সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকে মানুষ। আর এই ব্যস্ততার কারণে ক্লান্তি আসে। অন্যদিকে কর্মব্যস্ততার চাপে পড়ে সর্বক্ষণের ক্লান্তিকে অবজ্ঞা করাও নতুন কিছু নয়। এই ধারণাতা আসলেই সঠিক? ক্লান্তি কি শুধুই ব্যস্ততার কারণে আসে? নাকি এর পেছনে থাকতে পারে অন্য কোনো কারণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে পরিশ্রান্ত লাগা। অতিরিক্ত ক্লান্তিকে অধিকাংশ মানুষ অবহেলার চোখে দেখলেও, এই ক্লান্তির মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে বিপদের সঙ্কেত। সতর্কতা বাড়াতে চলুন জেনে নেয়া কী কী কারণে ক্লান্ত লাগতে পারে-
অনিদ্রা
শুধু দীর্ঘ ঘুমই নয়, নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম না হলেও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হতে পারে। আর পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অতিরিক্ত ক্লান্তির অন্যতম কারণ। আর অনিদ্রা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও মানসিক অবসাদের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
পুষ্টির অভাব
পরিপূর্ণ পুষ্টির জন্য প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন প্রয়োজন। শরীরে আয়রন, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ ও ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি-র মতো বিভিন্ন উপাদানের ঘাটতিও ডেকে আনে ক্লান্তি। পৌষ্টিক উপাদানের ঘাটতি ক্লান্তির অন্যতম মূল কারণ। আয়রনের অভাব ডেকে আনে রক্তাল্পতা। এই রোগেও দেখা দিতে পারে ক্লান্তি।
অবসাদ
অবসাদে ভোগা রোগীদের মধ্যে অনেক সময়েই কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয়। সুতরাং মানসিক চাপও ক্লান্তি ডেকে আনতে পারে। অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যকে দীর্ঘদিন উপেক্ষা করেন। কিন্তু এই সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে গেলে হতে পারে বিপদ।
মধুমেহ
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও অন্যতম বড় একটি লক্ষণ হলো নিয়মিত ক্লান্ত লাগা। শরীরে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হলেই দেখা দিতে পারে এই সমস্যা। মধুমেহ অনেক সময়েই কিডনির সমস্যা ডেকে আনে আর কিডনির সমস্যা ডেকে আনে ক্লান্তি।
ক্যান্সার
সবের শেষে বলতে হয় ক্যান্সারের কথা। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও প্রাথমিক উপসর্গ হলো অতিরিক্ত ক্লান্তি। বিশেষত রক্তের ক্যান্সার ও মস্তিষ্কে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে ক্লান্তি। মনে রাখবেন, সাধারণ কাজকর্মের ফলে যে ক্লান্ত ভাব আসে, তা কিছুটা যত্ন নিলেই কেটে যেতে পারে। কিন্তু দিনের পর দিন ক্লান্তি না কাটলে সেটি মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। দরকার অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
সারারাত ঘুমিয়েও সকালে ক্লান্ত লাগার কারণ ও করণীয়
সারারাত ঘুমানোর পর সকালে অবশ্যই শরীর, মন থাকবে ফুরফুরা ও তরতাজা। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশ ক্লান্ত লাগে। কোনো কাজ করতে আগ্রহবোধ করেন না। সবকিছুতেই অলসতা লাগে।
কেন এমন হয়? এমন প্রশ্ন সবার মনেই জাগে। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক এই বিষয়ে বিস্তারিত-
>> এর কারণ হলো পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব। প্রতিদিন রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন। এর চেয়ে কম ঘুম হলে সকালে ক্লান্তি, সারাদিন আলস্য আসলে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
>> শুধু ৮ ঘণ্টা ঘুমই নয়। ঘুমের ধরণও গুরুত্বপূর্ণ। হালকা ঘুম, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি অভ্যাস থাকলে কিন্তু আপনার বিশ্রামে ঘাটতি হচ্ছে। ৮ ঘণ্টা ঘুম হতে হবে গভীর এবং নিরবিচ্ছিন্ন।
কীভাবে নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমাবেন?
>> সন্ধ্যার পর কফি, চা, সিগারেট এড়িয়ে চলুন।
>> সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তবে ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে অতিরিক্ত পানি পান করবেন না। তাহলে মাঝরাতে টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘুম ভাঙবে না।
>> এর জন্য প্রথমেই আপনার শিডিউলে নজর দিন। যে করে হোক তাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম অবশ্যই রাখুন। সকালের মতো রাতেরও অ্যালার্ম রাখুন। সেই অ্যালার্ম বেজে গেলেই লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ুন। ৮ ঘণ্টা ঘুম হিসাব করবেন। তার অন্তত ৩০ মিনিট আগেই শুয়ে পড়বেন। এই সময়টুকু ঘুম আসতে লাগে।
>> একটা নিয়ম করে ফেলুন। রাতে শোওয়ার আগে অন্তত ২ ঘণ্টা স্মার্টফোনে হাত দেবেন না। ফোন রেখে দিন বিছানা থেকে দূরে কোনও স্থানে। টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি কোনো স্ক্রিনে তাকাবেন না।
>> ঘুমের অন্তত দেড় থেকে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। ব্যস্ত শিডিউলে তা সম্ভব না হলে একদম হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান।
>> খাওয়াদাওয়ার পর বিছানায় বসে গল্পের বই পড়তে পারেন। ধীরে ধীরে ঘুম এসে যাবে। অনেকে হেডফোনে গান শুনতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে সফট মিউজিকের প্লে লিস্ট বানিয়ে রাখুন। রাতে শুয়ে ফোন ঘাঁটবেন না।
>> অনেকের তাড়াতাড়ি শুয়েও ঘুম আসে না। এর নানা কারণ থাকতে পারে। তবে সুরাহা একটাই। রোজ এক্সারসাইজ করুন। এর ফলে আপনার স্ট্রেসও কমবে, রাতে ঘুমও তাড়াতাড়ি আসবে।
উপরের নিয়মগুলো ১ মাস মেনে দেখুন। এরপরে ক্লান্তি না কাটলে সেটা হেলাফেলা করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।