বানিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালী মুরগী পালন করতে গেলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হলো “ইনব্রিডিং”। এই সমস্যার কারনে মুরগীর ফার্টিলিটি হ্রাস পায়। ফলে ডিম উৎপাদনের হার কমে যায়। আর যে মুরগী ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করছেন সেটি যদি ডিমই না দেয় তবে পালন করতে যাবেন কেন? এক্ষেত্রে যারা বানিজ্যিক ভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালী মুরগী পালন করতে চান তাদের প্রতি কিছু পরামর্শ নিম্নরুপ –
১. প্রথমে এটাকে আপনার বিজনেস মনে করতে হবে। শখের বসে মুরগী পালন করতে গেলে লাভের মুখ দেখবেন না। আর এটা যেহেতু বিজনেস তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকে সোনালী মুরগীর প্রতি এক প্রকার উদাসীন থাকে। এই লোকগুলোই আসলে ক্ষতির মুখোমুখি হয়। মনে রাখবেন আপনি যদি লেয়ার পালন করতেন তবে যতটুকু গুরত্ব দিতেন সোনালীর ক্ষেত্রেও একই গুরত্ব দিতে হবে।
২. সোনালীর ক্ষেত্রে ব্রূডিং কালে “এস্পারজিলোসিস” হবার প্রবল সম্ভবনা থাকে। তাই ব্রূডিং কালে লিটারে তুঁতের পানি ছিটিয়ে ব্রূডিং করতে হবে।
৩. সোনালীর ক্ষেত্রে খামারীদের ভ্যাকসিন করতে এক প্রকার উদাসীন ভাব দেখা যায়। মনে রাখবেন ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালী মুরগী পালন করতে চাইলে ভ্যাকসিন করার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে লেয়ারের ভ্যাকসিনসূচী অনুযায়ী ভ্যাকসিন করবেন।
৪. অনেকে সোনালীর “ডিবেকিং” করান না। কিন্তু ডিম উৎপাদন করতে চাইলে অবশ্যই সোনালী মুরগীতে ৭-১০ দিনের মাঝে “বিক ট্রিমিং” ও ১০-১১ সপ্তাহের মাঝে “ডিবেকিং” করতে হবে।
৫. লেয়ারের মতই আলোকসূচি মেনে চলতে হবে।
৬. ৮-১০ সপ্তাহের মাঝে পুরুষ ও স্ত্রী সোনালী মুরগীগুলোকে পৃথক করতে হবে।
সাধারণত মুরগী গুলোর ঝুটি ও পালক দেখেই পুরুষ ও স্ত্রী সোনালী মুরগী চেনা যায়। যেহেতু আপনার উদ্দেশ্য ডিম উৎপাদন তাই পুরুষ গুলো রাখার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। পৃথক পুরুষ সোনালীগুলো চাইলে বিক্রয় করতে পারেন আবার চাইলে পালন করতে পারেন। তবে পালন করতে চাইলে অবশ্যই পৃথক শেডে পালন করতে হবে।
৭. ১৪-১৬ সপ্তাহে মুরগীগুলোকে খাঁচায় তুলতে হবে। আমি ফ্লোরে সোনালী পালন করার পক্ষপাতি না। কারন সোনালী এমনিতে কম উৎপাদনশীল তারপর ফ্লোরে পালন করলে প্রোডাকশন আরো হ্রাস পায়। তাছাড়া খাঁচায় রাখলে আপনি জানতে পারছেন কোন মুরগী ডিম দিচ্ছে আর কোনগুলো দিচ্ছে না। কিন্তু ফ্লোরে এটা জানা অসম্ভব।
৮. সোনালী মুরগী সাধারনত দৈনিক ৮০-১০০ গ্রাম খাবার গ্রহন করে। অতিরিক্ত বা কম খাবার দেয়া কোনটিই ঠিক না। এক্ষেত্রে মোট খাদ্যের ৬০% সকালে দিয়ে দিবেন। বাকি ৪০% খাবার ২০% -২০% করে দুপুরে ও বিকেলে দিয়ে দিবেন।
৯. মুরগী গুলোকে ৭-১০ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখুন। লক্ষ্য করুন কোন মুরগীগুলো ডিম দিচ্ছে আর কোন গুলো দিচ্ছে না। যে মুরগীগুলো থেকে ডিম পাচ্ছেন না সেগুলোকে “cull” বা বাতিল করে দিন। এতে একদিকে আপনার খাদ্য খরচ কমবে অন্যদিকে শতকরা উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
১০. মেডিকেশন পদ্ধতি লেয়ারের মতই মেনে চলুন। প্রতি ৪৫-৬০ দিন পর পর কৃমিনাশক মেডিসিন ব্যবহার করুন।
মুরগির ডিম উৎপাদন:-
লেয়ার মুরগির খামার স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো লাভজনকভাবে ডিম উৎপাদন করা। এ জন্য দরকার একটি মুরগির উৎপাদন সক্ষমতার পরিপূর্ণ বিকাশ বা প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা। নানাবিধ কারনে কোন একটি মুরগির ফ্লক থেকে যে পরিমান ডিম পাওয়ার কথা অনেক সময় তা পাওয়া যায় না।
আপনার খামারে যদি ১০০০ ডিম পাড়া মুরগি থাকে তাহলে ঐ মুরগি থেকে সবোর্চ্চ উৎপাদনকালীন সময়ে বা ২২ সপ্তাহ বা ২৫ সপ্তাহ বা ৫০ সপ্তাহ বয়সে যে পরিমান ডিম পাওয়ার কথা তা যদি না পাওয়া যায় তাহলে ধরে নিতে হবে কোথাও কোন সমস্যা রয়েছে।
একজন খামারীকে সফল হতে হলে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারনা থকেতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব কারনে কোন খামারে ডিম উৎপাদন কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাহলো-মুরগির বয়স,জাত,পুষ্টি,পীড়ন,দিনের দৈর্ঘ্য ইত্যাদি।
একটি মুরগি দিনে একটিই ডিম পাড়বে। ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি বা বাড়ানোর কৌশল মানে একটি মুরগি থেকে দিনে একটির বেশি ডিম পাওয়া নয়। ডিম পাড়া শুরু করলে সপ্তাহে এক বা দুদিন ডিম পাড়া বন্ধ থাকে। এ কারনে উৎপাদন কম হয়। যে বিষয়ে উপর গুরুত্ব দিতে হবে তাহলো মুরগি ও ডিমের অনুপাত কমিয়ে রাখা। অর্থাৎ যখন মুরগি থেকে কাঙ্খিত পরিমান ডিম পাওয়া যাবে না তখন যে বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রথমেই অনুসন্ধান করতে হবে তাহলো-
আলোঃ আমরা জানি মুরগির যৌনপরিপক্কতায় আসা এবং ডিম উৎপাদনের উপর আলোর প্রভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত যখন দিনের দৈর্ঘ্য বেশি থাকে তখন মুরগি ডিম বেশি পাড়ে। ডিমপাড়া মুরগির জন্য দৈনিক ১৪ ঘন্টার বেশি দিনের আলো দরকার। শীতকালে মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যাওয়ার একটি অন্যতম কারন হলো দিনের দৈর্ঘ্য কম হওয়া।
তবে আধুনিক বাণিজ্যিক মুরগি খামারে কৃত্রিম আলো প্রদানের মাধ্যমে মুরগির ডিমপাড়ার জন্য আলোক ঘন্টা তৈরি করা হয়। বাণিজ্যিক লেয়ার মুরগির খামারে একজন অভিজ্ঞ ও সচেতন খামারী মুরগির ঘরে কৃত্রিম আলোক ঘন্টা তৈরি করে ডিম উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পারেন।
আমাদের backyard পোল্ট্রির ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব সহজে চোখে পড়ে কারন কোন আলোক কর্মসূচী থাকে না বিধায় শীতের শুরু থেকে বিশেষ করে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ডিমপাড়া কমে যায় এবং এরপর থেকে আবার ডিমপাড়া শুরু করে। বাণিজ্যিক খামারে মুরগির ডিম উৎপাদনের হার কমে গেলে বা নিদিষ্ট সময়ের আগে বা পরে ডিম পাড়া শুরু করলে মুরগি পালনকারী/খামারীকে এই সাধারণ বিষয়টি সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।
মুরগিকে বলা হয় long-season breeders কারন যখন দিনের দৈর্ঘ্য বেশি থাকে তখন উৎপাদনে আসে। পুলেট যখন ডিমপাড়া শুরু করে তখন আস্তে আস্তে আলোক ঘন্টা বাড়াতে হবে। সারা বছর ধরে ডিম উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে আলোক প্রদান কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ ফারমস এন্ড ফারমারস