অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে বর্তমানে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অপুষ্টিকর খাবার ও শরীরচর্চার অভাবই মূলত এই রোগের অন্যতম কারণ। এছাড়া যারা মদ্যপান করেন তাদের লিভারেও চর্বি জমতে পারে। লিভার শরীরের একটি ছোট অঙ্গ। তবে এই অঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ করে। খাবার হজম করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসেচক তৈরির মতো কাজ করে এই লিভার। লিভারে চর্বি জমতে শুরু করলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আর তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিছু ভুলের কারণে শরীরে বেড়ে যায় ফ্যাটের পরিমাণ। আর এই ফ্যাট বা চর্বি লিভারেও জমে।
ফ্যাটি লিভার থেকে আরেক বিপজ্জনক রোগ লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে। তাই এ বিষয় নিয়ে হেলাফেলা করা মোটেও উচিত নয়। ফ্যাটি লিভারকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। অ্যালকোহলিক ও নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কারণ হলো মদ্যপান। অন্যদিকে নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার হয় মূলত জীবনযাত্রা ও ডায়েটের অনিয়মে।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ কী কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম দিকে ফ্যাটি লিভারের সমস্যার তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে রোগ কিছুটা বেড়ে যেতেই শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে।
আর তখনই কিছু কিছু লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পায়, তবে অনেকেই সেসব লক্ষণ অবহেলা করেন। ফলে সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। জেনে নিন কী কী লক্ষণ দেখা দেয়-
>> পেট ভার হয়ে যাওয়া
>> হজমের সমস্যা
>> বমিবমি ভাব থাকতে পারে ইত্যাদি।
>> প্রথমদিকে তেমন পেটে ব্যথা থাকে না।
ফ্যাটি লিভার কেন হয়? এ বিষয়ে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ জানান, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের কারণেও অনেকেই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হন।
আর পশ্চিমা সমাজে লিভারে চর্বি জমার প্রধান কারণ হলো অ্যালকোহল। এ ছাড়াও বিভিন্ন ওষুধ সেবন অথবা অন্যান্য রোগের কারণেও ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। আবার কম ওজনের মানুষেরও হতে পারে, সেটিকে লিন ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
লিভারের চর্বি জমার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। বাচ্চাদের মধ্যেও এখন এই রোগের হার প্রায় ১৫ শতাংশ। এজন্য বাচ্চাদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যেসব বাচ্চার ওজন বেশি।
ফ্যাটি লিভার অনেকটাই নীরব ঘাতক। প্রথম দিকে কেউই এ সমস্যার কথা জানতে পারেন না। আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ধরা পড়ে। শুরুর দিকে লিভারের চারপাশে কিছু চর্বি জমা হয়, অন্য কোনো লক্ষণ থাকে না।
এরপর ধীরে ধীরে সেখানে প্রদাহ শুরু হয়। এ সময় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুরুতে শরীরে শক্তি কমে যায় ও দুর্বল অনুভব করে। ক্ষুধা কমে যায়, জন্ডিস হতে পারে এমনকি শরীরের বিভিন্ন অংশ, চোখ, মুখ, হাত হলুদ হয়ে যেতে পারে।
ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে হাত-পায়ে পানি জমতে পারে। অনেক সময় রক্ত বমিও হয়। এরপরও চিকিৎসা না করালে সেটি লিভার ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।’
এই রোগের চিকিৎসা কী? চিকিৎসকের মতে, এই রোগের চিকিৎসায় ওষুধের ব্যবহার খুবই কম। তবে সমস্যা খুব বেড়ে গেলে ওষুধ দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়। তবে এই রোগ প্রতিরোধে জীবনযাত্রা ও ডায়েটে পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে করণীয় কী? এ বিষয়ে ডা. ফারুক বলেন, ‘এক্ষেত্রে ডায়েটে পরিবর্তন করতে হবে। যেমন ভাত, রুটি বা অন্যান্য কার্ব খাওয়া কমাতে হবে। এছাড়া বাইরের তেল, ঝাল, মশলা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।’
‘এমনকি খাওয়া যাবে না কোল্ড ড্রিংকস কিংবা আইসক্রিম। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। এক্ষেত্রে ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তবেই ভালো থাকতে পারবেন।’