রসালো ফলের মধ্যে মাল্টা অন্যতম। ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ এ ফল। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাল্টার আবাদ। চাষিদের মধ্যে উৎসাহের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাগানের সংখ্যাও।
ঠাকুরগাঁওয়ে মাল্টা চাষে সফল চাষি নির্মল রায়। ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে সাড়ে ৩ বিঘা জমিজুড়ে তার মাল্টার বাগান। প্রায় প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। তার দাবি ৩ বছরেই ৩ গুণ ফলন বেড়েছে তার বাগানে।
নির্মল রায় বলেন, ২০১৯ সালে বগুড়া থেকে ১ হাজার মাল্টা চারা এনে রোপন করেন। খুব অল্প সময়েই চারা গাছ গুলো বড় হয়েছে আর ফলন দিয়েছে। চারা রোপনে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়েছি। প্রাতিদিন প্রায় ১০ জন শ্রমিক বাগানের গাছ পরিচর্যার কাছে নিয়োজিত আছে।
তিনি আরো বলেন, আমি সবুজ বারি-১ জাতের মাল্টা বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালের পর বাগানে মাল্টার উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুন। এর আগে ২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। এবছর ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাল্টা একটি লাভজনক ফসল। জেলায় দিন দিন এ চাষ বাড়ছে৷ কৃষকদের আরও দক্ষ করে তুলতে মাঠপর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷ যেকোনো প্রয়োজনে কৃষকরা আমাদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন।
শ্রমিক বিমল কুমার বলেন, আমরা শ্রমিকরা এখানে কয়েক বছর ধরে করছি। এবছর বাগানে ফলন ভালো এসেছে, তবে খুব সাবধানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। যেহেতু মাল্টা একটি লাভজনক ফল, সে ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের শ্রমিকেরও প্রয়োজন হবে।
বাগান পরিদর্শনে এসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহমিদ আহমেদ বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমারো গ্রামে একটি বাগান করার শখ আছে। আমি আপাতত মাল্টা চাষ সম্পর্কে জানতে এসেছি। মাল্টা চাষ করতে পারলে ব্যবসায়ীভাবে লাভবান হওয়া যাবে এবং ফলের চহিদাও পূরণ হবে। যেসব বেকার বন্ধু গ্রামে থাকেন তাদের উদ্যোক্তা হতে আহ্বান করব।
বাগান মালিক নির্মল রায় বলেন, মাল্টা চাষে সবারই ভাগ্য বদল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের সাথে কথা বলে সরকারের উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে অনেক উদ্যোগ নেয়া উচিত। এতে বেকারত্ব কমে আসবে, সৃষ্টি হবে আত্মকর্মসংস্থান। ফল সংরক্ষনের জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থা করলে তখন চাষিরা আর ফল চাষ থেকে বিমুখ হবে না।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, হরিপুর, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও সদর উপজেলার প্রায় ৬৫ হেক্টর এবং প্রায় তিন হেক্টর বসতবাড়ির জমিতে মাল্টার চাষ হচ্ছে। মার্চ-এপ্রিলে এসব গাছে ফুল আসে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ফল পাকে। ৫-৬ টি মাল্টা ওজনে ১ কেজি হয়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একটি পরিণত গাছে গড়ে ১৫০-৩০০টি পর্যন্ত ফল ধরে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় দিন দিন এ চাষ বাড়ছে। মাল্টা একটি লাভজনক ফল আর সারা বছর এর দাম ভালো থাকায় কৃষকরা মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। কৃষকদের আরও দক্ষ করে তুলতে কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার