যেসব লক্ষনে বুঝবেন আপনি থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন

বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটি মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় (Thyroid Problem) ভুগছেন। আর তাঁদের বেশির ভাগই নারী। কেননা নারীদের থাইরয়েড (Thyroid) হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। থাইরয়েড (Thyroid) হরমোনের ওঠানামা নারীর সার্বিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মাসিকের জটিলতা, বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত ও গর্ভকালীন নানা জটিলতার কারণ এই থাইরয়েড (Thyroid) সমস্যা। অনেক সময় সমস্যাগুলো আগে থেকে বোঝা যায় না, কেবল প্রজননকালীন জটিলতার সময়ই ধরা পড়ে।

নারীদের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডজিম বা থাইরয়েড (Thyroid) হরমোনের ঘাটতিজনিত সমস্যার হার অনেক বেশি। ফলে মুটিয়ে যাওয়া, অবসাদ ও ক্লান্তি, চুল পড়া, ত্বক খসখসে হয়ে পড়া, পা ও মুখ ফোলা, মাসিকের জটিলতা, বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভপাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, শীত শীত ভাব ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

গর্ভকালীন থাইরয়েড (Thyroid) হরমোনের সামান্য ঘাটতিও গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। মায়ের উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা ছাড়াও গর্ভস্থ শিশুর নানা সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, পরবর্তী সময়ে এই শিশু মেধা ও বুদ্ধিতে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ে। তাই গর্ভকালীন নারীদের থাইরয়েড (Thyroid) হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখা খুবই জরুরি।

আবার থাইরয়েড (Thyroid) হরমোন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলেও বিপত্তি। এতে অতিরিক্ত গরম লাগা, খুব ঘাম, হাত কাঁপা, বুক ধড়ফড়, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না করলে হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া থেকে হার্ট ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে। হরমোনের ঘাটতি বা বাড়তি মাত্রা ছাড়াও শুধু থাইরয়েড (Thyroid) গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে যাকে বলে গলগণ্ড। এমনকি থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসারও হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে থাইরয়েড সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচার চলছে। মে মাসকে থাইরয়েড সচেতনতা মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর ২৫ মে পালিত হয় থাইরয়েড (Thyroid) দিবস। প্রতিটি প্রজননক্ষম নারীর ওপরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে থাইরয়েড সমস্যা হয়েছে কি না, তা নিয়ে সচেতন হতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের থাইরয়েড (Thyroid) পরীক্ষা করা অনেক দেশে এখন বাধ্যতামূলক। সন্তান ধারণে অকারণ বিলম্ব বা বারবার গর্ভপাত হলে অবশ্যই এটি পরীক্ষা করা উচিত।

যাদের থাইরয়েড সমস্যা আছে বা ছিল, তারা সন্তান ধারণের আগে অবশ্যই আবার পরীক্ষা করে দেখে নেবেন। যদি সমস্যা থাকে, তবে গর্ভকালে প্রতি এক মাস-দেড় মাস অন্তর পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা বারবার ঠিক করে নিতে হবে। একটি সুস্থ, নীরোগ ও মেধাবী বুদ্ধিমান সন্তান জন্ম দিতে চাইলে মায়ের থাইরয়েড (Thyroid) সচেতনতা অপরিহার্য।

ডা. তানজিনা হোসেন, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।