বগুড়ায় চাষকৃত বাঁধাকপি রপ্তানী হচ্ছে ছয়টি দেশে।

বগুড়ায় চাষকৃত বাঁধাকপি রপ্তানী হচ্ছে ছয়টি দেশে। ভালোমানের বাঁধাকপি প্রক্রিয়াজাত করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও সৌদি আরবে যাচ্ছে। বাঁধাকপির পাশাপাশি বিদেশের বাজের চাহিদার সৃষ্টি করেছে বগুড়ার আলুও।

 

জানা যায়, বগুড়াকে বলা হয় সবজি ভাণ্ডার। শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন করে রেকর্ড গড়েছে বগুড়ার চাষিরা। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়া অঞ্চলের চাষিরা।

 

 

বগুড়াসহ উত্তরে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া গেছে। শীত আসবার আরো কিছু দিন দেরি থাকলেও বগুড়ার অঞ্চলের শীতকালীন সবজি চাষিদের দেরি নেই।

 

 

আগামজাতের শীত সবজি চাষ করে বাজারে তুলতে শুরু করেছেন চাষিরা। আগামজাতের এই শীতের সবজির দামও বেশি। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে দিগুণ আয়ের পথ সৃষ্টি করেছেন সচেতন সবজি চাষিরা।

 

 

বগুড়ার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগামজাতের শীম, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি যাচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কয়েক বছর ধরে আলুসহ অন্যান্য সবজি গেলেও ২ বছর ধরে বাঁধাকপির চাহিদা বেড়েছে।

 

 

গত বছরে শুধু বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৪ হাজার টন আলু ও ২ হাজার ৪’শ টন বাঁধাকপি রপ্তানী হয়েছে বিদেশে। বগুড়া সদর উপজেলা থেকে গত বছর ১২’শ টন আলুসহ বাঁধাকপি গেছে বিভিন্ন দেশে।

 

 

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাসওয়া এগ্রো কোম্পানির বগুড়ার প্রতিনিধি শিবগঞ্জের মেসার্স সাগর ট্রেডাসের সাগর হোসেন জানান, তালিকাভুক্ত চাষির কাছে থেকে তারা সবজি ক্রয় করে।

 

 

পরে প্রক্রিয়াজাত করে সেই সবজিগুলো কন্টিনারে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। সেখান থেকে জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে সবজি যাচ্ছে। কৃষকদের কাছে থেকে ন্যায্য মূল্যে এসব সবজি ক্রয় করায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

 

বগুড়া সদর উপজেলার আশোকালা এলাকার সবজি চাষি ফারুক হোসেন জানান, এখন মুলা তুলে বাজারে বিক্রিতে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। পুরোদমে শীত সবজির বাজার শুরু হলে মুলার কেজি ২/৩ টাকা করেও নিতে চাইবে না।

 

 

গত বছরও প্রথমে মুলার দাম ছিল আর পরের দিকে মুলার কেজি ৩ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।। ফলন ভালো হওয়ার কারণে কেউ কেউ দাম না পেয়ে গরুর খাবার হিসেবে ব্যববার করেছে।

 

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চল কার্যালয় সূত্রে জানা যায, চলতি বছরে বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় আগাম সবজি চাষে লক্ষমাত্র্য ছিল ৪৯ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমি।

 

 

সেখানে এ পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২৬ হাজার ২২৭ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে বগুড়ায় আগাম সবজি চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আদাদ হয়েছে ৫ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে।

 

 

বগুড়ায় এ পর্যন্ত আলুর চাষ হয়েছে ৪৬০ হেক্টর জমিতে। ধনিয়া চাষ হয়েছে ২২ হেক্টর, রসুন ৩৪ হেক্টর, পিয়াজ ৯১ হেক্টর, জমিতে। মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে।

 

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো. এনামুল হক জানান, বগুড়া থেকে বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, আলু বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হচ্ছে। ভবিষ্যতে জেলা কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিদেশে রপ্তানীযোগ্য নিরাপদ শষ্য উৎপাদন করতে পারে।

 

 

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাসলিমুজ্জামান জানান, শিবগঞ্জ থেকে বিদেশে সবজি রপ্তানী হচ্ছে এটা নিশ্চয় সুসংবাদ। এতে কৃষক উপকৃত হবে আরো ভালো সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হবে।

 

 

আরো বেশি পরিমাণ সবজি রপ্তানীর জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। বগুড়া জেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার মাটি সবচেয়ে বেশি উর্বর বলেই এখানেই সবজি চাষসহ অন্যান্য ফসল বেশি হয়ে থাকে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যলয়ের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।

 

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সুত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশ সহ ৩০টি দেশে ৭৮ হাজার টন আলু, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি ১ লাখ ৬ হাজার ২৬২ টন রপ্তানী হয়েছে। আগামী বছর রাশিয়ায় আলু রপ্তানী হবে।

 

 

বগুড়া জেলার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। সারাদেশে প্রতি বছর শুধু আলু উৎপাদন হয় ১ কোটি ১০ লাখ টন, এরমধ্যে মাত্র ৭৮ হাজার টন আলু রপ্তানী হয়।

 

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন