একটি আধুনিক গোয়াল ঘরের নকশা কেমন হবে?

গরুর খামারে মুনাফার ৪টি শর্তের তার মধ্যে একটি হল গরুর জন্য আরামদায়ক গরুর খামার ঘর তৈরির ব্যবস্থা করা। গরুর খামার ঘর তৈরি করতে জানা অর্থ কিভাবে আপনি নিজের নির্দিষ্ট টাকা ও জায়গা দিয়ে গরুর জন্য সর্বোচ্চ আরামদায়ক সেডের ব্যবস্থা করবেন।

 

 

এর জন্য আপনাকে গরুর ঘরের বিভিন্ন অংশের মাপ এবং এই মাপগুলো কম-বেশি করলে কি সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে তা জানতে হবে। গরুর বাসস্থান হতে হবে প্রচুর আলো বাতাসযুক্ত স্থান। ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বীভাবে তৈরী করতে হবে।

 

 

গরুর ঘর স্থাপনের ধরণ ৩ ধরনের হতে পারে। যথাঃ উন্মুক্ত ঘর, কমিউনিটি ঘর ও আবদ্ধ এবং প্রচলিত ঘর। আবদ্ধ ঘরে গরু এক সারি বা বহু সারিতে পালন করা যায়। দুই সারি বিশিষ্ট ঘর অন্তর্মূখী বা বহির্মূখী পদ্ধতিতে গাভী পালন করা হয়।

 

 

গরুর ঘর তৈরির নিয়ম হলো, প্রথমে আমরা ঠিক করব খামারে দুই সারিতে নাকি এক সারিতে গরু পালব। দুই সারির নিয়ম বুঝলে এক সারি সহজেই বোঝা যাবে। দুই সারি করে হিসাব করলে ১০ টি গরুর জন্য প্রতি সারিতে ৫ টি করে গরু থাকে। আর মাঝে হাটার জন্য একটি রাস্তা। সুতরাং এক সারি গরু ও মাঝের রাস্তার জায়গার হিসাব করলেই ঘরের জায়গার হিসাব বেড়িয়ে যাবে ইংশাল্লাহ। আজ আমরা জানব আধুনিক গরুর ঘর তৈরি-গরুর বাসস্থান তৈরি-গোয়াল ঘর তৈরির নিয়ম সম্পর্কে কিছু তথ্য।

 

 

গরুর খামার ঘর তৈরি

গরুর খামার তৈরির নকশা হল,প্রথমে ঘরের চওড়া। একটি গরুর জন্য মাথা থেকে পেছন পর্যন্ত ৬ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত জায়গা দিতে হবে। আমরা ধরে নিলাম এটি ৭ ফুট (জায়গা বেশি থাকলে ৮ ফুট করা ভাল)। গরুর সামনে খাবার পাত্রের জন্য ২.৫ ফুট জায়গা আর পেছনে ড্রেনের জন্য 0.৫ ফুট জায়গা রাখা হল। সুতরাং এক সারি গরুর জন্য টোটাল ৭ + ২.৫ + 0.৫ = ১০ ফুট জায়গা দরকার। এবং দুই সারির জন্যে চওরায় ২০ ফুট।

 

 

গরুর ঘর তৈরির নকশা হলো, মাঝের রাস্তা মিনিমাম ৪ থেকে ১০ ফুট রাখতে হয়। আমরা এখানে ৪ ফুট ধরলাম। সুতরাং ঘরের চওড়া টোটাল ২০ + ৪ = ২৪ ফুট। একটি গরুর জন্য তার সামনে ৪ ফুট( জায়গা বেশি থাকলে সাড়ে ৪ ফুট) জায়গা দিতে হবে, অর্থাৎ গরু থেকে গরুর দুরত্ব হবে ৪ ফুট। তাহলে ৫ টি গরুর জন্য ২০ ফুট। সাথে গেটের জন্য ৪ ফুট লাগবে। সুতরাং মোট লম্বা ২৪ ফুট, গেট মাঝ রাস্তা দিয়ে হলে ২০ ফুট। আমাদের দেশের শেডের উচ্চতা নরমালি ১০/১৩ বা ১২ / ১৫ ফিট বা ১২ / ১৪ ইত্যাদি হয়ে থাকে। শেড যত উচু হবে তত ভালো। আধুনিক বড় খামারগুলোতে ৪০-৫০ ফিট শেড উচু করতে হয়।

 

 

হেড টু হেড / টেল টু টেল

হেড টু হেডঅর্থ হল গরু গুলো ভেতরে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে গোবর বাইরে পড়বে।
টেল টু টেল অর্থ গরুগুলো পরস্পরের বিপরীতে দাঁড়াবে, গোবর ভেতরে পড়বে।

 

 

গরুর ঘর তৈরি নিয়ম

* গরুর ঘরে খাদ্য সরবরাহের জন্য ৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তা, খাদ্য পাত্র ও পানির পাত্রের জন্য ২ ফুট এবং নালার জন্য ১ ফুট জায়গা রাখতে হবে।

* গোয়াল ঘরের বর্জ নিষ্কাষনের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেন রাখতে হবে।

* ঘরের মেঝে পাকা হলে মসৃণ প্লাস্টার না করে খসখসে রাখতে হবে যাতে গরু পিছলিয়ে পড়ে না যায়। মেঝে নালার দিকে হালকা ঢালু হবে, কিন্তু তা সর্বোচ্চ ১.৫ ইঞ্চি হতে পারে।

* ঘরের দেয়াল নীচের দিকে সর্বোচ্চ ১.৫ ফুট হতে হবে যাতে শুয়ে থাকা অবস্থায়ও পশুর শরীরের উপর দিয়ে বাহিরের বাতাস প্রবাহিত হয় এবং বাকী অংশ ১বর্গ ইঞ্চি ফাঁকা ফাঁকা রেখে জিআই তার দিয়ে বেষ্টনী দিতে হবে। ফলে গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারবে। তাতে গাভীর উৎপাদন বাড়বে এবং রোগ ব্যাধী কম হবে।

* গোয়াল ঘর প্রতিদিনই এক বা একাধিক বার ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গোবর, চনা ও খাদ্যের বর্জ্য পরিষ্কার করে তা নির্ধারিত পিট/গর্তে ফেলতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি খামারে বায়োগ্যাস প্লান্ট থাকে এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট এর পিটে বর্জ্য সরাসরি স্থানান্তর করা যায়।

* খামারে প্রতিদিন এন্টিসেপটিক স্প্রে করতে হবে । এতে রোগ সংক্রমণ কমবে, মশা-মাছির উপদ্রব কমবে। সপ্তাহে অন্তত একবার ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে গরুর সেড ভালভাবে পরিষ্কার করত হবে।

 

 

গরুর বাসস্থান
গরুর বাসস্থানের উদ্দেশ্য কি?

* বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থা থেকে রক্ষা করা

* বিভিন্ন বন্য প্রাণী এবং চোর ও দুষ্কৃতিকারীদের উপদ্রব থেকে রক্ষা করা

* আরামদায়ক পরিবেশে বাসের সুযোগ প্রদান

* স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ

* সহজে পরিচর্যা করার সুবিধা

* সহজে খাদ্য প্রদানের সুবিধা

* শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে

* খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।

* খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে

* পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে;

* সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

 

গরুর ঘরের সুবিধা
দুটো সিস্টেমেরই সুবিধা – অসুবিধা আছে। নিচে তুলে ধরা হল-

 

 

হেড টু হেডের সুবিধাঃ

১। খাবার দিতে সুবিধাঃ হেড টু হেডের ক্ষেত্রে গরুগুলো মুখোমুখি দাড়াবার কারনে দ্রুত ও ভালোভাবে খাবার দেওয়া যায়।

২। গ্যাসের সমস্যা কমঃ গোবর – প্রসাব বাইরের দিকে পড়ার কারনে ভেতরে গ্যাসের সমস্যা কম হয়।

৩। গরুর গুতোর বিপদ নেইঃ গরু গুলো খাবার পাত্রের অপর পাশে থাকার কারনে গুতো খাবার বিপদ কম।

৪। ছেড়ে গরু পালনের জন্য সুবিধাঃ গরুর পেছনে খালি মাঠ বা জায়গা থাকে। ফলে এক্ষেত্রে হেড টু হেড সিস্টেম একমাত্র উপায়।

 

 

টেল টু টেলের সুবিধাঃ

পর্যাপ্ত আলো বাতাসঃ গরুর মুখ বাহিরের দিকে থাকার কারনে পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়।
দ্রুত গোবর-মূত্র পরিস্কার করা যায়ঃ দুই সারির গোবর এক দিকে পরার কারনে সহজে ও দ্রুত পরিস্কার করা যায়।

 

 

দুধ দোয়ানোতে সুবিধাঃ ভেতরের দিকে থাকার কারনে দুই সারি গাভি থেকে সহজে দুধ নেওয়া যায়।
শ্বাসজনিত রোগ সহ অন্যান্য রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা কমঃ প্রায় সব রোগ মুখের শ্বাস, লালা, নাকের মিউকাস ইত্যাদি দিয়ে ছড়ায়। গরু গুলো একে অপরের বিপরীত দিকে থাকার কারনে এটির সম্ভাবনা কম।

 

 

একটি ড্রেনই যথেস্টঃ পাশে একটু বেশি জায়গা দিয়ে মাঝে একটি ড্রেন দিয়েই সমস্ত ময়লা দূর করা যায়।
গোসলে সুবিধাঃ দ্রুত ও সহজে গোসল দেওয়া যায়।

 

 

এবার আলোচনা করা যাক কোনটি ভালো। দেখা যাচ্ছে টেল টু টেলের সুবিধা অনেক বেশি। কিন্তু হেড টু হেডের সুবিধাগুলো কি আসলেই সুবিধা কিনা, কিংবা সেগুলোর গুরুত্ব কতটুকু সেটা একটু দেখা যাক।

 

 

প্রথমত, খাবার দেবার সুবিধার কথা যদি ভাবা হয় তাহলে অন্য দিকে গোবর পরিস্কার, গোসল, দুধ দোয়ানো সহ অনেক কাজে অসুবিধা বেশি। কাজেই এ পয়েন্টটি টিকছে না।

 

 

দ্বিতীয়ত, গোবরের গ্যাসের কথা ভাবতে গিয়ে গরু যদি আলো বাতাস কম পায় তাহলে সেটা তেমন কাজে দিবে না।

 

 

এদিকে গাভির ক্ষেত্রে গুতোর তেমন সম্ভাবনা নেই। ফ্যাটেনিং এর ক্ষেত্রে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ন। তবে টেল টু টেলে যদি খাবার বাইরে থেকে দেওয়া যায় তাহলে এ সমস্যাটা থাকছে না। তবে ছেড়ে গরু পালার ক্ষেত্রে হেড টু হেডের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে এখন অনেক আধুনিক খামার গড়ে উঠছে যেগুলোতে গরু ছেড়ে পালার সিস্টেম থাকে। এসব ক্ষেত্রে হেড টু হেড সবচেয়ে ভালো।

 

 

অন্যথায় টেল টু টেল সিস্টেম হেড টু হেডের চেয়ে অনেক গুনে ভালো। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যে শেড বানাবার সময় বেশিরভাগ খামারি নিজের সুবিধার কথা ভাবে, গরুর সুবিধা না (অবশ্য বর্তমানে অনেক শিক্ষিত খামারির সংখ্যা বাড়ছে) । হেড টু হেড হলে সে সহজেই খাবার পানি দিতে পারবে। অথচ খামারে লাভ করার সূত্রের ৪ নাম্বার শর্ত ছিল গরুকে আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়া।

 

 

তবে অনেক খামারির পক্ষে আসলে হেড টু হেড ছাড়া উপায় থাকে না। আলাদা ঘর না থাকার কারনে চোরের উপদ্রপের ভয়ে বাহিরের দেয়াল উচা বা টিন দিয়ে ঘেরাও করে ফেলতে হয়। ফলে গরুকে হেড টূ হেড রাখতে হয়। আবার জায়গার স্বল্পতার কারনে অনেকের বাহিরে গিয়ে খাবার দেবার উপায় থাকে না।

 

 

কিন্তু একটু বুদ্ধি করে টিনের মাঝে জানালার মত করে ফাকা করে রাখলে বাহির থেকে খাবার দেওয়া যায়। আবার রাতে বন্ধ করে রাখা যায়। কিন্তু ওই যে বললাম, বেশিরভাগ খামারি এই কস্ট টুকু করতে চায় না।

 

 

গরুর ঘর নির্মাণ
একসারি বিশিষ্ট গো-শালা:

অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই গো-শালা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআইপাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়, পার্টিশনের পাইপ লম্বায় ৯০ সে.মি. এবং উচ্চতায় ৪৫ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একটি গরুর দাঁড়াবার স্থান ১৬৫ সে.মি., পাশের জায়গা ১০৫ সে.মি., খাবার পাত্র ৭৫ সে.মি. এবং নালা ৩০ সে.মি. হওয়া প্রয়োজন, একই মাপে পশুর সংখ্যা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণ করে গো-শালা তৈরি করা হয়, গো-শালা হবে একচালা বিশিষ্ট ঘর, ঘরের ছাদ প্রায় ৩০০ সে.মি. উঁচুতে করতে হয়।

 

 

​দুই সারি বিশিষ্ট গো-শালা: ​

অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের গো-শালা তৈরি করা হয়, এ ধরনের গো-শালায় পশুকে দুভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি। মুখোমুখি পদ্ধতিতে দুই সারি পশু সামনাসামনি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের মাঝখানে ১২০ সে.মি. চওড়া রাসত্দা থাকে- যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৫.৫ ফুট, পাশের জায়গা ৩.৫ ফুট।

 

 

ঘরের বিবরণ:

* এই ঘর চারিদিকে শক্ত কাঠ অথবা লোহার পাইপ দ্বারা ঘেরা থাকে

* ঘেরার মধ্যে গরু ছাড়া অবস্থায় থাকে

* ঘেরার বাইরে পাত্রে খাবার দেওয়া হয়

* ঘেরার ভিতর দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে তারা খাদ্য খেতে পারে এবং পাত্রে দেওয়া পানি পান করতে পারে।

* ঘেরার মধ্যে তাদের স্বতন্ত্র বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকে

* ঘেরার মধ্যে পশু স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে

* সকালে-বিকালে ঘেরার ভিতরের গোবর পরিষ্কার করে হোস পাইপের সাহায্যে ধুয়ে দেওয়া হয়।

* কখনও একই ঘরের মধ্যে বিপরীত লিংঙ্গের গবাদি পশু একত্রে রাখা যাবে না

* এই প্রকারের ঘরের শুধু ছাউনি থাকে এবং চারিদিকে খোলামেলা থাকে। ঝড়-বৃষ্টি ও শীতের সময় চারিদিকে চটের পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে

* উন্মুক্ত ঘরে গরু প্রতি ৮-৯ বর্গমিটার স্থান বা ৮৫-৯৫ বর্গফুট স্থান প্রয়োজন

* ষাঁড় গরু এই জাতীয় ঘরে রাখা কিছুটা সমস্যা হয়।

 

 

ঘরের মেঝে তৈরী

ঘরের মেঝে কেমন হবেঃ উদ্দেশ্য হল যাতে সহজের পরিস্কার করা যায় এবং গরুর জন্য কোন সমস্যার না হয়।

ফ্লোর বা মেঝে দুই ভাবে বানানো যায় – ইট দিয়ে সলিং, ঢালাই

 

 

১। ইট দিয়ে সলিংঃ বালু দিয়ে তার উপর ইটের সলিং পেতে সিমেন্ট বালুর মশলা তৈরি করে দুইটি ইটের সংযোগ স্থলে মশলা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।

 

 

এটি খুব ভালো ভাবে করতে হবে। অন্যথায় কদিন পর পর ইট উঠানোর ঝামেলা আছে। এমনকি এখন না হলেও ৪/৫ বছর পর ইট উঠে যায় এবং উচু নিচু হয়ে যায়। ফাকা জায়গা দিয়ে গরুর প্রসাব ও গাসলের পানি কাদা তৈরি হয়।

 

 

২। ঢালাইঃ সিমেন্ট মশলা দিয়ে একেবারে ঢালাই দেওয়া হয়। ভালভাবে না দিলে এখানেও কদিন পর পর ঢালাই উঠে যায়। ঢালাইতে পিছলে গরু পরে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই সাবধান থাকতে হবে।

 

 

খামারে ঘরের মেঝে ঢালু দিতে হবে যাতে গোবর ময়লা সহজেই ড্রেনে চলে যায়। মাঝের রাস্তার স্লোপ বা ঢালু মাঝখান থেকে দুই দিকে যাবে। এতে পানি দু দিকে চলে যাবে। মেঝের ঢাল সামনে থেকে ড্রেনের দিকে গাভীর ক্ষেত্রে প্রতি ফিট এর জন্য ০.২৫ ইঞ্চি এবং ষাড় গরুর জন্য ০.৫০ ইঞ্চি করে দিতে হবে। ফলে ৮ ইঞ্চির জন্য গাভির ক্ষেত্রে ২-৩ ইঞ্চি এবং ষাড় গরুর ক্ষেত্রে ৪-৫ ইঞ্চি ঢাল দিতে হবে। গাভির চেয়ে ষাড় গরুতে ঢাল বেশি দেবার যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে পেছনে বেশি ঢালু থাকলে পেছনে মাংস তারাতারি বাড়ে। কিন্তু এটি সাইন্টিফিক কিনা জানি না।

 

 

গরুর খাবার পাত্র ও পানির হাউস তৈরী

অনেকে ভাবেন খাবার হাউস যত উচু হবে তত ভালো, গরু সহজে খেতে পারবে। ব্যাপারটাকে তারা অনেকটা ডাইনিং টেবিলের মত বানিয়ে ফেলেছেন। মানুষের যেমন ডাইনিং টেবিলে খেতে সুবিধা হয়, গরুর ক্ষেত্রেও তেমনটা ভাবা হচ্ছে। গরু স্বাভাবিক ভাবে মাঠে নিচে থেকে ঘাস খায়।

 

 

এটাই তার স্বভাব। তাই খাবার জায়গা উচা করে দেওয়া অর্থ তার স্বভাবের বিরুদ্ধে কাজ করা। এছাড়া মুখ নিচের দিকে থাকার কারনে মুখ দিয়ে যথেস্ট লালা আসে যা খাবারের হজমে সহায়ক। অথচ খাবার স্থান উচা করে দিলে যথেস্ট পরিমান লালা আসে না। আলাদা খাবার ও পানির পাত্র করতে ব্যাপক পরিমান খরচ হয়, অথচ এই খরচের কোন প্রয়োজন ছিল না।

 

 

তাই গরুর সামনে সামান্য উচু দেওয়াল করে লোহার পাইপ বা বাশ টেনে দিতে হবে (নিচের ছবির মত)। এর সামনে ফ্লোরেই খাবার রাখতে হবে। পানি আলাদা একটি পাত্র বা কাটা ড্রামে দেওয়া যেতে পারে কিংবা জায়গা থাকলে পানির জন্য আলাদা লাইন করতে হবে।

 

 

কিন্তু কিছু পুরোনো গরুর খামার ভিসিট করলে অনেকের মনে নিচের প্রশ্ন গুলো আসবে ?

 

 

যেমন, পুরোনো খামারে তো খাবার হাউজ উচু করে দেওয়া আছে। তাদের তো লস হচ্ছে না। পাত্র উচু করে দেওয়ার জন্য গরু খাচ্ছে না বা অসুস্থ হয়েছে এমন তো কোন প্রমান নেই। এভাবে ফ্লোরে খাবার দিলে খাবার নস্ট হয়। হ্যা, পুরোনো পদ্ধতিতে খাবার দিলে আপনার লস হবে তা নয়, কারন গরু তো এর জন্য খাওয়া বন্ধ রাখবে না। তবে এটি গরুর জন্য আরামদায়ক বা স্বাভাবিক হবে না। হাউজ উচু করতে অতিরিক্ত খরচ হবে।

 

 

প্রযুক্তি সর্বদাই পরিবর্তন হয়। টিকে থাকে তারাই যারা প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আর ফ্লোরে খাবার নস্ট দূর করার জন্য উপরের ব্যাপারটিকে ঠিক রেখেই আমরা একটি ব্যবস্থা নিতে পারি। সেটা হল খাবারের হাউস বানানো হবে কিন্ত তার গভীরতা হবে একেবারে ফ্লোরের কাছা কাছি, উচ্চতা গরুর সামনে ১২ ইঞ্চি এবং বাইরের দিকে ১৮ ইঞ্চি।

 

 

প্রাচীর থেকে নালা দিকে খাবার ও পানির হাউজের জন্য ২.৫ ফিট। প্রতি গরুর জন্য সামনে ৪ ফিট। সুতরাং দুই গরু তে ৮ ফিট। তাহলে মাঝে একটা ২ ফিট পানির হাউজ বানিয়ে বাকি ৬ ফিট অর্থাৎ ৩ ফিট করে প্রতি গরুতে একটা খাবার হাউজ হবে।

 

 

পানির হাউজ একত্রে বানাবার কারনে জায়গা কম লাগবে, ওদিকে খাবার হাউজে বেশি জায়গা দেওয়া যাবে। এছাড়া আলাদা ভাবে বানালে ৪ ফিটের মধ্যে খাবার হাউজে ২.৫ ফিট এবং পানির হাউজে ১.৫ ফিট করে নিতে হবে। আলাদা রাখার সুবিধা হল এক গরুর রোগ হলে পাশের গরু সহজে সেই রোগে আক্রান্ত হবে না। এছাড়া বোঝা যাবে কোন গরুটি কেমন পানি খাচ্ছে।

 

 

গরুর ঘরের চাল কেমন হবে
গরুর ঘরের চাল বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে, যেমন –

 

 

ঢালাইঃ খরচ বেশি, কিন্তু গরমে তাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। গরুর প্রধান সমস্যা হয় গরমে, শীতে না।
টিনের চালঃ খরচ কম, কিন্তু গরম বেশি কিন্তু শীতে ঘর অনেক ঠান্ডা থাকে। এক্ষেত্রে গরম কমাতে চালের নিচে ইন্সুলেসন দেওয়া যেতে পারে।

 

 

প্লাস্টিকের চালঃ মরিচা ধরে না, রোদের তাপে গরম হয় না, দিনের বেলা আলো পৌছায়। শেডের চারপাশ ওয়াল কেমন হবে চলুন তা জেনে আসি, ওয়াল ২.৫ ফুট সবচেয়ে ভালো। তবে চোরের ভয় থাকলে ৩ ফুট পর্যন্ত করে এর উপরে জানালাসহ টিন দেওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় নেট দিয়ে ঘিরে দিলে। অনেকে ভাবেন শীতে ঠান্ডা লাগবে। কিন্তু আমাদের দেশে গরুর জন্য শীত নয়, প্রধান সমস্যা হয় গরমে।

 

 

সেডে গরুগুলোকে পাইপ বা বাশ দিয়ে আলাদা করে দিলে এক গরু অন্য গরুর দিকে পায়খানা করতে পারবে না, পেছনের দিকে করবে, ফলে পরিস্কারের সময় সুবিধা হবে। কিন্তু পায়খানা করবে সে গরু বসলে সেটির অপর বসবে, আর গাভি হলে টিট দিয়ে জীবাণু ঢুকে যাবে।

 

 

গরুর ঘর বা সেডের ড্রেনের মাপ কেমন হবে চলুন জেনে আসি, প্রসাব ও গোবর যাবার ড্রেনের জন্য – ড্রেন ০.৫ থেকে ১.৫ ফিট লম্বা এবং ১ থেকে ২.৫ ফিট গভীর হতে হবে। তবে ড্রেনের ওপর খোলা থাকলে গভীরতা যাতে বেশি না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। গরুর পা পড়ে এক্সিডেন্ট হবার সম্ভাবন রয়েছে।

 

 

শেড করার গুরুত্ব চলুন জেনে আসি, পূর্ব – পশ্চিমে শেড করার ব্যাপারটি পোল্ট্রিতে যত গুরুত্বপূর্ণ, গরুর খামারের ক্ষেত্রে তত নয়। কারন পোল্ট্রিতে এমোনিয়া গ্যাস জমলে অনেক রোগের সৃষ্টি হয়ে মুরগি মারা যায়, যেমন, ঠান্ডা বিশেষ করে মাইকোপ্লাসমা দ্বারা এবং পরবর্তীতে ঠান্ডার কারনে আরো অনেক রোগের আগমন। কিন্তু গরুর ক্ষেত্রে প্রোডাকসনে প্রবলেম নিয়ে আসে তা নয়। তবে চেস্টা করতে হবে পূর্ব পশ্চিমে করার।

 

 

শীতকালে আমাদের দেশে বায়ু সাধারণত উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে ভূ-পৃষ্ঠের প্রচন্ড উত্তাপে ভারতের পশ্চিম-কেন্দ্রভাগ জুড়ে একটি নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগর থেকে একটি উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুস্রোত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উল্লিখিত নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়। কাজেই সেড পূর্ব পশ্চিম বরাবর লম্বা করলে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারবে। আরো একটি সুবিধা হল যে সূর্যের আলো তখন গরুর পেছনে অর্থাৎ প্রসাব ও গোবরের ওপর পরে, ফলে ন্যাচারালি কিছুটা জীবানুমুক্ত হয়। কিন্তু সেড উত্তর দক্ষিনে লম্বা করলে সূর্যের আলো সরাসরি গরুর মুখে পড়বে।

 

তথ্যসূত্রঃ AGRO HAVEN BD