বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ১৫/২০ বছর বয়সেই পাকা ধরে তাহলে মনের অবস্থা কেমন হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আড় চোখে তাকালেই দেখা যায় আশেপাশের মানুষের মুচকি হাসি নতুবা হাজারও প্রশ্নে ভরা চোখের দৃষ্টি। মেলানিন নামক এক উপাদান চুলের রঙ নির্ধারণ করে, এর উৎপন্নের পরিমাণ কমে গেলেই চুল সাদা হওয়া শুরু করে মানে চুল তার পিগমেনটেশন হারায়।
ফলে অল্প বয়সে চুল পাকা শুরু হয়। আর একবার পাকা চুল সমস্যা আপনার জীবনে প্রবেশ করে ফেল্লে এর পরিমাণ দিন দিন বাড়তেই থাকবে। কিন্তু হয়ে গেলে কিছু করার থাকে না তাই আগে থেকেই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধের ১০টি উপায়
১.স্ট্রেস থেকে দূরে থাকুন
স্ট্রেস চুলের অকাল-পক্কতার প্রধান কারণ। হাসি খুশিতে জীবনটা ভরিয়ে তুলুন। দিনে কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিন আর ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নিন। টেনশন কাটানোর জন্য অনেক সময় নিয়ে গোসল করুন।
২.ধূমপান পরিহার করুন
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, ধূমপান শরীরের প্রিম্যাচিউর এইজিং(premature ageing)-এর জন্য দায়ী। ধূমপান বন্ধ করলে সার্কুলেশন(circulation) পর্যাপ্ত গতিতে চলে আর চুলের অকাল-পক্কতাও রোধ হয়। তাহলে দেখলেন তো সিগারেট শরীরের ক্ষতি করে, পকেটের-ও ক্ষতি করে।
৩.শরীরের আদ্রতা বজায় রাখুন
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলের পরিমাণ কমিয়ে পানি পান করুন বেশি বেশি। মশলাদার আর ভাজাভুজি জাতীয় খাবার-ও এড়িয়ে চলুন, যেহেতু এই খাবারগুলো শরীরকে ডিহাইড্রেট(dehydrate) করে শুষ্ক করে তোলে। আদ্রতার অভাবে পুষ্টিকর উপাদান চুলের ফলিকলে পৌঁছাতে পারে না, ফলশ্রুতিতে পাকা চুলের আনাগোনা দেখা যায়।
৪.কপার সমৃদ্ধ খাবার খান
অনেক সময় শরীরে কপার-এর অভাব হলে চুল পেকে যেতে পারে, যেহেতু এটা মেলানিন উৎপন্নে সাহায্য করে। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় পালংশাক, মাংস, আনারস, ডালিম, বাদাম, গরুর কলিজা, মাশরুম-এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখুন। প্রতিদিন মাল্টি-ভিটামিন-ও খেতে পারেন, যেহেতু এর বেশির ভাগই কপার ধারণ করে।
৫.আয়োডিন যুক্ত খাবার খান
আয়োডিন হলো আরেকটি মিনারেল যেটি চুলের রঙ বজায় রাখে। কলা, গাজর, সামুদ্রিক মাছ এবং পালং শাকের মত আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
৬.অত্যাবশ্যকীয় উপাদান প্রোটিন
মেলানিন উৎপন্নের জন্য প্রোটিন-এর অবদান অনস্বীকার্য। তাই শুধু কার্বোহাইড্রেট নয় প্রোটিন-এর সাথেও সখ্যতা গড়ে তুলুন। যদি আপনি রুটি খান তবে তার সাথে একটি ডিম খেয়ে কার্বোহাইড্রেড আর প্রোটিনের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে নিন।
৭.পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম চনমনে, ফুরফুরে শরীরের জন্য ওষুধের মত কাজ করে। আমার কথাটা মেনেই দেখুন আপনার সব স্ট্রেস গায়েব হয়ে যাবে। আর আগেই বলেছি স্ট্রেস ফ্রি লাইফ মানেই পাকা চুলের উঁকি ঝুকিও গায়েব।
৮.বি গ্রুপের ভিটামিনের উপর গুরুত্ব দিন
ভিটামিন বি২, বি৬ এবং বি১২-এর অভাব চুলের অকাল-পক্বতার আরেকটি কারণ। বায়োটিন আর ফলিক এসিডের অভাবে চুল পাকা ধরে। ভিটামিন বি৬, বি১২ লাল রক্ত কনিকা তৈরির জন্য দরকার। আর এই রক্ত কণিকার মাধ্যমেই স্কাল্প-এ পুষ্টি আর অক্সিজেন পৌঁছায়। কলা, ডিম, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার, শাকসবজি, পাস্তা বি গ্রুপের ভিটামিন-এ ভরপুর।
৯.ইম্প্রুভ সার্কুলেশন
ব্লাড সার্কুলেশন(blood circulation) পাকা চুল রোধের জন্য খুবই জরুরী। যদি ভিটামিন এবং মিনারেল মাথার তালুতে না পৌঁছায় তবে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ভিটামিন খাওয়ার কোন উপকারিতা পাওয়া যাবে না। ঠিক মত সার্কুলেশন(circulation)-এর জন্য প্রত্যেকদিন ব্যায়াম করার চেয়ে ভালো কোন উপায় নেই। সেই সঙ্গে বাড়তি মেদ-ও ঝরে যাবে। আঙ্গুল দিয়ে প্রতিদিন মাথার তালুতেও ভালো ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে ব্লাড সার্কুলেশন(blood circulation)-এর জন্য। এতে করে চুলের গোড়া শক্তও হবে।
১০.সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন করুন
সেলেনিয়াম এক ধরণের মিনারেল যা মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারী, বিশেষ করে চুলের বৃদ্ধি ও চুলের অকাল-পক্কতা ঠেকানোর জন্য। ফ্রি রেডিক্যাল যা বুড়িয়ে যাওয়া (aging process) তরান্বিত করে। সেলেনিয়াম এই ফ্রি রেডিক্যাল-এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করে। স্যামন ফিশ, টুনা ফিশ, আখরোট, কিশমিশ সেলেনিয়ামের খুব ভালো উৎস।
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে কিছু ঘরোয়া উপায়
এত দিনতো জানতেন ঝিঙা তরকারি রেঁধে খেতে হয় আজ জেনে নিন ঝিঙা নারকেল তেলের সাথে ফুটিয়ে চুলে লাগালে আপনার পাকা চুল রোধ হবে।
প্রতিদিন রাতে আমলকীর রস, বাদামের তেল আর কয়েক ফোটা লেবুর রস চুলে মাস্যাজ করুন, অল্প বয়সে চুল পাকা থেকে রেহাই পাবেন।
আদা গ্রেট করে মধুর সাথে মিশিয়ে প্রত্যেক দিন ১ চা চামচ করে খান।
চায়ের ঘন লিকার চুলে লাগালে চুল তার রঙ হারায় না।
কারি পাতা নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন তারপর ঠাণ্ডা করে চুলে লাগান।
অল্প বয়সে চুল পাকা অনেক কারণ আছে। জেনেটিক্যাল প্রবলেম তার মধ্যে অন্যতম। বংশগত কারণে তাড়াতাড়ি চুল পাকলে সেক্ষেত্রে আসলে করার তেমন কিছু থাকে না। তাই আগে থেকেই চেষ্টা করুন উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো মেনে চলতে। আর যদি পেকে গিয়েই থাকে তাহলে হেয়ার কালার অথবা মেহেদি পাতা ছাড়া উপায় নেই। তবে আপনি যদি কালো ছাড়া অন্য কোন কালার করতে চান তবে আমি পরামর্শ দিব অবশ্যই নিজের গায়ের রঙের সাথে মানানসই করে করবেন। তাহলে আগের সাদা চুলের দুঃখ ভুলে আপনার মুখে হাসি ফুটবেই আর আপনি হয়ে উঠবেন আরও আত্মবিশ্বাসী।