ফল চাষে সফল আক্তার, কর্মসংস্থান ২৫ জনের

কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা পাওয়া যায়। সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন আক্তারুজ্জামান নামে এক সফল ফলচাষি। মাত্র ছয় বছরে পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা।

 

 

তার চাষ পদ্ধতি আর সফলতা দেখে এলাকার কৃষকদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। বর্তমানে তার ৫৫ বিঘা জমিতে মাল্টা, ছাতকি কমলা ও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।

 

 

জানা যায়, আক্তারুজ্জামান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাথানগাছি গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ভাই-বোনরা উচ্চশিক্ষিত। শুধু লেখাপড়া করা হয়নি আক্তারুজ্জামানের।

 

 

১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলেও সংসার বিবাগী হওয়ায় কোনো রকমে তৃতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর ভাইয়েরা জোর করে ঢাকায় নিয়ে একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করেন। সেখানেও ভালো না লাগায় পালিয়ে ভারতে গিয়ে পীরের দরবারে ওঠেন। পরে বিজিবির হাতে আটক হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

 

 

ফলচাষি আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এক সময় অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ২০১০ সালে যুব উন্নয়ন থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিই। উপজেলা যুব ও মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরিবার থেকে কিছু টাকা নিয়ে একটি কৃষি ফার্ম করি। প্রথমে ১৫ বিঘা জমিতে পেঁপে ও কলা দিয়ে শুরু করি। এর সঙ্গে ১২ বিঘা জমিতে কুল চাষ করি। চাষের শুরু থেকেই আশানুরূপ সফলতা আসতে থাকে।’

 

 

তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় পেয়ারার বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করি। সেই চারা ৫৫ বিঘা জমিতে রোপণ করি। এসব জমি অর্ধেকের বেশি বর্গা নেওয়া। একই বছর পেয়ারার সঙ্গে ২০ বিঘা জমিতে সমন্বিত পদ্ধতিতে মাল্টা এবং ১০ বিঘা জমিতে ছাতকি কমলার চারা রোপণ করা হয়। পরের বছর বাকি ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারার সাথে ড্রাগনের চারা রোপণ করি। চলতি বছর ওই জমি থেকে ২৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি।

 

 

এ ছাড়া তিনি ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। বাগান রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে বলে জানান এ ফলচাষি। তার বিশাল এরিয়ায় গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন এ বাগান দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তাসহ উদ্যোক্তারা বাগান পরিদর্শন করছেন। যেখানে নিয়মিত প্রায় ২৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

 

 

মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী জানান, ‘তার ফল চাষে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন; অন্যদিকে অনেক বেকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করি। বিশেষ করে ফল চাষের রোগবালাই দমনে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি অফিসের একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা প্রতিদিনই তার বাগান পরিদর্শন করেন।’

 

তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪