দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে অম্লমধুর লটকন

নরসিংদী লটকনের জন্য সারাদেশে বিখ্যাত। বাগানের পর বাগানজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে অম্লমধুর স্বাদযুক্ত ফল লটকন। এ ফল চাষে বেশ লাভবান হতে পারবেন কৃষকরা। কেননা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় লটকন। চাহিদা থাকে প্রচুর।

 

 

লটকন বাংলাদেশের অতি সুপরিচিত ফল। ফল গোলাকার ও পাকা অবস্থায় হলুদ। ফলের খোসা নরম ও পুরু। প্রতি ফলে তিনটি করে বীজ থাকে। উৎপাদনের পরিমাণ বেশি না হলেও দেশের সব এলাকাতেই এর চাষ হয়।

 

 

বাণিজ্যিক চাষ ছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও পতিত জমিতেও লটকন গাছ রয়েছে যা কৃষি বিভাগের হিসেবের অর্ন্তভুক্ত নয়। নরসিংদীর পাশাপাশি সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাজীপুর জেলায়ও লটকনের চাষ হচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক এর বেশ কিছু স্থানীয় নাম রয়েছে।

 

 

চট্টগ্রামে এর নাম হাড়ফাটা, সিলেটবাসী চেনে ডুবি নামে, ময়মনসিংহে বলে কানাইজু। আঙ্গুরের মতো ধরে বলে ইংরেজিতে এর নাম Burmese grap। বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea sapida।

 

 

ওষুধিগুণ সম্পন্ন সুস্বাদু লটকন ডায়াবেটিস, প্রেসার নিয়ন্ত্রণসহ রুচি বর্ধক ফল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। লটকন খাদ্যমানেও সমৃদ্ধ। ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও নিবারন হয়। শুকনো গুঁড়ো পাতা খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমায়।

 

 

লটকন গাছ সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও গাছ লাগানো যায়। লটকনের গাছ লাল মাটিতে ঝোপের মতো হয়ে থাকে। প্রতিবছর মাঘ-ফাল্গুনে লটকন গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে এ ফল পরিপক্কতা পায়।

 

 

এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। স্ত্রী গাছ লাগিয়ে দিলেই হয়। সময়ে সময়ে একটু পরিচর্যা করতে হয়। গোড়ার চারদিকে জৈব সার দিলে ফলন ভালো হবে। পিঁপড়া বা পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল বাঁচাতে ছত্রাকনাশক দিতে হয়।

 

 

শুনিকাশযুক্ত প্রায় সব ধরণের মাটিতেই লটকনের চাষ করা যায়। তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং উন্মুক্ত বা আংশিক ছায়া চাষ করা যায়।

 

 

সারি থেকে সারির দূরত্ব : ৬ মিটার; চারা থেকে চারার দূরত্ব : ৬ মিটার। এছাড়া গর্তের আকার হবে ৯০ সেমি। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।

 

 

প্রতিগর্তে সার দিতে হবে: গোবর / জৈব সার ১৫-২০ কেজি। টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমপি ২৫০ গ্রাম এবং গর্ত ভর্তি করার সময় মাটি শুকনা হলে গর্তে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

 

 

চারা রোপণ ও পরিচর্যা: সাধারণত বীজ দিয়ে লটকনের বংশ বিস্তার করা যায়। সমতল জমিতে বর্গাকার বা আয়তাকার পদ্ধতিতে লটকনের চার লাগানো যেতে পারে।

 

 

গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে নির্বাচিত চারা সোজাভাবে লাগিয়ে চারদিকে মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর পর পানি দিতে হবে। প্রতি ১-২ দিন অন্তর পানি দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে বাঁমের খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

 

সার প্রয়োগ : প্রতি বছর পূর্ণবয়স্ক গাছে গোবর / জৈব সার ১৫-২০ কেজি। ইউরিয়া ১ কেজি। টিএসপি ০.৫ কেজি । এমপি ০.৫ কেজি অথবা, মিশ্রসার প্রয়োগ করলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর / জৈব সার ১৫-২০ কেজিএনপিকেএস মিশ্র সার (১২-১৫-২০-৬) ১ কেজি।

 

 

উপরোক্ত সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূরে যতটুকু জায়গায় দুপুুর বেলা ছায়াপড়ে ততটুকু জায়গায় ছিটিয়ে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও কীটাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে। শীতের শেষে গাছে ফুল আসে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ফল পাকে।

 

তথ্যসূত্রঃ এগ্রি কেয়ার ২৪