নিজের চাহিদা মিটিয়ে রোকনুজ্জামান এবার পেরিলা রপ্তানি করবেন দক্ষিণ কোরিয়ায়

দিন দিন বাড়ছেই ভোজ্যতেলের চাহিদা। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়ছে আমদানি। ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে ও বৈদেশিত মুদ্রা সাশ্রয়ে এবং বিদেশেও রপ্তানি করতে বাণিজ্যিকভাবে উচ্চগুণাগুণ সম্পন্ন ও উচ্চমূল্যের একটি ভোজ্য তেলজাতীয় ফসল পেরিলা।

 

 

আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যাপক চাহিদা। ফলন প্রায় সরিষার মতোই। খুব কম সময়ের ফসল পেরিলা চাষে অধিক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

এই তেল জাতীয় পেরিলা চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে- এমনটাই জানালেন পেরিলা চাষী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান। এবারই তিনি আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় পেরিলা রপ্তানি করার।

 

 

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় নাফানগর ইউনিয়নের বড় সুলতানপুরে ১২ একর জায়গায় লিজ নিয়ে পেরিলা চাষ শুরু করেছেন রোকনুজ্জামান। দেশের পেরিলা গবেষক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের কাছ থেকে ২০২১সালে পেরিলা বীজ সংগ্রহ করেন তিনি।

 

 

তার পরামর্শেই পেরিলা চাষ শুরু করেন। সরিষা থেকে ভাঙানোর মিলগুলোতেই এই পেরিলা থেকে তেল করা যায়। গত বছর সরকারি হিসেবে প্রতিমণ পেরিলা বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকায়।

 

 

দীর্ঘ সময় গবেষণার পর ২০২০ সালে দেশের ১৪টি জেলায় সফলভাবে পেরিলার পরীক্ষামূলক চাষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়।

 

 

চলতি বছরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেরিলা চাষ হচ্ছে। উচ্চগুণাগুণ সম্পন্ন এই তেল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি লিটার ২১০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়।

 

 

ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নতুন এই তেল জাতীয় ফসলটি নিবন্ধন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পেরিলা লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারের একটি ফসল। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া তথা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে চাষ হয়।

 

 

কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান বলেন, পেরিলা বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে। এটি নিয়ে গবেষণা করছেন আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। ১২ একর জমিতে ২০২১ সালে পেরিলা চাষ শুরু করি।

 

 

ভোজ্য তেল হিসেবে এর গুণাগুণ খুব উচ্চমানের। চেষ্টা করব অদূর ভবিষ্যতে সারা দেশে এর চাষ ছড়িয়ে দিতে। ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত আনুমানিক ব্যয় হয় প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা।

 

 

কিন্তু এ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো পেরিলা বিক্রয় করা সম্ভব। খুব কম সময়ের ফসল পেরিলা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

 

 

জানা যায়, পেরিলা তেলের শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

 

 

এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। চোখের জন্যও বেশ উপকারী। এর ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্যও উপকারী। বিশেষ করে হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

 

 

বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.আরিফ আফজাল বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পেরিলা তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তেল ফসল হিসেবে পেরিলা চাষ বর্তমান বাংলাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটি বর্ষা মৌসুমেও চাষ করা যায়।

 

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন