প্রতি মাসে মাশরুম বিক্রি করে আয় লাখ টাকা

সাভার (ঢাকা): ২০০৮ সাল থেকে মাশরুম চাষের সঙ্গে জড়িত মো. সবুর খান। তিনদিনের প্রশিক্ষণ শেষে তিনি দীর্ঘ এক বছরের চেষ্টায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেন।

 

 

বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায় বাড়ি তার, বর্তমানে সাভারের ডগর মোড়া এলাকার নিজ বাড়িতে মাশরুম চাষ করেন। মাশরুম সেন্টারেই সেই মাশরুমগুলো বিক্রি করেন তিনি।

 

 

দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ চারজনের পরিবার মো. সবুর খানের। দুই মেয়েই সাভারের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। আর তার পরিবারের সম্পূর্ণ আর্থিক যোগান আসে এ মাশরুম থেকেই। তিনি এখন বাসায় দুই জাতের মাশরুম চাষ করেন। এ দুই জাতের মাশরুম বাজারে বেশি চলে। তার মাশরুম চাষে সহয়তা করেন দুই মেয়ে ও স্ত্রী।

 

 

সম্প্রতি মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে সবুর খান একটি টেবিল নিয়ে ও একটি র‌্যাক নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাশরুম বাছাই ও প্যাকেটজাত করছেন। শুধু তিনিই নয়, গোল করে বসানো আরও ১০-১২টি মাশরুমের দোকানে ঠিক একই কাজ চলছে। যেখানে আছেন অনেক নারী-পুরুষ।

 

 

এ সময় মাশরুমের নানা দিক নিয়ে সবুর খানের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের দিকে মাশরুম সেন্টার থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর চাষ করতে গিয়েও নানাভাবে ব্যর্থ হয়েছি। কখনো নষ্ট হয়েছে, কখনো বা মাশরুমই গজায়নি।

 

 

আর সেই সময় মাশরুমের এতো চাহিদাও ছিল না। এর এক বছর পর থেকে যখন মাশরুম চাষ শুরু করলাম, তখন মোটামুটি লাভ পেলাম। এরপর থেকেই নেশা ধরে গেল এ মাশরুমের ওপর। তারপর শুরু করলাম বড় পরিসরে চাষ। এখন ভালো আছি, প্রতিমাসে লাখ টাকার ওপরে মাশরুম বিক্রি করি। আর খরচ হয় ৬০ হাজার টাকার মত। মাসে লাভ থাকে ৪০ হাজার টাকার মতো।

 

 

সবুর খান বাংলানিউজকে বলেন, ওয়েস্টার, মিল্কি ও ঋষি- এ তিন জাতের মাশরুম চাষ করি। ওয়েস্টার মাশরুম শুকনো ১২০০ টাকা কেজি ও কাঁচা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। মিল্কি মাশরুম কাঁচা ৩০০ টাকা কেজি। তবে এটি শুকনো হয় না।

 

 

ঋষি মাশরুম শুকনো ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা কেজি বিক্রি করি, এটি কাঁচা হয় না। এতে আমার সংসার খুব সুন্দরভাবে চলে। আগে আমার একটি খাবারের দোকান ছিল মাশরুম সেন্টারের সামনে, যেখানে মাশরুম দিয়েই সব তৈরি হতো- যেমন মাশরুম বার্গার, মাশরুম টিকাসহ আরও মাশরুমের অনেক আইটেম।

 

 

সামনে আবার দোকান দেবো। একটি মাশরুমের পলিথিনে মোড়ানো একটি বিজ তৈরি থেকে উৎপাদন খরচ পরে ১৩-১৪ টাকা। সেখান থেকে আমরা মাশরুম পাই ৪০-৫০ টাকার। আর একটি বীজ চারমাস পর মাশরুম দেয়। একটি বীজ থেকে দুই পাশ থেকে দুইবার মাশরুম পাওয়া যায়।

 

 

মাশরুমের কি কোনো মেলা হয়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মেলা বলতে আমাদের এ মাশরুম সেন্টারেই প্রতিদিন দোকান বসে। আর এখানো কোনো দিন নির্ধারণ হয় না। এখানে প্রতিদিনই মেলা। এখানে ঢাকা থেকে মানুষ এসে কিনে নিয়ে যায়।

 

 

আর বিভিন্ন চাইনিজ রেস্তোরাঁর ক্রেতারা এসে মাশরুম পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যায়। আমাদের এখানে যারা ১০-১২ জন আছেন, তারা সবাই মাশরুম চাষের সঙ্গে জড়িত। আমাদের পাইকারি বিক্রিই বেশি হয়। আমাদের কাছ থেকে মাশরুম নিয়ে আবার অনেকেই বিক্রি করেন। আবার এমনও আছে দুই তিন হাতও ঘুরছে। কাঁচা মাশুরুমটা বেশি দিন রাখা যায় না। আর শুকনো মাশরুম যদি দুই বছরও রাখা হয়, কিছু হয় না।

 

 

শুরুর দিকে মাশরুম চাষে কোনা বাধা এসে ছিল কিনা? এমন প্রশ্নে সবুর খান বলেন, বাধা তেমন আসেনি। প্রথম দিকের কথা না হয় বাদ দিলাম। এখনো তো অনেক মানুষ মাশরুমকে বলে ব্যাঙের ছাতা, কুত্তার ছাতা।

 

 

সেদিন বাসা থেকে কিছু মাশরুম নিয়ে আসছিলাম, পথের প্রায় মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, একজন তো প্রশ্ন করেই বসলেন, এ ব্যাঙের ছাতা কোথায় নিয়ে যাও? পাশে থাকা আরেকজন বলছেন, এগুলো ব্যাঙের ছাতা না মাশরুম? নতুন প্রজাতির খাবার। মাশরুমের বিষয়টি এমনই। কেউ জানে, কেউ জানে না। আসলে প্রচার না থাকলে তো এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।

 

 

মাশরুমের স্বার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় এ ইনস্টিটিউটের সাবেক উপ-পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন। তবুও তিনি মাশরুম নিয়েই কাজ করছেন। ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, মাশরুমকে আমরা মানুষের কাছে ঠিক মত পৌঁছাতে পারিনি।

 

 

এখনো অনেকেই এ সবজির সঙ্গে পরিচিত না। মানুষের মনের এমন ধারণা বদলাতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, এটিও একটি সবজি, যা পুষ্টিতে ভরপুর। নতুন করে কেউ মাশরুম চাষ শিখতে এলে তাদের যত ধরনের সুবিধা দরকার আমরা দিয়ে থাকি।

 

 

তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির জোগানের জন্য এমন একটি ফসল দরকার, যা পুষ্টিকর এবং যা আবাদের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে মাশরুম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সবুর খান আমাদেরই একজন মাশরুম চাষি ও ব্যবসায়ী।

 

 

তিনিও আমাদের কাছে সহয়তা নিয়েই এখন মাশরুমে লাভ দেখছেন। তার মত আরও অনেকেই আছেন, মাশরুমে সফলতা পেয়েছেন। আমি এখন মাশরুম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত নেই। তবে মাশরুমের সঙ্গে যুক্ত আছি। নতুন কর্মকর্তা এসেছেন, তাদের সঙ্গেই মিলে কাজ করছি।

 

তথ্যসূত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪