তলপেটের বাড়তি মেদ ও স্ফীত স্ত’ন যেভাবে কমাবেন

ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ।

প্রশ্ন: আমার বয়স ১৯ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং ওজন ৬১ কেজি (মেয়ে)। ছোটবেলা থেকেই আমার তলপেটে মেদ আছে। সমবয়সীদের তুলনায় আগে থেকেই আমার স্তন বেশি স্ফীত (আমার ওজন ও উচ্চতা তাঁদের সমান)। এ কারণে সব সময় বিব্রত বোধ করি। প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করি ও ২০ মিনিট প্ল্যাঙ্ক, স্কোয়াটস, ফ্ল্যাটার কিকসজাতীয় ব্যায়াম করি। তারপরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কী করব? খাবারের ক্ষেত্রেই বা কী করব?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: পেটের মেদ কমাতে প্রথমেই দরকার ইতিবাচক মনোভাব, আপনাকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে অর্থাৎ আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী (এনার্জি) খেতে হবে এবং প্রতিদিনের বাড়তি ক্যালরি ব্যায়াম করে খরচ করতে হবে। তাহলেই পেটের মেদ ঝরানো সম্ভব।

মনে রাখবেন, শরীরের যেকোনো জায়গার বিশেষ করে পেটের ওজন বা ভুঁড়ি কমানোর জন্য কোনো ম্যাজিক নেই, এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত এবং নিজস্ব বিষয়। পৃথিবীর কেউই আপনার মেদ বিন্দুমাত্র কমাতে পারবে না, যতক্ষণ না আপনি আগ্রহী হবেন। পুষ্টিবিদের কাজ শুধু আপনাকে সঠিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া, তার বেশি কিছু নয়।

তারপরও কিছু সাধারণ বিষয় যা শরীর ও পেটের মেদ কমাতে আপনাকে সাহায্য করবে—

১. উচ্চমানের আমিষ ( চর্বি ছাড়া) খেতে হবে, যা আমাদের পিওয়াইওয়াই হরমোন রিলিজ করে খাওয়ার ইচ্ছা কমাতে এবং বিপাকক্রিয়ার কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

২. আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে যা ক্যালরি শোষণ কমিয়ে পেট ভরিয়ে রাখে।

৩. ওমেগা–তিনসমৃদ্ধ মাছ/ খাবার বেশি খেতে হবে।

৪. ফলের রস বা জুস না খেয়ে কম ক্যালরিযুক্ত গোটা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন, যাতে আঁশসহ পুষ্টি আসে।

৫. খাওয়ার পর প্রোবায়োটিক (টক দই) খেলে পাকস্থলী সুস্থ থাকে এবং পেটের মেদ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।

৬. বাদ দিতে হবে: মিষ্টিজাতীয় খাবার, রিফাইনড শর্করা, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড) খাবার, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত খাবার, ট্রান্স ফ্যাট ইত্যাদি।

৭. খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাভাবিক পানি পান করবেন, তবে তা খাওয়ার মধ্যে ও খাওয়ার পরপরই না খেয়ে কমপক্ষে ২০-২৫ মিনিট পর পান করতে হবে।

৮. রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে (রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কম ঘুমালে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়তে থাকে)।

৯. স্ট্রেস বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কমাতে হবে (কারণ, স্ট্রেস কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে আমাদের ক্ষুধা বাড়ায় যা পেটে মেদ জমার সম্ভাবনা বাড়ায়)। যাঁরা ওজন কমিয়েছেন, তাঁদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। কারণ, ওজন কমানোর থেকে ধরে রাখা আরও কঠিন কিন্তু জরুরি।

১০. প্রতিদিন ব্যায়াম, বিশেষ করে পেটের ব্যায়াম করলে ধীরে ধীরে আপনার পেটের মেদ ঝরিয়ে–কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

আর স্তনের সঙ্গে বেশি ওজনের একটা সম্পর্ক আছে। তবে স্ফীত স্তনের সমস্যা সমাধানে আপনাকে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

যে চার কারণে পেটের মেদ বাড়ে
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাদের শরীরের তুলনায় পেটের মেদ বেশি। যা দেখতেও বেশ বাজে দেখায়। পেটের বিভিন্ন অংশের চারপাশে এই মেদ জমার পেছনে যদিও আমাদের নিজেদেরই কিছু ভুল রয়েছে। কিন্তু বিপদ হচ্ছে পেটের এই বাড়তি মেদ থেকে সৃষ্টি হয় নানা রোগ। যা মোটেও কাম্য নয়।

অনেকেই মনে করেন অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারণে এই মেদ জমে। যদিও তা পুরোপুরি সত্যি নয়। আরো কিছু কারণে পেটের মেদ বাড়তে পারে।

যেমন –

দৈনন্দিন যদি ফাস্ট ফুড খাওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যের পক্ষে সেটা খুবই খারাপ।
কোনো কাজ বা অণ্য কিছু করার সময় একভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকলে মেদ বেড়ে যায়।
সাধারণত নেগেটিভ ইমোশন থাকলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা হয়। যা শরীরে পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
অনেকেই গরমের দিনে তৃষ্ণা পেলে সফট ড্রিঙ্কস পান করে। এতে অত্যাধিক ক্যালোরি রয়েছে যা শরীরে মেদ বাড়িয়ে দেয়।