গর্ভকালীন পেটের ফাটা দাগ দূর করার সহজ ও কার্যকরী উপায়

সন্তান প্রতিটি মায়ের জন্যই সুখ বয়ে আনে। তাইতো হাজারো কষ্ট ভোগ করে একজন মা সন্তান জন্ম দেন। সন্তান জন্মের সময় প্রায় সব মায়ের একটি সমস্যা দেখা দেয়। আর তা হলো পেটে সাদা কিংবা কালো ফাটা দাগ হয়ে যাওয়া।

গর্ভকালীন এই পেট ফাটা দাগ অনেকের এমনি চলে যায়। অনেকের আবার সহজে যেতে চায় না। যা খুবই বিরক্তিকর, আর দেখতেও বাজে দেখায়। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলে খুব সহজে এই দাগ দূর করা সম্ভব।

রিলাক্সিন, ইস্ট্রোজেন ও করটিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে মিউকোপলিসেকারাইড জমা করে। এটি যোজক কলা থেকে পানি শোষণ করে নেয়। এর ফলে যখনই পেটে টান পড়ে, তখনই ওই স্থানে দাগের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা বেশি দেখা যায় কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে। চলুন জেনে নেয়া যাক এই বিরক্তিকর দাগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়-

অলিভ অয়েলের উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানেন। দাগ দূর করতে এটি বেশ কার্যকরী। তাই গর্ভকালীন অবস্থায় দুইবেলা অলিভ অয়েল পেটে ভালোভাবে লাগান। এতে দাগ পড়ার ভয় থাকবে না।

তাছাড়া এলোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন। এটিও বেশ ভালো কাজ করে।

পেট ফাটা দাগ দূর করতে ট্রেটনইন ক্রিম বা লোশনও ব্যবহার করতে পারেন।

ক্যাস্টর অয়েলও পেট ফাটা দাগ দূর করতে ভালো কাজ করে।

নানা ধরনের লেজার বা সার্জারি চিকিৎসা আছে এই দাগ দূর করার জন্য। তবে সেসবে আছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয়। নানা ধরনের প্রসাধনীও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। যার কোনটা আসল কোনটা নকল সেই দুশ্চিন্তা তো আছেই তার ওপর এসব রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই এই দাগ মুছে দেয়া সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি মুছে না গেলেও দাগ ত্বকের (skin) স্বাভাবিক রঙের সাথে মিশে যাবে। চলুন জেনে নেই মাতৃত্বজনিত দাগ (spot) দূর করার প্রাকৃতিক উপাদান কি কি এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।

ডিমের সাদা অংশ

ডিম কার না ঘরে থাকে! প্রতিদিনকার প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে আমরা সবাই ডিম খেতে পছন্দ করি। ডিমের সাদা অংশ মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার জন্য খুবই ভালো একটি উপাদান। ডিমের অ্যামাইনো এসিড ও প্রোটিন ত্বককে (skin) নতুন জীবন দান করতে সক্ষন। প্রতিদিন গোসলের আগে ডিমের সাদা অংশ কাঁটা চামচ দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে দাগের মাঝে মেকআপ ব্রাশ দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। পুরোপুরি শুকিয়ে এলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে পেট মুছে নিয়ে লাগাতে হবে অলিভ অয়েল যেন ত্বক (skin) মশ্চারাইজড থাকে। এ পদ্ধতি ২ সপ্তাহ অবলম্বণ করলে দাগ চলে যাবে অনেকাংশেই।

লেবু
পাতে লেবু না হলে খাওয়া হয় না এমন অনেক মানুষ আছেন তাই সবার ঘরেই লেবু একটি নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু। দেহের ভিটামিন সি’র চাহিদা পুরণ করার জন্য লেবুর তুলনা মেলাও ভার। লেবু যেহেতু অ্যাসিডিক তাই এর রস যেকোনো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। লেবু টুকরো করে কেটে নিয়ে পেটের দাগের (spot) অংশে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন লেবুর রস ভালো মতো ত্বকে (skin) লাগে। ৩ থেকে চার মিনিট ম্যাসাজ করার পর ১০ মিনিটের জন্য পেটে লেবুর রস লাগা অবস্থায় রাখতে হবে পেট। এরপর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। লেবুর রসের সাথে খানিকটা শশার রস লাগালেও উপকার পাওয়া যাবে। মাতৃত্বজনিত দাগ (spot) হালকা করার জন্য এটি খুবই ভালো একটি উপায়।

চিনি
মাতৃত্বজনিত দাগ (spot) দূর করার জন্য চিনির একটি মিক্সচার খুবই উপকারী। যা লাগবেঃ এক টেবিল চামচ চিনি, আধা চা চামচ বাদামের তেল, কয়েক ফোটা লেবুর রস। উপাদানগুলো এক সাথে মিশিয়ে দাগের জায়গাগুলোতে ম্যাসাজ করতে হবে কিছুক্ষণ। প্রতিদিন গোসলের আগে এটি করতে হবে। মাস খানেক এই মিক্সচারটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

আলুর রস
সব তরকারিতে যেমন আলু চলে এক্ষেত্রেও আলুর ব্যবহার আছে।আলু কত কাজেই না লাগে! মাতৃত্বজনিত দাগ (spot) হালকা করার জন্য আলুর ভিটামিন আর মিনারেল খুবই ভালো ওষুধ। বাজারে পাওয়া যায় এমন রাসায়নিক ক্রীমের চেয়ে আলুর রস খুব ভালো কাজে দেবে এ কাজে। একটি বড় সাইজের আলু ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে সেই পেস্টটি দাগের (spot) জায়গায় লাগাতে হবে। হাত দিয়ে মুছে পেস্টের ভেজা বাড়তি অংশ ফেলে দিতে হবে। রস শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানিতে ধুতে হবে।

অ্যালোভেরা
ইংরেজিতে অ্যালোভেরা বলা হলেও বাংলায় এর নাম ঘৃতকুমারী। নানা ঔষধি গুণের জন্য অনেকে এর শরবত করেও খান। মাতৃত্বজনিত দাগের জন্য অ্যালোভেরার জেল সরাসরিই লাগানো যায়। একটি অ্যালোভেরার পাতা নিয়ে চা চামচ দিয়ে এর জেল করে নিয়ে তা দাগের (spot) জায়গায় লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিলেই হবে। এটা কয়েক সপ্তাহ করলে দাগ অবশ্যই কমে আসবে।

ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল যেকোনো সুপার শপ বা কসমেটিকসের দোকানে পাওয়া যায়। দামও খুব বেশী না। ত্ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বা যেকোনো দাগ দূর করতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। পেটের দাগ (spot) দূর করার জন্য ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে পেট ম্যাসাজ করে একটি পাতলা কাপড় দিয়ে ত্বক ঢেকে দিতে হবে। এরপর একটি হট ওয়াটার ব্যাগ তার উপর রেখে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর গোসল করাই ভালো। এটা অন্তত এক মাস করলে মাতৃত্বজনিত দাগ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

অলিভ অয়েল
যুগ যুগ ধরে ত্বকের (skin) যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর কারন অলিভ অয়েলে আছে পরিমাণ মতো ভিটামিন আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টস। এই তেল ত্বককে ভিতর থেকে নরম করে তোলে। অলিভ অয়েল হালকা গরম করে দাগের (spot) জায়গায় নরম করে ম্যাসাজ করতে হবে। এই তেল ধুয়ে ফেলার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি ত্বকের (skin) সাথে যতক্ষণ মিশে থাকবে ততক্ষনই ত্বকের (skin) জন্য ভালো।

পরিশিষ্ট
এখানে যেসব উপায়ের কথা বলা হলো তা প্রসবের পর শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পর প্রয়োগযোগ্য। গর্ভবতী অবস্থায় অলিভ অয়েল ম্যাসাজ খুব ভালো কাজে দেবে ত্বকের (skin) জন্য। এখানকার পদ্ধতিগুলো শুধুমাত্র বাচ্চা হওয়ার পর প্রয়োগ করা যাবে। গর্ভাবস্থায় এসব পদ্ধতি গর্ভের সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। মাতৃত্বজনিত দাগ (spot) অধিকাংশ মায়েরই হয়। কারো কম কারো বেশী। মন খারাপ না করে প্রাকৃতিক এ উপাদানগুলো ব্যবহার করে দেখুন। নিজের যত্ন নিন। আপনি ভালো থাকলেই ভালো থাকবে আপনার শিশু।