘাতি রোগ যাতে প্রতিবছর আমাদের দেশের হাজারো নারী আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও ব্রেস্ট ক্যান্সার নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষদেরও এই রোগ হতে পারে কিন্তু বেশ রেয়ার। পারিবারিক ইতিহাস অর্থাৎ মা-নানী ও রক্তের সম্পর্কের কারো যদি ব্রেস্ট ক্যান্সারের হিস্ট্রি থাকে, তাহলে আপনারও ব্রেস্ট ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এমন ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত এই পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রাথমিক ধাপে আইডেন্টিফাই করা গেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব।

কখন করবেন?
২০ বছর বয়স থেকেই প্রতি মাসে একবার নিজের ব্রেস্ট নিজে পরীক্ষা করা উচিত। প্রতি মাসে একবার, মাসিক শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করলে ভালো হয়। কারণ সে সময় ব্রেস্ট কিছুটা হালকা থাকে এবং ব্যথা কম হয়। এছাড়াও অস্বাভাবিকতা বা অস্বস্তি অনুভূত হলে যেকোনো সময়ই নিজে ঘরে বসে প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষা করা যায়। গবেষণা থেকে জানা যায়, ৪৫/৫০ বছরের পর নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

Self-Examine for Breast Cancer: 4 Steps to Early Detection at Home
Self-Examine for Breast Cancer: 4 Steps to Early Detection at Home

ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্তকরণে ঘরে বসে সেলফ এক্সামিনেশন

১ম ধাপ
পর্যাপ্ত আলোয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁধ সোজা করুন, জামা খুলে নিতে হবে এই পরীক্ষার জন্য। দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যাতে বুকের মাংসপেশি টানটান হয়। এবার এই বডি পার্টের দিকে তাকান এবং লক্ষ্য করুন উভয় ব্রেস্টের আকৃতিতে কোনো পার্থক্য চোখে পরছে কিনা। এরপর কোথাও কোনো গোটা, রক্তক্ষরণ, পুঁজ, স্কিনের কোনো পরিবর্তন (রঙ বদলে যাওয়া, ফোলা কিংবা কুঁচকে যাওয়া), টোল পড়া নিপল বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ছে কিনা।

২য় ধাপ
এবার আয়নার সামনে দুই হাত উচু করে এবং সোজা নিচের দিকে ছেড়ে দিয়ে ১ম ধাপে উল্লেখিত বিষয়গুলো পুনরায় লক্ষ্য করুন।

৩য় ধাপ
এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই লক্ষ্য করুন (আঙুলের সাহায্যে নিপল হালকা চাপ দিন) কোনো তরল জাতীয় (পানির মতো, হলদে অথবা রক্ত) কিছু বের হচ্ছে কিনা।

৪র্থ ধাপ
আপনি বেডে শুয়ে এই পরীক্ষাটি করতে পারেন। এই ধাপে আপনার ডান হাত দিয়ে বাম সাইডে হালকা চাপ দিন। এক্ষেত্রে হাতের মাঝের তিন আঙুল একসঙ্গে ব্যবহার করুন (হাতের তালু নয়)। সমগ্র এরিয়া ঘড়ির কাটার দিকে একবার, ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে একবার এবং উপর থেকে নিচে ও নিচে থেকে উপরে একবার করে অনুভব করুন। এভাবে ব্রেস্ট এরিয়া পরীক্ষা করুন। একইভাবে বাম হাত দিয়ে ডান সাইড পরীক্ষা করুন। এই পরীক্ষাটি চাইলে শাওয়ারের সময়ও করতে পারেন।

কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে?

চিকিৎসকের সাথে কনসাল্টেশন

ঘরে বসে নিজে পরীক্ষা করার সময় যদি নিম্ন লিখিত পরিবর্তনের কোনোটি লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

যদি এই এরিয়াতে কোনো চাকা, দলা বা পিন্ড জাতীয় কিছু অনুভূত হয় যা ব্রেস্টের অন্য অংশ থেকে আলাদা

আন্ডারআর্মের কাছে যদি শক্ত কোনো পিন্ড বা ফোলাভাব দেখতে পান

ব্রেস্টের আকার, আকৃতি বা ত্বকের টেক্সচারের পরিবর্তন লক্ষ্য করলে

ব্রেস্টে ফোলাভাব, লালচে ছোপ, ক্ষত দেখা দিলে

এই এরিয়াতে ক্রমাগত ব্যথা বা অস্বস্তি থাকলে

ব্রেস্টের কোথাও কোনো ডিম্পল বা কোনো অংশ ভেতরে ঢুকে গেলে

নিপল থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হলে

করণীয়
ম্যামোগ্রাফি হলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে সাধারণ স্ক্রিনিং টেস্ট। চিকিৎসকের পরামর্শে ম্যামোগ্রাফি, রেডিওলজি ও ইমেজিং পরীক্ষা (আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই) করা যেতে পারে। এসব পরীক্ষায় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এফএনএসি (FNAC) অথবা কোর বায়োপসি করে রোগ শনাক্ত করা হয়।

ম্যামোগ্রাফি
ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্তকরণে ঘরে বসে কীভাবে পরীক্ষা করা যায়, সেটা জানা হয়ে গেলো। ব্রেস্টে এই ধরনের পরিবর্তন ক্যান্সারজনিত সমস্যা নাও হতে পারে। টিউমার বা অন্য কোনো রোগও হতে পারে, তবে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন। ক্যান্সার প্রাথমিক স্টেজে নির্ণয় করতে পারলে ও চিকিৎসা চললে রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হওয়া ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসা সম্ভব৷

আগেই বলেছি যে ঘরে বসে নিজের করা এই পরীক্ষাগুলো ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বা ম্যামোগ্রামের বিকল্প না, তবে প্রাথমিক শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এটি একটি মূল্যবান হাতিয়ার হতে পারে। নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন।