ভ্রাম্যমাণ ভাবে মৌচাষে বছরে আয় ৩ লাখ টাকা

রাস্তার অদূরে একটি আম বাগানের ভেতর সারি সারি বাক্স। ফুলে ফুলে উড়ছে অসংখ্য মৌমাছি। বাক্সগুলোর চারপাশেও মৌমাছির ওড়াউড়ি ও আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। ফুলে ফুলে পরাগায়ণ আর বাক্সগুলোর মধ্যে দিনভর ছোটাছুটি চলে মৌমাছিদের।

 

 

আর এর মধ্য দিয়ে আহরণ হচ্ছে মধু। শুধু যে মধু আহরিত হচ্ছে তা নয়, ফুলে ফুলে মৌমাছির ওড়ে বেড়ানোতে যে পরাগায়ণ হচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন হচ্ছে ফসলের। অর্থাৎ মৌমাছি চাষে দুই দিকে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

 

 

মধুচাষি মুহা. অয়েজ কুরুনী (৩৬) বিভিন্ন মৌসুমে মধু সংগ্রহ করেন। তিনি ২০১০ সাল থেকে মধু চাষ করে আসছেন। ভ্রাম্যমাণ মধুচাষি মুহা. অয়েজ কুরুনী সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার পারশোখালী গ্রামের মো. ইউনুছ আলী সর্দ্দারের ছেলে।

 

 

দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা করতে না পারা অয়েজ কুরুনী এখন বছরে আয় করেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মধু চাষের প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন তিনি। এরপর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমেই মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন।

 

 

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মধু চাষ করে অয়েজ কুরুনী তার নিজ এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ২০১০ সালে মাত্র ৪০টি মধুর বাক্স নিয়ে শুরু হয় অয়েজ কুরুনীর পথচলা। এখন তার খামারে দেড় শতাধিক মধুর বাক্স রয়েছে।

 

 

যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বছরে প্রায় ৬-৮ টন করে মধু উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি এসকেএফ ঔষধ কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মধু সরবারহ করেন তিনি। তার এই সফলতা দেখে ওই এলাকার বেকার যুবকরা মধু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

 

 

সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের একটি আমবাগানে গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ মৌমাছির খামারে গিয়ে কথা হয় অয়েজ কুরুনীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শখের বশেই ২০১০ সালে ১ লাখ টাকা দিয়ে মাত্র ৪০টি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। পরে মধুর বাণিজ্যিক চাষ করে আসছি।

 

 

বর্তমানে আমার মধু খামারে ৩ জন সহযোগী আছেন। এবছর ৮ টনের বেশি মধু পাওয়া যাবে। অয়েজ কুরুনী সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা হলেও তিনি শুধু গ্রামেই নয় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু আহরণ করেন।

 

 

তিনি জানান, তার ১০০টি দ্বিতল বাক্স এবং ৫০টি সিঙ্গেল বাক্স আছে। দ্বিতল বাক্সে ১২টি করে ফ্রেম এবং সিঙ্গেল বাক্সে ৭টি করে ফ্রেম থাকে। প্রতি ফ্রেমে দেড় থেকে দুই হাজার মৌমাছি থাকে। বাক্সগুলোর প্রত্যেক ফ্রেমে দেওয়া হয় একটি করে রানি মৌমাছি। একটি ফ্রেমে দুইটি রানি মৌমাছি থাকলে সকল মৌমাছি উড়ে যায়।

 

 

এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৬০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যায়। মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বাক্স। যার ওপরের অংশটা মোড়ানো রঙিন পলিথিন ও চট দিয়ে। পরে বাক্সগুলো মৌসুমী অনুযায়ী সরিষা, তিল, জিরা, কুল বা লিচুর ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। সরিষার ফুলে মধুর ফলন বেশি হয়। মানও ভালো হয়।

 

 

তিনি জানান, নভেম্বর মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত মৌবাক্স থেকে আয় করা সম্ভব হয়। জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তেমন কোনো ফুলের সমারোহ না থাকায় মৌমাছি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। এসময় তাদের কৃত্রিম খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় এ মৌসুমে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার চিনিসহ অন্যান্য খাবার ও ওষুধ লেগেছে। এভাবে ৫ মাস খাদ্য দিতে হয়।

 

 

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, মৌচাষের উপর বেকার যুবকদের আগ্রহ বেড়েছে। ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা সরিষার ফুল ছাড়াও কালিজিরা, লিচু ও বনের ফুল থেকে মধু আহরণে মনোযোগী হচ্ছেন।

 

 

এতে করে মৌচাষ ও মধু আহরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা এই মধু চাষ করছেন তারা আমাদের এলাকার স্থায়ী কেউ নন। তারা ভ্রাম্যমাণভাবে মধুর চাষ করছে।

 

 

মৌচাষি অয়েজ কুরুনীর মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন করে এ জেলাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাজারে খাঁটি মধুর চাহিদা ব্যাপক। তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে মধুর চাষ করেন তাহলে লাভবান হওয়া সম্ভব।

 

তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪