সকল প্রতিবন্ধকতাকে পরাজিত করে নিজের নিরন্তর পথচলার স্বপ্ন দেখছেন প্রতিবন্ধী ইকবাল হোসেন। পরনির্ভরশীল না হয়েও প্রতিবন্ধীরা সমাজের উন্নয়ন কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে তার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের দোশরা পলাশবাড়ি মহল্লার ইকবাল হোসেন।
প্রতিবন্ধী ইকবাল গরুর খামার গড়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। একটি গরু থেকে বর্তমানে তার ছোট বাছুর, গাভী, ফ্রিজিয়ানসহ ৯টি গরু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার দুধ পান এবং ডেইরী ফার্মে ও স্থানীয় বাজারে লিটার প্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
প্রতিবন্ধী ইকবাল জন্ম থেকে দুই পায়ের গোড়ালি বাঁকানো, স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারেন না। ভারি কোন কাজ করতে পারেন না। এরপরেও কারো মুখাপেখী না হয়ে প্রতিবন্ধকতাকে পরাজিত করে ইকবাল গরুর খামার গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা সবার কাছে এখন অনুকরণীয়।
প্রতিবন্ধী ইকবাল হাট-বাজার, পাড়া মহল্লায় গাভীর দুধ বিক্রির কারণে এলাকায় জনপ্রিয়। দুধ বিক্রি করে সংসার চালায় সে। দারিদ্রতাকে পরাজিত করে ২০০৬ সালে বিরামপুর উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে নিয়েছিলেন ১০ হাজার টাকা ঋণ। সেই ঋণের টাকায় কিনেছেন দেশী জাতের একটি গরু।
সেই গরু পালন করে বাড়তে থাকে গরুর সংখ্যা। একটি গরু থেকে পর্যায়ক্রমে ৪টি বাছুর হয়। বাছুরগুলো বড় হলে বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা পান। ২০১৭ সালে দু’টি এনজিও থেকে আরো ৮০হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পাবনার সুজানগর থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় লাল বাছুরসহ একটি ফ্রিজিয়ান গাভী কিনেন।
এরপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ইকবালের সংসারে অসচ্ছলতা ও দারিদ্রতা দূর করে নিজের চেষ্টা ও অধ্যাবসায়ে সৎ পরিশ্রমে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বাড়তে থাকে তাঁর গরুর সংখ্যা।
বর্তমানে ছোট বাছু’র, গাভীসহ ফ্রিজিয়ান ৯টি গরু তার। এছাড়াও তার বাড়িতে ছোটসহ বড় ১০টি ছাগল রয়েছে। এসব নিয়ে তাঁর বাড়ির ছোট্ট গোয়াল ঘরটা এখন হয়েছে বড় খামারে।
প্রতিবন্ধী ইকবাল হোসেন জানান, বড়ভাই ১৯৯৬ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেন। পরে বার্ধক্যজনিত কারণে ২০০০ সালে পিতার মৃত্যু হয়। বজ্রপাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যুতে দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখায় বন্ধ করে সংসারের হাল ধরতে হয়। আমার সংসারে ৫ জন সদস্য ২ ছেলে এবং ১ মেয়ে। ছোট ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি ও মেয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।
বড় ছেলে আমার সাথে গরু ছাগলের পরিচর্যা, বাজারে দুধ বিক্রি এবং সাংসারিক কাজে সহায়তায় করেন। একারণে পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় সে। বাবা মারা যাবার পর পারিবারিক ওসিয়তি ৫ বিঘা ফসলি জমি দিয়েই চলতো সংসার। দুই ভাতিজার পড়ালেখার খরচের দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকেও শিক্ষিত করেছি।
তিনি আরও জানান, পশুপালনে বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে দুইবার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। গরুর দুধ বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা পাই।
তা থেকে কাঁচা সবুজ ঘাস, খড়, খৈল, ভাত, ভূষি প্রভৃতি বাবদ দৈনিক প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে অবশিষ্ট টাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের ভরণ পোষণ চলে। ২০২০ সালে বিশেষ বরাদ্দের প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছি। সংসারে এখন অভাব নেই।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন