অভাবের তাড়নায় ত্রিশ বছর আগে চার শতক জমি লিজ নিয়ে নার্সারি শুরু করেছিলেন সোহরাব আলী বাবু। রাস্তা থেকে আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচুর বিচি কুড়িয়ে চারা রোপণ শুরু করেছিলেন।
সেই নার্সারিই পাল্টে দিয়েছে সোহরাব আলীর জীবন। বর্তমানে তার সাথে নার্সারির হাল ধরেছেন দুই ছেলে। এখন নার্সারি থেকে বাবা-ছেলের মাসিক আয় লাখ টাকারও বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া বাজারের পূর্ব পাশে আড়ির মিল সংলগ্ন এলাকায় এই নার্সারি অবস্থিত।
উদ্যোক্তা সোহরাব আলী বাবু রুদ্র বয়ড়া গ্রামের মৃত মুনতাছ মণ্ডলের ছেলে। অভাবের সংসারে স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি।
সোহরাব আলীর বয়স হওয়ায় বর্তমানে তার সঙ্গে নার্সারির হাল ধরেছেন দুই ছেলে মো. সোহেল রানা ও জুয়েল রানা। চার শতক জমির নার্সারি এখন ১৩ বিঘাতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নার্সারিতে বনজ, ফলদ, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য প্রায় দুইশত প্রজাতির গাছ রয়েছে।
নার্সারির নামকরণ করা হয়েছে ছোট ছেলে জুয়েলের নামানুসারে ‘জুয়েল নার্সারি’। এ নার্সারি থেকে এখন প্রতি মাসে বিভিন্ন প্রজাতির গড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে প্রতিদিন চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
অভাবের তাড়নায় সোহরাব আলী নার্সারির ব্যবসা শুরু করলে বর্তমানে তা রুটিরুজির অবলম্বনসহ স্বাচ্ছন্দময় জীবন এনে দিয়েছে। তাকে দেখে উৎসাহিত হয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক বেকার স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ বিষয়ে সোহরাব আলী বাবু জাগো নিউজকে বলেন, তখন ১৯৯০ সাল। আমার কাছে পাঁচ কেজি হলুদ কেনার টাকা ছিল না। পরে ৪ শতক জমি লিজ নিয়ে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁঠাল, আম, লিচু এবং জামের বিচি সংগ্রহ করে নার্সারি শুরু করি।
এখন ছেলে সন্তান নিয়ে ভালোই আছি। নার্সারিতে মাসিক বেতনে কাজ করছেন আরও কয়েকজন। তারাও নার্সারিতে কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। আমার এই কাজে সহযোগিতা করছে আমার দুই ছেলে। তারাও স্ত্রী সন্তান নিয়ে খুব সুখে আছেন।
সোহরাব আলীর বড় ছেলে মো. সোহেল রানা বলেন, প্রতিদিন অনেক লোকজন আমাদের এ নার্সারিতে ঘুরতে আসেন। ঘুরতে এসে অনেকে আবার চারাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের এই নার্সারিতে প্রায় দুইশত প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে।
বাবার সাথে আমরা দুই ভাই সবসময় সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। বাবার এই কাজে আমাদের দুই ভাইয়ের সংসারেও ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এখন আমাদের দেখে অনেকে নার্সারি করার ইচ্ছে প্রকাশ করছে। আমরাও তাদেরকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। সোহরাব আলীর নিজস্ব কোনো জমি নেই, তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে দুই ছেলেকে সঙ্গে করে এখন সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ তাদের যেকোনো প্রয়োজনে সঙ্গে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তথ্যসূত্রঃ এগ্রি বার্তা