লাভজনক একটি ছাগলের জাত হোল পাহাড়ী ব্রাউন বেঙ্গল জাতের ছাগল

বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল এরই মধ্যে বিশ্বসেরা স্বীকৃতি পেয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে এ জাতের ছাগল পালন খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এবার একই প্রজাতির পাহাড়ি ভ্যারাইটিতে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) নাইক্ষ্যংছড়ির আঞ্চলিক কেন্দ্র।

 

 

গবেষকরা বলছেন, ব্রাউন বেঙ্গল নামের এ জাতের ছাগলের মাংস তুলনামূলক বেশি স্বাদযুক্ত, চামড়াও উন্নতমানের। বিএলআরআই সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বুনো গয়াল, গাউর, পাহাড়ি ভেড়া, ছাগল, জঙ্গল ফাউল মুরগি, হিলি চিকেনসহ নানা প্রজাতির বুনো পশু-পাখির এক সময় অবাধ বিচরণ ছিল।

 

 

কিন্তু গত চার দশকে ভূমি আগ্রাসন ও বাসস্থান বৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ বাস্তবতায় ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে বিএলআরআই পাহাড়ের অমূল্য প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, পাহাড়ি জনপদে প্রাণীগুলোর বিস্তার, বৃদ্ধি এবং গবেষণার দায়িত্ব দেয় সরকার।

 

 

বিএলআরআই প্রথমে বুনো গয়াল নিয়ে গবেষণা শুরু করে। পরে মায়া হরিণ, পাহাড়ি ভেড়া, হিলি চিকেন, জঙ্গল ফাউল এ প্রকল্পে যুক্ত হয়। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় ব্রাউন বেঙ্গল ছাগল নিয়ে গবেষণা। এরই মধ্যে অনেকাংশে সফলতা পেয়েছেন গবেষকরা।

 

 

সম্প্রতি উপজেলা সদর থেকে আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে বিছামারা এলাকায় বিএলআরআইয়ের নাইক্ষ্যংছড়ি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এখানে রয়েছে গয়ালের তিনটি শেড, ভেড়ার দুটি, মায়া হরিণের একটি, হিলি চিকেনের দুটি, জঙ্গল ফাউলের একটি ও ব্রাউন বেঙ্গল ছাগলের তিনটি শেড।

 

 

গবেষণাগারের অ্যানিমেল অ্যাটেনডেন্ট হারুন-অর-রশিদ জানান, বর্তমানে এখানে ১০টি গয়াল, ১৫৭টি ভেড়া, ১৮টি মায়া হরিণ, ১৯১টি হিলি চিকেন, ১৮টি জঙ্গল ফাউল ও গত মাসের শুরুতে গণনানুযায়ী ২৯৭টি ব্রাউন বেঙ্গল ছাগল রয়েছে। গত মঙ্গলবার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেএম সাদ্দাম হোসেন সেলফোনে জানান, ব্রাউন বেঙ্গলের সংখ্যা বেড়ে ৩০৬টিতে দাঁড়িয়েছে।

 

 

কেএম সাদ্দাম হোসেন জানান, ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ ব্রাউন বেঙ্গল ছাগল পালন করলেও লাভের আশায় অন্য জাতের সঙ্গে সংকরায়ন খুব একটা করে না। ফলে বিশ্বের হাতে গোনা যে চার-পাঁচটি ছাগলের জাত স্বতন্ত্র হিসেবে টিকে আছে, তার মধ্যে ব্রাউন বেঙ্গল অন্যতম।

 

 

এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো জানান, এ অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা ব্রাউন বেঙ্গলের ১২টি ছাগী ও ২টি পাঁঠা দিয়ে গবেষণা শুরু হয়। কয়েক ধাপে ছাগলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা মিলে ৩০৬টি রয়েছে।

 

 

ব্রাউন বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য ও পালন সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা ব্ল্যাক বেঙ্গলের মতোই বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। তাই খামারে দ্রুত সংখ্যা বাড়ে। এটি পালন করতে বড় চারণভূমি লাগে না। নিয়ম মেনে টিকা প্রয়োগ করা হলে রোগবালাই কম হয়।

 

 

জাত হিসেবে অবমুক্ত করতে আরো গবেষণার বাকি আছে উল্লেখ করে কেএম সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পরিবর্তন হতে এক বছরের মতো সময় লাগে। কোনো প্রাণীকে গ্রিড হিসেবে দাঁড় করাতে হলে সাত প্রজন্ম পর্যন্ত একই বৈশিষ্ট্য বহন করতে হয়। এ কাজটি শুধু এ গবেষণা কেন্দ্রেই হয়। এ পর্যন্ত চতুর্থ প্রজন্মের গবেষণার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে জুলাই থেকে পঞ্চম প্রজন্মের গবেষণার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অর্থ বরাদ্দ না আসায় শুরু করা যাচ্ছে না।

 

 

পাশাপাশি জনবল সংকটের কথাও জানান এ কর্মকর্তা। তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ে জনবলের ঘাটতি নেই। কিন্তু কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পিএইচডি করছেন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার তিনটি পদের মধ্যে দুটি পদ শূন্য। তবে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।

 

 

বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. নাথুরাম সরকার বলেন, ব্রাউন বেঙ্গল ব্ল্যাক বেঙ্গল ভ্যারাইটির দেশী ছাগল। পার্থক্য বলতে এগুলোর পা কিছুটা খাটো। ব্রাউন বেঙ্গল পার্বত্যাঞ্চলের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী।

 

তথ্যসূত্রঃ ফারমস এন্ড ফারমারস