আজকে আপনাদের জানাবো মাশরুম চাষ করে কিভাবে একজন প্রতিবন্ধি মানুষ ১৭ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম তার বাবূল আক্তার। বসতভিটা ছাড়া বাবা-মার তেমন কিছুই ছিল না। আর এই দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারটিতে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় বাবুল আক্তার।
কোনমতে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার করে হাইস্কুলে পা দেয়ার পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। জীবিকার প্রয়োজনে চায়ের দোকান, মোদির দোকান, তরকারি বিক্রি, ফুটপাতে চম বিক্রিসহ, কাঠমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন। কিন্তু কোথাও মেলেনি সচ্ছলতা।
তার সচ্ছলতার গল্পটা শুরু হয় ২০০৭ সালে। কৃষি অধিদপ্তর যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫০০ টাকা ও ১০০ টি বীজ নিয়ে বাড়িতে ছোট একটি কুঁড়েঘর করে শুরু করেন মাশরুম চাষ। প্রথম দিকে এই মাশরুম শহরের বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করে বেড়াতেন।
মাশরুম চাষ করে ১৭ কোটি টাকা আয়
তবে তার এতদিনের জীবন যুদ্ধের লড়াই বিফলে যায় নি। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার মাশরুম বিক্রি।
১৪ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন তিন একর জায়গার ওপর প্রায় ১৭ কোটি টাকা খরচ করে নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন ড্রিম মাশরুম সেন্টার নামে নিজস্ব প্রতিষ্টান।
দারিদ্র্যতার কারণে আমাদের লেখাপড়া খুব বেশি করার সুযোগ হয়নি। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সবসময় একটা হতাসা কাজ করত যে কি করে জীবিকা অর্জন করবে। কোনো ভালো কিছু করতে পারবে না ভারি কোনো কিছু উঠাতে পারবে না। গরিব ঘরে থেকেই তাকে স্বপ্ন দেখতে হয়েছে ভালো কিছু করা।
২০০৭ সালে একজন ডাক্তারের পরামর্শে তিনি জানতে পারেন যে মাশরুম চাষের মাধ্যমে অনেক নারী এবং প্রতিবন্ধি সাবলম্বি হচ্ছে । সেক্ষেত্রে তিনি যশোর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে তিন দিনব্যাপী মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ নিয়ে চোষা শুরু করেন এবং পরক্ষণেই জাতীয় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণকালীন সময় তাকে ১০০ টা বীজ দেয়া হয়। সেই বীজ নিয়ে ওনার যাত্রা শুরু হয়। আস্তে আস্তে তিনি বীজ তৈরি করেন । এবং একটা সময় তিনি ২০০৮ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণের সুযোগ পান সাভার জাতীয় মাশরুম ইনস্টিটিউটে।
বর্তমানে ১৭ কোটি টাকার প্রোজেক্টের তার এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী কাজ করে। এখন এই প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০,০০০ মাশরুম চাষি আমাদের সাথে সম্পৃক্ত।
সুন্দর পরিচর্যা আর নিবিড় পর্যবেক্ষণে উৎপাদন হচ্ছে মাশরুম বীজ। মাশরুম পাউডার ঔষধি গুণসম্পন্ন ঋষি মাশরুম । বাবুল আক্তারের পরিকল্পনা বিশ্বে বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম রপ্তানির।
শীতকালে মূলত আমরা ভিজিটেবল মাশরুম চাষ করে থাকেন এবং গরমকালে এর উৎপাদন ভালো হয় না। ফলে আমরা গ্যানোডার্মা বা লুচি এডামবা ঋষি মাশরুম বিশ্বের এক নম্বর ঔষধি মাশরুম । এবং বাজারে এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে । এটা চাষ করেন। প্রায় ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং বাইরের দেশের আরো বেশি প্রায় দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা এর ১ কেজি মাশরুমের মূল্য।
বাগেরহাট জেলা কর্মসংস্থান কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে 2018 সালে জাতীয় যুব পদক ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি সনদসহ দুটি সম্মাননা পদক পেয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ বাংলা ফিচার