রাতে ঘুমানোর সময় নগ্ন হয়ে শোয়া অনেক বেশি ভালো এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। শরীর ও মন- দুটোর জন্যই ভালো মানের পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। অন্যথায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি থাকে।
পর্যাপ্ত ও ভালো মানের ঘুম নিশ্চিতে নগ্ন হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হেলথ লাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ কারণে নগ্ন হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
* ঘুম দ্রুত আসে: ঘুম আনার ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রার বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা শরীরের ‘ঘড়ি’ হিসেবে কাজ করে। পোশাক অনেক সময়ই শরীরকে গরম করে দেয়, ফলে ঘুম আসতে চায় না। নগ্ন হয়ে ঘুমালে শরীরের তাপমাত্রাকে কমতে দেয় এবং দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনার শীতল থাকাটা শরীরকে বলে যে, এখন ঘুমানোর সময়।
* ঘুমের মান ভালো হয়: নগ্ন হয়ে ঘুমানোর বিষয়টি আপনার শরীরকে ঠান্ডা করে কেবল দ্রুত ঘুমাতেই সাহায্য করবে না, পাশাপাশি এটি আপনার সামগ্রিক ঘুমের মানও উন্নত করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেডরুমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ৬০ থেকে ৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৫ থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যে ঘরে ঘুমান সেই ঘরের তাপমাত্রা মানসম্মত ঘুম অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নগ্ন হয়ে ঘুমালে শরীরে শীতল আমেজ এনে দিয়ে গাঢ় ঘুম নিশ্চিতে সহায়তা করতে পারে।
* ত্বক সুস্থ রাখে: নগ্ন হয়ে ঘুমানোটা আপনার সামগ্রিক ঘুমের মান যেমন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, তেমনি ত্বকের উন্নতিও করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম ভালোভাবে না হলে ত্বকের ক্ষত থেকে নিরাময়ের ক্ষমতা ঠিকভাবে হয় না। ভালো মানের ঘুম আপনার ত্বককে পুনরুদ্ধার করতে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করতে পারে।
* চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস করে: নগ্ন হয়ে ঘুমানোর আরেকটি ভালো কারণ হতে পারে যে, এটি আপনার সামগ্রিক মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। ভালোভাবে ঘুম না হলে তা স্ট্রেস লেভের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দুর্বল ঘুম বিষণ্নতা এবং এমনকি আত্মহত্যার ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ইনসোমনিয়া (অনিদ্রা) রোগের কারণ হতে পারে, তাই ঘুমের মান উন্নত করা ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।
* ওজন বৃদ্ধি রোধ করে: অনিদ্রায় ভুগলে তা আপনার জীবনকে নানাভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। এক গবেষণায় ২১,০০০ মানুষের উপর তিন বছর ধরে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং অপর্যাপ্ত ঘুম এবং ওজন বৃদ্ধির মধ্যে একটি সম্ভাব্য যোগসূত্র পেয়েছেন গবেষকরা। যেসব ব্যক্তি প্রতি রাতে ৫ ঘণ্টার সমান বা তারও কম ঘুমিয়েছিলেন তাদের ওজন তুলনামূলকভাবে বেশি বাড়তে দেখা গেছে। নগ্ন হয়ে ঘুমালে শরীর ঠান্ডা থাকে, যা আপনার ক্যালোরি বার্ন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
* হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: রাতে যদি আপনার পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ২০১০ সালের একটি গবেষণা কম ঘুমের সময়কাল এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। নগ্ন হয়ে ঘুমানোর মাধ্যমে আপনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার এবং ঘুমিয়ে থাকার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
* যোনি স্বাস্থ্য ভালো রাখে: নগ্ন হয়ে ঘুমানো যোনি স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। টাইট-ফিটিং বা ঘামযুক্ত অন্তর্বাস যৌনাঙ্গে নানারকম সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। নগ্ন হয়ে ঘুমালে স্তন ও যোনি স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
* পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়: শুধুমাত্র নারীরাই নগ্ন ঘুম থেকে উপকৃত হতে পারে এমনটা না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর সময় টাইট-ফিটিং আন্ডারওয়্যার পরা এবং শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়ার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। তাই উর্বরতা বৃদ্ধিতে নগ্ন হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
* আত্মসম্মান বাড়ে: নগ্ন ঘুম আপনার শরীরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আপনার আত্মসম্মান বৃদ্ধির একটি দুর্দান্ত উপায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জামা কাপড় ছাড়া ঘুমানো একজন ব্যক্তিকে তার শরীরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। নিজের শরীর সম্পর্কে আরও ইতিবাচক বোধ করতে সাহায্য করে। যা স্ব-প্রেমকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি জয়।
* সম্পর্কের উন্নতি হয়: যৌনতা যদিও আপনার সম্পর্কের একটি বড় অংশ হতে পারে, আপনার সঙ্গীর সঙ্গে নগ্ন হয়ে ঘুমানো ঠিক ততটাই চমৎকার হতে পারে। আপনার সঙ্গীও নিশ্চয়ই এটাই চাইবেন। কারণ, এটা অনেক বেশি আরামদায়কও বটে।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন