বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে পাখির খামার। বেকার যুবকরা বাণিজ্যিক খামার গড়ে জীবনযুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন দেখছে। অনেকেই শখের বসে শুরু করে এখন রীতিমত বাণিজ্যিক খামারের মালিক হয়েছেন। চলছে কেনাবেচা। বাড়ছে আয়।
জানা যায়, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, চেলোপাড়া, খান্দার, কলোনী, বনানী, কালিতলা, জহুরুল নগর, ফুলবাড়ি, শেলপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাখি ও কবুতরের খামার গড়ে উঠেছে। একেকটি খামারে ২০ থেকে লাখ টাকার পাখি ও কবুতর রয়েছে। খামারগুলো এখন বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে।
বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে অনেকেই এখন নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে ফেরাতে মাঠে নেমেছে। জেলার অনেক বেকারই এখন স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে।
বগুড়া শহরের ঝাউতলার আদর্শ প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম জানান, তিনি তিনটি স্থানে পাখি ও কবুতরের খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে কয়েক লাখ টাকার পাখি ও কবুতর রয়েছেন।
নিজ বাড়ির ছাদে, অফিসের ছাদে তিনি এই পাখি ও কবুতরের খামার গড়েছেন। দেখাশোনা খাবার প্রদান আর পরিস্কার করা ছাড়া তেমন শ্রম দিতে হয়না। খাবার খরচ আর শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে পুরোটায় তার আয় হয়ে থাকে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের শিক্ষক আব্দুল কাদের মজনুর ছেলে হুমায়ুন কবির পাখির সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি এখন এই উপজেলার শিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষের কাছে মডেল।
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তার মতো অন্তত দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ বাণিজ্যিক পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। তবে তাদের স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সেটি করা হলে এসব প্রত্যেকটি খামারে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। পরিবারে আসবে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সৌখিন পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। অবসর সময় কাটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছেন।
জেলার শেরপুর উপজেলার মাহফুজার রহমান সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাসার ছাদেই গড়ে তুলেছেন সৌখিন পাখির খামার। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সেটি বাণিজ্যিক খামারে পরিনত হয়েছে।
তার খামারেও রয়েছে অন্তত পনের প্রজাতির বিভিন্ন বিদেশী পাখি। প্রতিমাসে নব্বই থেকে এক লাখ টাকার পাখি বিক্রি করে থাকেন। তিনিও মাসে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় করেন খামার থেকে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকোরকোলা গ্রামের মাহবুব হোসেন, পৌরশহরের স্যানালপাড়ার স্কুলছাত্র লাবিব হাসান, বিকাল বাজারের কলেজ ছাত্র আবু রায়হান রনি, খন্দকারটোলার ফাহিমসহ আরও অনেকেই পাখির খামার গড়ে ইতিমধ্যে সফলতা পেয়েছেন। মিলেছে অর্থনৈতিক মুক্তি। তাদের পরিবারে এনে দিয়েছেন স্বচ্ছলতা।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় দেড়শ’র মতো সৌখিন পাখির বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। এছাড়া আরও দুই শতাধিক বাসা-বাড়িতে সৌখিন পাখি পালন করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে এই খাতে সহস্রাধিক পরিবারের লোকজনের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এসব খামার গড়ে সফল হওয়ায় বেকার তরুণ-তরুণী এবং অবসরে যাওয়া ব্যক্তিরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে করোনাকালীন স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।
এই সময়ে স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থীরা সৌখিন পাখি পালন করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই দিনদিন এই উপজেলায় বাণিজ্যিক খামার বাড়ছে বলে সূত্রটি জানায়।
ছাব্বিশ বছর বসয়ী যুবক হুমায়ুন কবির বলেন, বিগত ২০১০ সালে তার শখের পাখির খামারটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়। এতে ব্যাপক সফলতাও পেয়েছেন তিনি। প্রতিমাসে পাখিদের জন্য পনের থেকে বিশ হাজার টাকার খাবার কিনতে হয়। আর পাখি বিক্রি করে থাকেন এক লাখ দশ হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা।
সব খরচ বাদেই ষাট থেকে সত্তর হাজার লাভ হয়। তাই শহরে আরেকটি বড় খামার গড়ার কাজ শুরু করেছেন। সেখানে আরও বেশি দামি দামি পাখি তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। ভবিষ্যতে এই ব্যবসার আরও প্রসার ঘটাতে চান উল্লেখ করে খামারি হুমায়ুন
কবির আরও বলেন, আগামিতে এসব পাখির বাচ্চা উৎপাদনের চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ বিভাগের আরও সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান পিএএ জানান এই উপজেলায় সৌখিন পাখির খামার গড়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেকার তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এই খামার গড়ে তুলেছেন।
এটি একটি লাভজনক খাত। তাই তার দপ্তরের থেকে এসব পাখি পালনে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণসহ কারিগরি সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে খামারের পাখিরা অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ওষুধও বিনামূল্যে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
তথসুত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ