এমন ঘটনা সবার সাথেই ঘটতে পারে যে, ব্যথা হচ্ছে কিন্তু হাতের কাছে ওষুধ নেই। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। যেমন, গলা ব্যথায় এক টুকরো চকলেট অথবা দাঁত ব্যথায় টি ব্যাগ ব্যবহার হতে পারে ব্যথা নিরাময়ের প্রাথমিক চিকিৎসা। এমনই কিছু উপায় আছে যা প্রাকৃতিক ব্যথার ওষুধ হিসাবে কাজ করে।
আপনার জন্য আমরা এমনই কিছু ব্যথানাশক নিয়ে হাজির হয়েছি যা ওষুধ ছাড়াই ব্যথা নিরাময়য় সক্ষম। আসুন দেখি কি কি থাকছে এই আয়োজনে।
১. গলা ব্যথা করলে এক টুকরো চকলেট খান
বিজ্ঞানীদের মতে প্রচলিত ঘরোয়া ব্যথানাশকের চেয়ে এক টুকরো চকলেট গলা ব্যথা সারিয়ে তুলতে অনেক বেশি কার্যকর। গবেষণায় তারা দেখেছেন চকলেটের বিশেষ উপাদান ‘কোকা’ কফ এবং গলা ব্যথার উপর দ্রুত কাজ করে।
২. মাইগ্রেনের ব্যথায় প্রচুর পানি পান করুন
পানিশূন্যতায় হালকা মাথাব্যথা থেকে শুরু করে মাইগ্রেনের ব্যথাও হতে পারে। দেহে পানির অভাব দেখা দিলে শরীরের কাজ সঠিক ভাবে সম্পাদনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ফ্লুয়িড এবং ইলেক্ট্রোলাইটের পরিমাণও কমে যায়। যাদের মাইগ্রেনের ব্যথা হয় তাদের প্রতি ২ ঘণ্টায় ১ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করা উচিৎ।
৩. প্রদাহজনিত ব্যথায় হলুদ খান
আপনার শরীরে যদি প্রদাহ হয় তাহলে হলুদের উপর ভরসা করতে পারেন। এতে কারকিউমিন নামক এক ধরণের উপাদান রয়েছে, যাকে বহুল প্রচলিত ব্যথার ওষুধ আইবুপ্রোফেনের সমতুল্য বলে বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা বাত ব্যথার রোগীদের কারকিউমিন ক্যাপস্যুল খেতে দেন।
৪. ঘাড়, পিঠ ও কোমর ব্যথায় স্ট্রেচিং
স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ শক্ত হয়ে যাওয়া মাংস পেশি নরম করার মাধ্যমে ব্যথা সারিয়ে তোলে এবং স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে সুবিধা করে দেয়। হাঁটু বুকে আনা, মেঝেতে শুয়ে হাঁটু ও কোমরের আড়মোড়া দেওয়া, গোখরা এবং বিড়াল যোগ আসন ইত্যাদি ব্যায়াম করতে পারেন।
৫. মাথা ব্যথা দূর করতে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন
এসেনশিয়াল অয়েলের সুঘ্রাণ মাথা ব্যথা এবং মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম। ব্যথা শুরু হলে কাপড়ে বা টিস্যুতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে নাকের নিয়ে শ্বাস নিন। গোসলের পানিতে দিয়ে গোসল অথবা কপালে মালিশ করতে পারেন। ল্যাভেন্ডার, পিপারমেন্ট, রোজমেরি, ক্যামোমিল ইত্যাদি এসেনশিয়াল অয়েল এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।
৬. দাঁত ব্যথা কমাতে পুদিনার চা পান করুন
পুদিনা পাতায় মেনথল থাকে বলে ব্যথা দূর করতে এটি খুব কার্যকর। এক চামচ শুকনো পুদিনার গুড়ো এক কাপ গরম পানিতে দিয়ে ২০ মিনিট ঢেকে রাখুন। ঠাণ্ডা হওয়ার পর এই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। ব্যথা কমে যাবে। আপনি চাইলে পুদিনা চায়ের টি ব্যাগও গরম থাকা অবস্থায় দাঁতের উপর বসিয়ে দিতে পারেন।
৭. হাড় ও জয়েন্টের ব্যথায় ইপসম লবণ ব্যবহার করুন
ম্যাগনেসিয়ামপূর্ণ এক বেদনানাশক লবণ ইপসম সল্ট। ইপসম ইংল্যান্ডের একটি স্থান যেখানে প্রাকৃতিক ঝর্ণা থেকে এ লবণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ড্রাগস্টোর, সুপারশপ ও খাবারের দোকানে ইপসম লবণ পাওয়া যায়। ইপসম লবণ চর্মরোগ ও আর্থ্রাইটিসসহ বডি রিল্যাক্সমেন্টে সাহায্য করে। ইপসম লবণ কয়েকশো বছর ধরে ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইপসম লবণ মিশ্রিত ঈষৎ গরম জলে গোসল নিয়ে ফিরে পান ব্যথামুক্ত ঝরঝরে শরীর।
৮. এন্ডোরফিনস নিঃসরণ এবং ব্যথা কমাতে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন
শারীরিক পরিশ্রম করলে মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিনস নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এন্ডোরফিনস হরমোন ব্যথানাশক হিসেবেও কাজ করে। এই হরমোন ক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে দেহে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টিকারী কর্টিসল নামের আরেক হরমোনের মাত্রা কমে যায়। তা ছাড়া হাঁটলে বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। আর এসব কারণেই বলা হয়, ব্যথার সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ হাঁটা।
৯. ঋতুস্রাবের ব্যথায় কলা খান
কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে যা মাংসপেশির খিঁচুনীজনিত ব্যথা সারিয়ে তোলে। তাই ঋতুস্রাবের ব্যথা শুরু হলে কলা খেতে পারেন, এতে ব্যথার পরিমাণ কমতে শুরু করবে।
১০. মাংসপেশির ব্যথায় তাপ লাগান
গরম তাপ মাংসপেশিকে নরম করে এবং ব্যথা ও অস্বস্তি কমিয়ে দেয়। ফলে পেশির ব্যথায় হট ওয়াটার ব্যাগ এবং প্লাস্টিকের বোতলে গরম পানি নিয়ে ব্যথার উপর লাগান। তবে কোনো আঘাত বা কাঁটা ঘায়ের উপর লাগাবেন না। আর পানি এত গরম করবেন না যে তাপের কারণে ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
ব্যথা কমাতে ওষুধ নাকি ঘরোয়া এসব চিকিৎসার উপর নির্ভর করেন আপনি? আপনারও যদি ব্যথা কমানোর কোনো কৌশল জানা থাকে তাহলে আমাদের জানাতে পারেন।