কাজিয়াতল। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার একটি গ্রাম। হিমেল হাওয়ায় দুলছে গাছের পাতা আর ফল। গাছে পাতা থেকে ফল বেশি। অস্ট্রেলিয়ান জাতের বল সুন্দরী কুল। রঙিন কুলকে স্থানীয়রা বলেন লাল সুন্দরী।
উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের মাঠে কৃষক মো. ইউনুস ভুঁইয়া ৬০ বিঘা জমিতে এই কুলের চাষ করেছেন। প্রতিদিন মাঠ থেকে ২০মণের বেশি কুল বিক্রি করেন। খুচরা ১০০টাকা কেজি ও পাইকারি ৮০ টাকা দরে।
মো. ইউনুস ভুঁইয়া জানান, তিনি ১৪ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত্বাবধান করেছেন। কয়েক বছর আগে দেশে আসেন। নিজের এবং অন্যের জমি লিজ নিয়ে ৬০ বিঘা জমিতে মাছের খামার করেন। এলাকাটা উঁচু হওয়ায় পানি কমে যায়। তেমন লাভও পাচ্ছিলেন না।
চিন্তা করলেন খামারের পাড়ে ও ভেতরের জমিতে লেবুর চারা লাগাবেন। টাঙ্গাইল থেকে সাত হাজার লেবুর চারা এনে লাগিয়েছেন। সাথে আর কি করা যায় সেই ভাবনায় ইউটিউবে দেখলেন বল সুন্দরী কুলের চাষ।
চারা আনলেন নাটোর থেকে। আট মাসে কুলের ফল আসা শুরু করে। ২০২১সালে অল্প কয়েকদিনে তিনি লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করেছেন।
প্রথমে তার কুল চাষ থেকে অনেকে বলেছেন টাকা গুলো পুকুরে ঢালছে। তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন ভালো ফলন দেখে অনেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। চলতি বছর আরো বেশি ফল পেয়েছেন।
তিনি জানান, তার ৬০ লাখ টাকার মতো পূঁজি লেগেছে। আশা করছেন চলতি বছর তার পূঁজি উঠে আসবে। প্রথম বছরে প্রতি গাছে ১০/১২ কেজি কুল পাওয়া যায়। ২য় বছরে প্রতি গাছে ১০০/১২০ কেজি কুল আসছে।
৩য় বছর পর্যন্ত ফলের সাইজ ঠিক থাকবে। পরে ছোট হতে থাকবে। এই গাছ থেকে ১০/১২বছর ফল আসবে। তবে তার পরিকল্পনা তিন বছর পর নতুন চারা লাগাবেন।
সাথে রয়েছে লেবু, মাল্টার বাগান। চাষ করেছেন ফুল কপি,বাঁধাকপি,বেগুন,টেমেটোসহ অন্যান্য সবজি। তার দাবি সুদ বিহীন ঋণ পেলে তার খামার আরো বড় করতে পারবেন। আরো ৫০ লাখ টাকার পুঁজি পেলে তিনি বছরে এক কোটি টাকা আয় করতে পারবেন।
কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ধানের মাঠের মাঝে একটি বড় পুকুর। পুকুরের শুকনো জমি জুড়ে কুল,লেবু ও মাল্টা বাগান। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় দুলছে লাল সোনালি রঙের বল সুন্দরী কুল।
১৮/২০ ইঞ্চি লম্বা গাছের কোন কোনটি কুলের ভারে নুইয়ে গেছে। কিছু ডাল ফলের ভারে ভেঙ্গে পড়ছে। শীতের মিষ্টি রোদ পড়ে রঙিন কুল চকচক করছে। কুলের রূপে মুগ্ধ চাষি মো. ইউনুস ভুঁইয়া। তিনি কুল গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করছেন,সাথে আছেন ১২জন শ্রমিক।
এদিকে কয়েকজন কুল তুলে গ্রাহককে মেপে দিচ্ছেন। জমির যে অংশ থেকে মাটি তুলে পুকুরের পাড় বাঁধা হয়েছে। সেখানে খালের মতো পানি জমেছে। সেটি চার রকমের কাজে দিচ্ছে। খালের পানি সেচ দেয়া ও খালে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে। খালে মাছ চাষ করা যাচ্ছে। এছাড়া জমির ফসল চুরি ও ক্ষতি ঠেকাবে খাল।
মো. ইউনুস ভুঁইয়ার প্রতিবেশী উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন,একজন ব্যতিক্রমী ও সাহসী কৃষক তিনি। সহজ শর্তে ঋণ পেলে মো. ইউনুস ভুঁইয়া আরো ভালো করতে পারবেন। মানুষ বিষমুক্ত নিরাপদ ফল ও সবজি পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈব সার ব্যবহার করে যেন ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারে সেজন্য তাকে প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা দিয়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় মো. ইউনুস ভুঁইয়ার কুল বাগান সবচেয়ে বড়। বেলে দোঁআশ মাটিতে এই কুলের ভালো চাষ হয়। তার কুলে স্বাদেও অনন্য।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন