ব্রোকার বা মিডিয়া ছাড়া কিভাবে নতুন খামারের জন্য গাভী ও বকনা কিনবেন?

ব্রোকার বা মিডিয়া ছাড়া গাভী বা বকনার খোজ পাওয়া একজন নতুন খামারির পক্ষে আসলেই একটি কঠিন কাজ। আমি যখন নতুন খামার শুরু করেছিলাম তখন মিডিয়া ধরেই কিনতাম। নজরুল নামে এক ব্রোকার ছিল, বয়স ৬০(+) হবে। ওনার সাথে কথা ছিল আমাকে ভাল গাভী বকনার খোজ দেবে, আমি খুশী হয়ে যা দেবো তাতেই সে খুশী।

 

 

দেখা যেত গাভী মনের মত পেলে আমি তাকে ২০০০ বকশিশ দিয়ে দিতাম। আর বকনা কিনলে ৫০০/১০০০ টাকা। নজরুলের কাজ ছিল শুধুমাত্র খোজ দেয়া, কিন্তু দেখে বুঝে যাচাই করে নেবার দায়িত্ব আমার। ফেসবুকে এড দেখে গরু কিনবো, চিন্তা করতে পারিনা।

 

 

গাভী কেনার কাজকে সহজ করার জন্য আমরা এখন ফেসবুকে ঘুরে বেড়াই। ১২/১৩ লিটার দুধের গাভী কিনি ২ লাখ টাকা দিয়ে। ব্রোকাররা প্রকাশ্যেই বলে তাদের ১৫/২০ হাজার টাকা বেশী দিতে হবে কারন তারা কষ্ট করে ঘুরে ঘুরে গাভী/ বকনা খুজে বের করে।

 

 

কারো যদি অধিক অর্থ থাকে সে খরচ করতেই পারে। ঘরে বসে নেটে সব কিনবে। নতুন যারা খামার করতে এসেছেন তাদের জন্য আমার ব্যাক্তিগত কিছু পরামর্শ দিলাম নিচে কিভাবে গাভী ও বকনা কিনবেন। এই নিয়মমত কিনলে আপনাকে কোন ব্রোকারকে ১৫/২০ হাজার টাকা বেশী দিয়ে গাভী কিনতে হবে না গ্যারান্টেড।

 

 

দুধের গাভী কিভাবে কিনবেন: যদি খোজ পান ভাল গাভীর বিক্রেতাকে না জানিয়ে উপস্থিত হয়ে যান তার খামারে। প্রথম দিন বিকালে গিয়ে দুধ চেক দিন। এরপর ঠিক তার পরের দিন আবার সকালে গিয়ে দুধ চেক দিবেন। সময়ের ব্যবধান ১০-১২ ঘন্টায় যদি আপনি সেই গাভীর দুধ সকালে ৮ লিটার পান, ধরে নিবেন বিকালে ও ৭ লিটার পাবেন।

 

 

ধরুন আপনি প্রথম দিন বিকাল ৫ টায় গিয়ে দুধ দোয়ায়ে দেখলেন ৫ লিটার দুধ এবং পরের দিন সকাল ৭ টায় গিয়ে পেলেন ৮ লিটার দুধ তাহলে বলতে পারবেন এই গাভী সারাদিনে কয় লিটার দুধ দেবে? হিসাব সহজ, প্রথম দিন বিকাল ৫ টা থেকে পরের দিন সকাল ৭ টা কয় ঘন্টা? মোট ১৪ ঘন্টা।

 

 

এই ১৪ ঘন্টায় আপনি যদি দুধ পান ৮ লিটার তাহলে ধরে নিবেন সকাল বিকাল মিলিয়ে এই গাভী সর্বচ্চ ৮+৫= ১৩ লিটার দুধ দেবে। এখন ১৩ লিটার দুধের গাভীর দাম কত দেবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে গ্রাম বাংলায় একটা হিসাব আছে তা হলো, ১ লিটার দুধের জন্য ১০ হাজার টাকা।

 

 

তাহলে ১৩ লিটার দুধের গাভীর দাম আসবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাথে বাছুরের জন্য ১০-১২ হাজার অতিরিক্ত যোগ হতে পারে। সব মিলিয়ে দাম আসা উচিত ১ লাখ ৪০/৪২ হাজার টাকা। এই হলো বাজারের প্রচলিত প্রাকটিস। চাহিদা যোগান ও এলাকা ভেদে দামের কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।

 

 

সমাজের দুষ্ট ব্রোকাররা গাভীর দুধের দাম উপরের হিসাব মতো লিটার প্রতি ১০ হাজার করে ধরার পাশাপাশি গাভীর বডির মাংসের দামও যোগ করে, ফলে ১৩ লিটার দুধের গাভী ১ লাখ ৯৫ থেকে ২ লাখ দাম হিসাব করে দেখায়। আমরা যারা সোজা মানুষ, তারা এদের কথা বিশ্বাস করে যারপর নাই ঠকে যাই।

 

 

কি দরকার ফেসবুকের এসব ব্রোকারদের কাছে গিয়ে ১৫/২০ হাজার টাকা বেশী দেবার? আপনি যদি একটু কষ্ট করেন তাহলে নিজেই গ্রামে গেলে ব্রোকার পেয়ে যাবেন। ওনাদের ৫০০-১০০০ টাকা দিন, দেখবেন সারাদিন আপনার সাথে থেকে কোন গ্রামে ভাল গাভী বকনা আছে খুজে দেবে। নিজে না যেতে পারলে আপনার ভাই, বাবা বা কোন আত্বীয়কে পাঠান দুধ চেক দিয়ে দেখে আসার জন্য।

 

 

চেস্টা করবেন প্রথম বিয়ানের গাভী কিনতে বাচ্চা সহ। বাচ্চার বয়স যদি হয় ১৫/২০ দিন তাহলে খুবই ভাল। কিন্তু ব্যাপারীরা বাচ্চা দেবার পর একদিনও গাভী নিজের ঘরে রাখতে চায়না। কেন জানেন? কারন ব্যাপারী নিজেও জানেনা এই গাভী কত লিটার দুধ দেবে। ৯ মাস প্রেগন্যান্ট থাকা গাভী ব্যাপারীরা এজন্যই বিক্রি করতে বেশী পছন্দ করে। কারন সে সময় গাভীকে অনেক বড়সড় দেখায়। অত্ত বড় গাভী দেখে ২.৫০ লাখ দাম অনেকেই বলে দেয় নতুন ভাইরা।

 

 

বকনা কিভাবে কিনবেন? বকনা নিয়ে ধোকাবাজীর শেষ নেই ফেসবুকে। ফেসবুকের ব্যাপারিরা বলবে ভাই রানী বিট, হাই পারসেন্টেজ, অস্ট্রেলিয়ান, খুব ভাল মানের ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আপনিও সাদা বকনা দেখছেন তো মনে করেন আরে এটাতো বিদেশী! আর কাল রঙের হলে দেশী। হাহাহাহা, এটা ভূল ধারনা আপনাদের। আপনাদের এই ভুলকে পুজি করেই ধোকাবাজ ব্রোকার শুধু সাদা রঙ এর বাচ্চা নিয়ে আসবে আপনার কাছে। ১২-১৪ মাসের বাচ্চা ৯০ হাজার টাকা!

 

 

আমার খামার থেকে যে সব বকনা বিক্রি করেছি ব্যাপারিরা সাদা গুলো নেবার জন্য বেশী দাম দিয়ে হলেও চেস্টা করে। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জেনেই বলছি আপনাকে। এখন কথা হলো যে বকনার কোন রেকর্ড নেই তার ভাল মন্দ আপনি করে যাচাই করবেন? ইদানিং সমাজের ফেসবুকের ব্যাপারিরা বলবে মায়ের দুধ ২৫ লিটার, খুব ভাল বকনা।

 

 

এখন যদি প্রশ্ন করেন ভাই এর মা কোথায়? আমি এই বকনার মা’কে দেখে দাম দিতে চাই। দেখবেন উত্তর দিবে, মা নাই বিক্রি করে দিছে, না হয় মারা গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কাহিনীর শেষ নাই। এরপর প্রশ্ন করেন এর বাপ কে? বলবে নানা কোম্পানীর নাম, কিন্তু কোন কাগজ নেই। আসলে এই সব বকনা হাট থেকে কিনে আনা হয়েছে।

 

 

এগুলো হলো বাস্তবতা। তাহলে এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন যে বকনার কোন রেকর্ড নেই মা বাবার সেই বকনাকে আপনি কার কথার ভিত্তিতে এত দাম দিয়ে কিনছেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।

 

 

তাহলে কি করবেন আপনি? বকনা কিনবেন কিভাবে? আমার ব্যাক্তিগত পরামর্শ হলো, আপনাকে জাত উন্নয়ন করে নিতে হবে। জাত উন্নয়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। রেকর্ড ছাড়া যদি বকনা কিনতেই হয় তা কিনতে হবে যত সস্তায় পান আপনি, যেখানেই পান সেখান থেকে। সাদা রঙ হলেই ভাল বকনা, এই ধারনা থেকে বের হন। জিনিস ভাল মন্দ নির্ভর করবে তার জেনেটিকস এর উপর।

 

 

জেনেটিকস হলো বিজ্ঞান, আন্দাজের বিষয় নয়। কেউ যদি বলে সে বকনা দেখেই বলে দিতে পারে কত লিটার দুধ দেবে, ধরে নিবেন সে হলো অত্যান্ত ধূর্ত এক ঠকবাজ। ভাল সিমেন ব্যবহার করে এই সকল বকনা থেকে জাত উন্নয়ন করে নিবেন। ভাল সিমেন খুজুন কোথায় কোন কোম্পানী বিক্রি করছে বা সরকার দিচ্ছে।

 

 

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট