যখনই ওজন কমানোর কথা আসে, তখন আমরা সবসময় নারীদের কল্পনা করি যে তারা ক্লান্তিকর ব্যায়াম এবং ফল ও পারসলি খাচ্ছে। এটা সত্য যে, সাস্থ্যকর খাবার এবং শারীরিক ব্যায়াম ছাড়া কাঙ্ক্ষিত রেজাল্টে পৌঁছানো কঠিন। কিন্তু দেখা গেছে যে, ডায়েট এবং জিমে যাওয়া ছাড়াও অন্য উপায়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানো যায়।
আজকে আমরা ডায়েট এবং ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর কিছু কার্যকরি টিপস আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
১. লাল প্লেটে খাওয়া
এটা কিছুটা অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে সাদা প্লেট বা নীল রঙের প্লেটে খাওয়ার চেয়ে লাল প্লেটে খেলে কম খাওয়া হয়। বিষয়টা হল যে, এই রঙটি নিষেধাজ্ঞার সাথে যুক্ত করা হয় এবং থামানোর একটি সংকেত, তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষেরা খাওয়া কমিয়ে দিবে। এটা নিয়ে একটা গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে অংশগ্রহনকারীদের লাল, সাদা এবং নীল প্লেটে কুকি খেতে দিয়েছিল। যারা লাল প্লেটে খেয়েছিল তারা যারা অন্য রঙের প্লেটে খেয়েছে তাদের থেকে কম খেয়েছে।
২. সরু এবং লম্বা গ্লাসে পান করা
একটি হাস্যকর এবং বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণিত সত্যঃ আপনি যদি লম্বা গ্লাসে পানীয় পান করেন, তাহলে আপনি প্রায় ২৫-৩০% কম পান করবেন। আমেরিকান বিজ্ঞানী ব্রায়ান ওয়ানসিক এটিকে দৃষ্টি বিভ্রম হিসেবে ব্যাখ্যা করেন যা মস্তিষ্কের ধাঁধা। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এমনকি মদের দোকানের পরিষেবকেরা খাটো এবং প্রশস্ত গ্লাসে আরো বেশী পানীয় ঢেলে থাকে।
৩. চোখের সামনে অস্বাস্থ্যকর খাবার না রাখা
গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে, মানুষেরা যদি হাই-ক্যালোরিক খাবার তাদের চোখের সামনে রাখে তাহলে তাদের অধিকাংশই মোটা হয়, অন্যদিকে যারা অস্বাস্থ্যকর খাবার তাদের চোখের আড়ালে রাখে এবং পরিবর্তে ফল জাতীয় কিছু রাখে তাদের ওজন কম হয়। বিষয়টা হল এমন যে, দেখতে সুস্বাদু (কিন্তু অস্বাস্থ্যকর) খাবার মুখরোচক এবং ক্ষুধা বাড়ায় এবং আপনাকে আরো বেশী খেতে প্রলুব্ধ করে। তাই, বাড়িতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা নিশ্চিত করুন।
৪. বেশী পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া
আপনি যখন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন তখন আপনার ক্ষুধা অতি দ্রুত চলে যাবে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, দৈনিক ডায়েটে ১৫% প্রোটিন বৃদ্ধি করে অংশগ্রহণকারীদের ক্যালোরি ৪৪০ কমাতে সহায়তা করেছে। এই কারণে, তারা কোন খাবার সীমিত না করেই ১২ সপ্তাহের মধ্যে গড়ে ১০ পাউন্ড অতিরিক্ত ওজন কমাতে পেরেছে।
যেসব খাবারে সর্বাধিক প্রোটিন রয়েছেঃ মাংস (মুরগি এবং লাল মাংস), মাছ, ডিম, কটেজ চিজ, চিজ এবং মটরশুটি।
৫. হালকা ক্ষুধা লাগলে মিন্ট চুইংগাম চাবান
আপনার যখন হালকা ক্ষুধা লাগবে এবং অস্বাস্থ্যকর নাস্তা খাওয়ার রিস্ক নিতে না চাইলে, চিনিমুক্ত মিন্ট (পুদিনা) ফ্লেভারের বাবল-গাম চাবান। পুদিনার গন্ধ স্বাদ কুঁড়ির ফাংশন নিষ্প্রভ করে এবং তাৎক্ষণিক কোন কিছু খাওয়ার ইচ্ছাকে দূর করে।
৬. পানীয়ের মধ্যে বরফ যোগ করুন
আপনার পানীয়ের (কফি, চা, জুস এবং ককটেল) মধ্যে কিছু বরফ যোগ করুন এবং একটি স্ট্রো এর মাধ্যমে পান করুন। ঠান্ডা খাবার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাস করে।
৭. আরো বেশী করে ঘুমান
২০১৩ সালে প্রকাশিত নেচার কমিউনিকেশন ম্যাগাজিনের গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ৬ ঘণ্টারও কম সময় ঘুমায় তারা বেশি পরিমাণে উচ্চ-ক্যালোরি খাবার খায় এবং যথেষ্ট ঘুমানো লোকেদের চেয়ে বেশি ওজন লাভ করে। তাই, রাত্রে অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৮. একটু ছোট সাইজের পোশাক কিনুন
একটি পোশাক বা একটি নতুন জিন্স কিনুন যা আপনার থেকে কয়েক সাইজ ছোট এবং সেগুলো কক্ষের এওন জায়গায় রেখে দিন, যেখানে আপনি সেই পোশাকের টুকরা দেখতে পান। এইভাবে আপনার সামনে পড়লে আপনার সবসময় মনে হবে যে, এই পোশাকটা পরার জন্য ওজন কমাতে হবে।
৯. কারো সাথে একসঙ্গে ওজন কমান
আপনার বন্ধু বা যারা ওজন কমাতে চায় তাদের দলে যোগ দিন। এতে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি আরো ফলপ্রসূ হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা অন্য লোকেদের সাথে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করে তারা ২০% আরো বেশী তাদের টার্গেট অর্জন করতে পারে।
বোনাসঃ মেদ কমানোর জন্য আইস প্যাক ব্যবহার করা
ম্যাস্ট্রিক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ঠান্ডা তাপমাত্রা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ঠান্ডা সাদা চর্বিকে বাদামী চর্বিতে রূপান্তরিত করে যা শরীরের দ্বারা সহজেই হজম হয়।
– একটি পাতলা কাপড় দিয়ে আইস প্যাকটি মোড়ান এবং যেখানে চর্বি আছে সেই এলাকায় এটি রাখুন।
– প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য প্যাকেটটি রেখে দিন।
– এভাবে ১২ দিনের জন্য দিনে একবার করুন।
আপনার কাছে কি সহজ উপায়ে ওজন কমানোর আরো কোন টিপস রয়েছে? কমেন্টে আমাদের শেয়ার করে জানান।
পেটের মেদ কমাতে ট্রাই করুন ৭দিনের ঝটপট ডায়েট প্ল্যান:
মেদ ভুঁড়ি কি করি’ সমস্যায় অনেকেই ফেঁসে গিয়েছেন। আর সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবলম্বন করছেন বিভিন্ন পদ্ধতি। মেদ ভুঁড়ি নিয়ে যারা মহা বিপদে আছেন তারা খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারবেন এই সমস্যা থেকে। এমনকি মাত্র ৭ দিনেও বেশ কিছুটা কমানো সম্ভব পেটের মেদ।
যেসব খাবার শরীরের মেদ বাড়ায় যেমন অ্যালকোহল, চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে মাছ, মুরগী ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি শরীরকে মেদ বহুল করে তোলে এবং তলপেট, উরু, নিতম্বে মেদ জমে যায়। তাই খাবার গ্রহণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আসুন জেনে নেয়া যাক ওজন কমানোর ডায়েট প্ল্যান।
কিছু নিয়ম মেনে চলুন:
*ক্যাফেইন, চিনি, অ্যালকোহল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। এসব খাবার শরীরে সহজেই মেদ জমিয়ে দেয়।
*খাবার তালিকা থেকে নিজের প্রিয় খাবার গুলো বাদ না দিয়ে সপ্তাহে এক দিন খান। সপ্তাহে একদিন কেক কিংবা চকলেট খেলে পুরো সপ্তাহ ডায়েটের বিরক্তি ও একঘেয়েমি কেটে যাবে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে মেটাবলিজম।
*মেদ কমাতে মাছের তেল খান। মাছের তেল অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড সরবরাহ করে।
*নিয়মিত সকালের নাস্তা করুন। ঘুম থেকে ওঠার ১ ঘন্টার মধ্যেই সকালের নাস্তা সেরে ফেলুন। যদি সকালে নাস্তা করার একেবারেই সময় না পান, তাহলেও কিছু ফল ও বাদাম অথবা একটি ডিম সেদ্ধ খেয়ে নিন।
*রাত ৮ টার পড়ে ভারী খাবার খাবেন না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে ভারী খাবার খেয়ে নেয়া ভালো। রাতে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে হজমে সমস্যা হয় এবং মেদ বাড়ে।
ওজন কমাতে ৭ দিনের ডায়েট প্ল্যান
১ম দিন: কলা ছাড়া যে কোনো ফল যত ইচ্ছা খান। সব ধরণের খাবার বাদ দিয়ে প্রথম দিন শুধু ফল খেতে হবে।
২য় দিন: দ্বিতীয় দিন খাবেন শাক সবজি। আলু ছাড়া যে কোনো শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খান। তবে তেল দিয়ে রান্না না করে সালাদ অথবা সেদ্ধ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। তেল যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
৩য় দিন: তৃতীয় দিন কলা খাবেন না। কলা ছাড়া যে কোনো ফল ও শাক সবজি ইচ্ছে তত খেতে পারেন। তবে অন্য কোনো খাবার খাওয়া যাবেনা।
৪র্থ দিন: চতুর্থ দিন হলো কলা খাওয়ার দিন। এই দিন আপনি ৮টি মাঝারি আকারের কলা ও তিন গ্লাস(২০০মিলি) দুধ খাবেন। তবে অন্য কিছু খাওয়া যাবে না।
৫ম দিন: পঞ্চম দিন মাংস খেতে পারবেন। অল্প পরিমাণে মুরগীর মাংস খান এবং ৬টি টমেটো খান।
৬ষ্ঠ দিন: ষষ্ঠ দিন ইচ্ছে মতো মুরগীর মাংস খান এবং আলু বাদে অন্যান্য শাকসবজি খান।
৭ম দিন: ডায়েটের শেষ দিন অর্থাৎ সপ্তম দিন বাদামি চাল, চর্বি ছাড়া মাংস, ফলের রস এবং সব রকমের শাক-সবজি গ্রহন করুন।
কিছু সাবধানতা
মাসে একবারের বেশি এই ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা উচিত নয়।
অন্য কোনো অসুখ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ডায়েট অনুসরণ করবেন না।
ডায়েটের পাশাপাশি সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
ওজনের আধিক্যের ওপরে ভিত্তি করবে ওজন কমার বিষয়টি। যার ওজন অধিক, তার ক্ষেত্রে কমবেও অধিক। তবে কমপক্ষে ৩ পাউন্ড হতে ১০ পাউন্ড পর্যন্ত কমে থাকে। তথ্যসূত্র: প্রিয় লাইফ