বিদেশি জাতের মুরগি পালন করে বছরে আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বড় বাংলট গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিদেশি জাতের মুরগি পালন করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।

 

 

পরে দেশে বিদেশি জাতের মুরগী পালন করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এখন তার কাছ থেকে মুরগীর বাচ্চা সংগ্রহ করে অনেক যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছে।

 

 

জানা যায়, জাহাঙ্গীর হোসেন পারিবারিক আর্থিক অনটনে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে নামতে হয় কাজের সন্ধানে। ২০১১ সালে জাহাঙ্গীর শ্রমিক হিসেবে মালদ্বীপে যান।

 

 

সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তিতে আবার ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করলে তখন প্রতারণার শিকার হয়ে ভারতের চেন্নাই শহরে যান।

 

 

সেখানে প্রায় ৫ মাস দিনমজুর হিসেবে কার কাজ করেন। দেশেফেরার সময় ৩ জোড়া বিদেশি জাতের মুরগী সাথে করে নিয়ে আসেন। সেই ৩ জোড়া থেকেই আজ তার খামারে ২০০টির বেশি মুরগী রয়েছে।

 

 

খামারী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মালদ্বীপ যেয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে না পেরে ইউরোপ যাওয়ার চিন্তা করি। দালালের প্রতারণায় ভারতে যাই। তারপর সেখানে কাজ করার সময় বিভিন্ন জাতের মুরগী দেখে ভালো লাগে।

 

 

সিদ্ধান্ত নেই দেশে ফিরে এই জাতের মুরগী পালন করবো। ২০০৭ সালে যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে মুরগী পালনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। পরে আর তার পালনের সুযোগ হয় নি।

 

 

ভারত থেকে ফেরার সময় ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ব্রাহমা, সিল্কি ও মিলি জাতের মোট ৬টি মুরগি নিয়ে আসি। তারপর মুরগীগুলোকে শোবার ঘরের কোনে রেখে পালন করতে থাকি।

 

 

তিনি আরো বলেন, বিগত ৬ বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে আরও ৪০ প্রজাতির মুরগি সংগ্রহ করেছি। বর্তমানে আমার খামারে ২০০টি মুরগী রয়েছে। প্রথমে শখের বশে মুরগীর পালন করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকভাবে পালন করছি।

 

 

দিনে দিনে মুরগির সংখ্যা বাড়তে শুরু করছে। প্রতি জোড়া মুরগি ৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করি। এখন মুরগি, বাচ্চা, ডিম বিক্রি করে এখন প্রতি মাসে আমার আয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কয়েক মাস আগে দেড় লাখ টাকায় একটি মুরগি বিক্রি করেছি।

 

 

জাহাঙ্গীর আরো বলেন, এই অবস্থানে আসতে আমার ৫ বছর সময় লেগেছে। এসব জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় যেতে হয়েছে।

 

 

খামার গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। সব বয়সের মানুষ আমার কাছ থেকে মুরগি সংগ্রহ করেন, তবে যুবকদের আগ্রহ বেশি।

 

 

এখন জাহাঙ্গীরের সংগ্রহে রয়েছে সিল্কি, সেব্রাইট গোল্ডেন, সিলভার সেব্রাইট, বাফ সেব্রাইট, পলিস ক্যাপ, ক্রেস্টেড পলিস ক্যাপ, উইন্ডোট, মিলি, বেলজিয়াম বিয়ার্ড, ব্রাহামা, কলম্বিয়ান ব্রাহমা, ল্যাভেন্ডার ব্রাহমা, এরা কনা, বার্বি ডিনার, অনাকাদুরি, কসমো, সেরমা, ফনিক্স, ইয়োকোহামা, সুমাত্রা, সুলতান, আইয়ামচিমনি, লেকেল ভেন্ডার, ব্লু-কোচিন, মলটেট কোশ্চেন, ব্লু-ফিজেল, পেন্সিল লেগ, গেম বেন্থাম, জায়ান্ট কোচিন, ব্লু-বারলেচ, সিলভার লেস, জাপানিজ বেন্থাম, চাবু, প্যারট লিপ, আঁচিল, স্প্যানিশ হোয়াইট ফেস, ডংতাও, জঙ্গল ফাউ, আমেরিকান ব্রাহমা, রেড বারবন জাতের মুরগি।

 

 

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, প্রায় ১ বছর যাবত জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের মুরগী কিনে বিক্রি করতেছি।

 

 

৩ দিন বয়সি বাচ্চা কিনে তার ২-৩ মাস পালন করে তা জাত ভেদে বিক্রি করে ২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারছি। বাংলাদেশে এ ধরনের খামার খুব বেশি নেই, তাই বেশি লাভ করা যায়।

 

 

রাজবাড়ীর পাংশা সারকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজান শরীফ জানান, আমি অনলাইনে দেখে জাহাঙ্গিরের কাছ থেকে ৪০ হাজার দিয়ে ৭ জোড়া মুরগীর বাচ্চা কিনি। আমার ইচ্ছা জাহাঙ্গিরের মতো বড় খামারি হওয়া।

 

 

রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল হক সরদার বলেন, জাহাঙ্গীর খুব ব্যাতিক্রম ধরনের খামার করেছে। এই ধরনের খামার আমাদের দেশে খুব বেশি নেই। আমরা জাহাঙ্গীরকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা করছি। দেশে বেকার সমস্যা দূর করতে এর থেকে ভালো উদ্যোগ আর হয় না।

 

তথ্যসূত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার