সাধারন জাতের মুরগীর থেকে অধিক লাভজনক ব্রাহমা জাতের মুরগি

বিভিন্ন প্রজাতির মুরগীর মধ্যে একটি উন্নত প্রজাতি হোল এই ব্রাহমা জাতের মুরগি। পুষ্টিগুণে সাধারন মুরগীর থেকে বেশি, মাংসের উৎপাদন ও বেশি। তাই বর্তমানে এই জাতের মুরগীর খামার গড়তে অধিক আগ্রহী আমাদের খামারিরা। আজ এই জাতের মুরগী সম্পর্কে বিস্তার জানবো ইনশাল্লাহ।

ব্রাহমা মুরগি সাধারন মুরগি থেকে অনেকটা বড় প্রজাতির। সর্ব প্রথম আমেরিকা, চীনের সাংঘাই থেকে ব্রাহামা মুরগি তাদের দেশে নিয়ে আসে এবং ব্রাহামা মুরগির জাত নিয়ে কাজ শুরু করে এবং খুব শীঘ্রই সফলতা অর্জন করে। এর ফলে চীনের ব্রাহামা থেকেও আমেরিকার ব্রাহামা আকারে এবং ওজনে বড় হয়ে থাকে। ১৯৫০ সালে ব্রাহামা মুরগিকে আমেরিকার অন্যতম মাংসের যোগান দাতা হিসেবে গন্য করা হয়।

ব্রাহামা মুরগির আদি নিবাস নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে। আমেরিকাতে যখন ব্রাহামা মুরগি আনা হয় তখন তাকে সাংঘাই মুরগি বলা হত। সব থেকে চাঞ্চল্যকর ব্যাপার হল, ব্রাহামা মুরগিকে উন্নত করার জন্য বাংলাদেশের চট্রগ্রামের এক বিশেষ প্রজাতির মুরগিকে ব্যাবহার করা হয়।

এর ফলে ব্রাহামার মুরগির আকারে এক বিশাল পরিবর্তন আশে।১৮৫২ সালেআমেরিকার অন্যাতম রাজনীতিবিদ জর্জ বুরহাম ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়াকে ৯টি ব্রাহামা মুরগি উপহার পাঠান। পরবর্তিতে ইংল্যান্ড আমেরিকা থেকে আরও ব্রাহামা আমদানি করে।

ব্রাহমা মুরগি

১৮৬৫ সালে ব্রিটেন পোল্ট্রি শিল্প সাদা ও ধূসর ব্রাহামাকে গ্রেট ব্রিটেন পোল্ট্রি শিল্পে অন্তর্ভুক্ত করে।১৮৭৪ সালে সাদা ও ধুসর রঙের ব্রাহামা মুরগিকে সব থেকে ভাল মানের মুরগি হিসেবে আমেরিকান পোল্ট্রি আসেসিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৮৫০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ব্রাহামা মুরগিকে অন্যতম জনপ্রিয় মাংস হিসেবে খাওয়া হতো। ব্রাহামা বড় আকারের মুরগি, কিছু কিছু প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ব্রাহামা হয় ৮ কেজির মত হয় আর প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী মুরগি ৬ কেজি হয়ে থাকে। তবে সাধারনত এদের গড় ওজন হয় মোরগটির ৫.৫ কেজি এবং মুরগির ৪.৫ কেজি। ব্রাহামা মুরগির ডিম সাধারন মুরগির থেকে বড় হয় ও বাদামী রঙের হয়। ডিমের গড় ওজন হয় ৫৫-৬০ গ্রাম।

আমেরিকাতে সাধারনত ৩টি রঙের ব্রাহামার দেখা যায়। সাদা, ধূসর ও সোনালী। সাদা ব্রাহামার শরীরের বেশি ভাগ অংশ সাদা হয়। ঘাড় থেকে পিঠ পর্যন্ত কাল ছোপ ছোপ থাকে এবং লেজের অংশ কলো হয়। ধূসর রঙয়ের ব্রাহমা মুরগি পুরো শরীরটা ধূসর বা কিছুটা ছাই রঙয়ের হয় দেখতে। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত সাদা রঙয়ের হয়।

লেজের শেষ অংশ কালো রঙ্গের হয়। সোনালী রঙ্গের ব্রাহমার পুরো শরীরটা সোনালী রঙ্গের। ঘাড় থেকে গলা পর্যন্ত কাল ছোপ ছোপ আছে। এবং লেজের শেষ অংশ কালো হয়।
ব্রাহমা মুরগি আমাদের দেশীয় আবহাওয়াতে খুব সহজেই মানিয়ে যেতে পারবে। কারন ব্রাহমা মুরগি গরম বা ঠান্ডা যে কোন আবহাওয়াতে সাবলীল থাকে।

বাংলাদেশে আবহাওয়াতে এদের বানিজ্যিক ভাবে পালন সম্ভব। অনেকেই ইতি মধ্যে ব্রাহমা মুরগি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, তবে সেটা নিতান্ত্যই কম। পোলট্রি শিল্পের সাথে জড়িত ব্রিডার ও খামারিরা এই মুরগি পালনের প্রতি আগ্রহী হলে দেশে যেমন মাংসের চাহিদা মিটবে তেমনি লাভের মুখ দেখবে খামার পর্যায়ে থাকা মানুষ।

ব্রাহমা জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য

ব্রাহমা মুরগি আসলে দুই ডুয়াল পারপাস উদ্দেশ্যে পালন করা হয়ে থাকে ।তারা দেখতে খুব সুন্দর শক্ত এবং বড় আকারের পাখি ।যখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে তখন তাদের দীর্ঘ মাথা এবং দেহ দেখা যায। ঠিক যেন এক ইংলিশ V অক্ষরের মতো দেহ। মুরগির তুলনায় মোরগগুলি বেশ লম্বা হয়ে থাকে । এদের শক্তিশালী পা এবং পায়ে পশম আছে। ব্রাহমা জাতের মুরগির গায়ের পশম বা পালক খুব বেশি শক্তভাবে যুক্ত থাকে না। তাদের মটরশুঁটির মতো ঝুটি রয়েছে এবং সব ধরনের জলবায়ুর সাথেই নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে ।তবে এরা আসলে শীত সহনশীল জাত। ব্রাহমা (Brahma) বড় বাদামি রঙের ডিম দিয়ে থাকে এবং ডিম 55 থেকে 60 গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে । মোরগগুলি মুরগির তুলনায় বেশ বড় হয় ।এভারেসজে মোরগ সাড়ে পাঁচ কেজি এবং মুরগি সাড়ে 4 কেজি মত হয়ে থাকে(পূর্নবয়স্ক)।

আচরণ ও মেজাজ

ব্রাহমা জাতের মুরগি বেশ বড়, সুশৃংখল এবং হালকা শ্বব্দ করা একটি পাখি। এরা বেশ লম্বা সময় ধরে ডিম দেয় এবং তাদের ডিমের সাইজ বেশ বড়। ব্রাহমা মুরগি অন্যান্য জাতের মুরগি তুলনায় কম ডিম দেয়। মুরগি গুলো বেশ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দেখতে খুব সুন্দর হয়। ব্রাহমা মুরগির পালক গুলো অত্যন্ত সুন্দর।তারা শুকনো অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। কারণ, তাদের পায়ের পালকগুলি কাদা লেগে আটকে যেতে পারে এ কারণে তাদের পায়ের আঙ্গুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় থাকে। সাধারণত তারা ওড়াউড়ি করে না। যার ফলে এদেরকে মাত্র দু-তিন ফুট বেড়ার ভিতরেও স্বাভাবিক ভাবে পালন করা যেতে পারে। ব্রাহমা জাতের মুরগি অন্যান্য মুরগির তুলনায় বেশ ধীর স্থির।তারা মানুষের সাথে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এবং সহজে রাগান্বিত হয় না। এদেরকে পালন করতে বড় জায়গা দিতে হয়। এরা মোটেই উড়তে পারে না এবং অন্যান্য পশু পাখিদের সাথে আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।

সাধারনত 6-7 মাসের ভিতরে ডিম দেয়া শুরু করে এবং সারা শীতকাল জুড়েই ডিম দেয়। শীতকালে এদের গায়ের পশম খুব সুন্দর হয়ে ওঠে এবং তিব্র ঠান্ডা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। তারা অন্যান্য জাতের মুরগির উপর সহনশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ । খুব বেশি আক্রমনাত্মক স্বভাব এদের নেই। সুতরাং যে কোন প্রজাতির সাথেই এদের রাখা যায় ।ব্রাহমা মুরগির বেশ বড় মাংসপেশি রয়েছে। এরা খুব শান্ত এবং তারা খুব সামান্য শব্দ করে।

ভাল দিকঃ

দেখতে খুব সুন্দর ।
বেশ বড় হয়।
অনেক মাংস হয়।

শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজবশ্য।
শান্ত স্বভাবের , আক্রমনাত্মক নয়।
অন্যান্য মুরগির জন্যও ভালো আচরণ করে।

আটকে পালা উপযোগী।
বড় আকারের ডিম পাড়া।
উড়াউড়ি করেনা।

খারাপ দিকঃ

ভাল ডিম দেয়না।
বেশি খাদ্য লাগে।

দেরীতে ম্যাচুরিটি আসে।
ব্রাহমা মুরগি কি আপনার জন্য ভালো?

ব্রাহমা মুরগির জন্য আপনার জন্য ভাল, যদি আপনি……

আপনি কিছু সুন্দর পালকের, প্রদর্শনীযোগ্য মুরগি পালতে চান।
বেশি মাংস দেয়,এমন জাতের মুরগি পালতে চান।

একটি ভাল জাতের দ্বৈত-উদ্দেশ্য (dual purpose) মুরগী পালতে চান।
আপনি বড় জাতের কিছু মুরগি পালতে চান।

আপনি শান্তশিষ্ট এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এমন জাতের কিছু মুরগি পালতে চান।
আপনার বাড়ির আঙিনায় পোষা যায় এমন কিছু মুরগি পালতে চান।

আপনি যদি বড় বাদামি ডিম উৎপাদন করে এমন কিছু মুরগি পালতে চান।
শান্ত স্বভাবের ভালো আচরণের কিছু মুরগি যদি আপনি খুঁজে থাকেন।

যে কোন জলবায়ুতে সহিষ্ণু এমন কিছু জাতের মুরগি পালতে চান।
আপনি যদি সহজে পালন করা যায় এমন জাতের কিছু মুরগি পালতে চান।