সৌদি আরবের ‘আজওয়া’ খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন নাটোরের কৃষকরা। ‘আজওয়া’ ছাড়াও আরবের নানা জাতের খেজুর চাষ হচ্ছে নাটোরে। গাছ রোপণের পাঁচ বছরের মাথায় এবারই প্রথম থোকায় থোকায় ধরেছে খেজুর। মরুভূমির এ খেজুর নাটোরে আশা জাগালেও এটিকে আরো পর্যবেক্ষণে রাখার কথা বলেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
২০১৭ সালে ওমরাহ হজে গিয়ে গোলাম নবী আজওয়া, আম্বার, নিমিশি, সুগাই ও সুলতান জাতের ৯টি খেজুর গাছের চারা এনে নাটোর সদর উপজেলার মাঝদিঘা এলাকায় তার খামারে রোপণ করেন। পাশাপাশি ঢাকার খামারবাড়ি থেকে সৌদি আরবের বারহি, মেজদুল, খনিজ, এখলাস ও সিপিপি জাতের ১০০টি চারা কিনে রোপণ করেন।
রোপণ করা ১০৯টি চারাগাছ একটু বড় হতেই সেখান থেকে নতুন চারা করায় খামারে বর্তমানে ২০০টি খেজুর গাছ রয়েছে। কমবেশি সব গাছেই ফল এসেছে। তবে খামারবাড়ি থেকে সরবরাহ করা বারহি জাতের গাছে সবচেয়ে বেশি খেজুর ধরেছে। বারহি জাতের খেজুর একটু হলুদ হতেই রসালো ও মিষ্টি হয়ে ওঠে।
নাটোরের মাঝদিঘা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছয় বিঘা জমিতে শোভা পাচ্ছে সারি সারি মরু প্রান্তরের ২০০ খেজুর গাছ। আর সেই গাছগুলোতে ঝুলছে আজওয়া, বারহী, শিশির, সুককাইসহ অন্তত ১০ প্রজাতির খেজুর। সৌদি খেজুর চাষে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগে অনেকেই ধারণা করত, এ দেশের মাটিতে মরুর খেজুর গাছ টিকবে না। যেহেতু তার বাগানে ফলন এসেছে তাই তিনি মনে করেন চেষ্টা করলে এ দেশের মাটিতে সফলভাবে খেজুরের চাষ সম্ভব। বাংলাদেশের মাটিতে মরুভূমির এ ফল চাষে খুশি স্থানীয়রাও।
বাগান মালিক গোলাম নবী বলেন, ‘খেজুরগুলোর মান ও ফলন দেখে আমি আশাবাদী যে আমাদের ভবিষ্যৎ বেশ ভালো। এ ছাড়া এক থেকে দেড় মাস পরপর জৈব সার প্রয়োগ ও বাগানের পরিচর্যা করে পাঁচ বছরের মাথায় ফল এসেছে বলে জানান কর্মচারীরা।
এছাড়া সদর উপজেলার করোটা গ্রামের আরেক চাষী মোবারক হোসেনও বীজ থেকে আরবের খেজুর গাছের ৬০০টি চারা উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছেন। এক বছরের মাথায় তার বাগানেও এ ফলের দেখা মিলছে।
খেজুর চাষী মোবারক হোসেন জানান, তিনি সৌদি খেজুরের বীজ থেকে ৬০০টি চারা করেছিলেন। চারাগুলো এখন গাছে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব গাছের বয়স সাড়ে তিন বছর। তার বাগানের বেশকিছু গাছে এবার খেজুর ধরেছে। তার ধারণা, বাংলাদেশে সৌদি খেজুর চাষে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগে অনেকেই ধারণা করত, এ দেশের মাটিতে মরুর খেজুর গাছ টিকবে না। যেহেতু তার বাগানে ফলন এসেছে তাই তিনি মনে করেন চেষ্টা করলে এ দেশের মাটিতে সফলভাবে খেজুরের চাষ সম্ভব। বাংলাদেশের মাটিতে মরুভূমির এ ফল চাষে খুশি স্থানীয়রাও।
নাটোরে চলতি বছর প্রথম ফল এসেছে দাবি করে কৃষি বিভাগ জানায়, ফলের গুণাগুণ দেখে কৃষকদের সৌদি খেজুর চাষে পরামর্শ দেয়া হবে।
নাটোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে এ খেজুরগুলো ভালো কিংবা লাভজনক কি না, তারপর আমরা এটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করব।
চলতি বছর নাটোরের দুটি বাগানে সৌদি খেজুরের ফলন ভালো হয়েছে উলেখ করে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, এ চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন। গাছগুলোয় ঠিকমতো প্রতি বছরই ফলন আসে কিনা, এ জন্য আরো দুই-তিন বছর অপেক্ষার পর প্রান্তিক পর্যায়ে চাষাবাদের পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে খেজুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, এর পুরোটাই এখন আমদানিনির্ভর। পরিকল্পিত গবেষণার পর এ দেশের মাটিতে আরবের খেজুর চাষাবাদ করা গেলে এটিও হতে পারে অন্যতম লাভজনক ফসল।
কৃষি বিভাগ জানায়, নাটোর জেলায় ছোট-বড় ১ হাজার ৩০৫টি সৌদি খেজুরের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচশ খেজুর গাছে ফল এসেছে।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন