ফরিদপুরের কিছু এলাকার কৃষকরা আসন্ন রোজায় বিক্রি করতে চাষ করছেন লাভজনক ফসল লালমি। এই নির্দিষ্ট ফল চাষ করছেন শুধু রমজান মাসকে মাথায় রেখে। বেশ ভালো দামে বিক্রি হয় বলে বলছেন কৃিষি বিভাগ।
ফলটি দেখতে কিছুটা বাঙ্গির মতো হলেও স্বাদ ও গন্ধে আসলে কিছুটা তফাৎ রয়েছে। রমজানে ইফতারির সময় এটি রস করে খাওয়া যায়। ফরিদপুরের কৃষকরা দাবি করছেন, এটি খেলে ‘পেট ঠাণ্ডা থাকে’। সবজির মতো মনে হতে পারে। এটি ফল হিসেবে বেশি জনপ্রিয় হলেও পাকার আগে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা দিয়েই ফরিদপুরের কৃষকেরা ‘উদ্ভাবন’ করেছেন বাঙ্গিসদৃশ ফল ‘লালমি’। এটি দেখতে বাঙ্গির মতো, তবে বাঙ্গির মতো এর গায়ে শিররেখা নেই। গায়ের রং এবং গন্ধও আলাদা। স্বাদেও পার্থক্য আছে। বাঙ্গি রবি মৌসুমের ফল, পাকতে শুরু করে চৈত্র মাসে।
আর লালমির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শীতের দুই মাস বাদে বছরের যেকোনো সময় এটি চাষ করা যায়। রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে লালমি পেকে যায়। তাই কৃষকেরা এমন সময় এর বীজ বপন করেন, যাতে রমজান মাসে ফলগুলো বাজারে তোলা যায়। ফরিদপুরে উৎপাদিত ১৮টি ফলের মধ্যে আর্থিক বিবেচনায় বাঙ্গি ও লালমির অবস্থান ৫ নম্বরে। এ কারণে এই ফল চাষে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকাই স্বাভাবিক।
ফরিদপুরের কৃষকেরা বলছেন, ১৫ বছর আগে সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী এলাকায় আলিম খাঁ নামের এক কৃষক প্রথম লালমি চাষ করেন। আলিম খাঁ পরীক্ষাগারে গবেষণা ও সংকরায়ণ করে লালমি উদ্ভাবন করেছিলেন—বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়।
তবে কৃষকদের ভাষ্য, আলিম খাঁ হয়তো প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়িত এই ফলটির ধরন প্রথম লক্ষ করেন এবং এর চাষ করেন। তাঁর সাফল্য দেখে অন্য কৃষকেরাও লালমি চাষে উৎসাহিত হন। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা উচিত। কৃষকদের বক্তব্যে সত্যতা মিললে আলিম খাঁকে অবশ্যই পুরস্কৃত করা উচিত।
একদম শুরুর দিকে এই ফলটি চাষ শুরু করেন সদরপুরের কৃষক আলীম খাঁ। তিনি বলছেন, বছর ১৫ আগে প্রথম এই ফলটি চাষ করেছিলেন। “লালমি বলতে গেলে সারা বছরই হয়। ক্ষেতে লাগালে ৬০ দিন লাগে ফল তোলার সময় হতে। আমরা যেটা করি রোজার হিসেব করে ঠিক তার দুই মাস আগে এর চারা লাগাই।”
তিনি বলছেন, “শুরুটা ছিল বীজের দোকান থেকে একজন হঠাৎ একটা বীজ দিয়ে বলেছিল এটা লাগিয়ে দেখত। আমরা লাগালাম, তারপর দেখি বেশ চলছে। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই বীজ বানাই। যখন ফসল ওঠে তখন ট্রাকের পর ট্রাক যায় আমাদের এলাকা থেকে।”
সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি ফলকে আলাদা করে চেনা এবং সেটিকে স্থায়ীভাবে অন্যান্য ফলের তালিকায় যুক্ত করার কাজটিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে গবেষণা করে এই ফসলের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। অবশ্য আনন্দের কথা হলো, কৃষি বিভাগ এ ফলের অধিক মূল্যায়ন ও উন্নয়নের জন্য গবেষণা শুরু করেছে।
কৃষি বিভাগ যদি নিয়মিতভাবে কৃষকদের সৃজনশীলতার দিকে মনোযোগ দেয় এবং তাঁদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে লালমির মতো নতুন নতুন প্রজাতির ফলের আবাদ বেড়ে যাবে। খাদ্যসংকট নিরসনে তা অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: হযরত আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এখন ফরিদপুরে শুধু সদরপুর উপজেলার কৃষকরা ফসলটি লাগাচ্ছেন। একটা উপজেলার জন্য এটি অনেক বড় যায়গা। এছাড়া চরভদ্রাসন, নগরকান্দা, ভাঙ্গা এসব এলাকাতেও কিছুটা চাষ হচ্ছে। এর সাথে হাজার দেড়েক কৃষক এখন জড়িত।
তিনি আরোও বলেন, ফরিদপুরে বাঙ্গি এমনিতেই খুব চাষ হতো। এটি বাঙ্গির থেকে একটু আলাদা বৈশিষ্ট্যের ও স্বাদ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এটা আলাদা করে ফেলছিল। এটাকে আমরা বলছি নির্বাচন প্রক্রিয়া। নতুন এই জাতটি এক অর্থে এখানকার কৃষকদেরই উদ্ভাবন। তিনি বলছেন এটি অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তা চলছে। টিকে নতুন কোনও ভ্যারাইটি হিসেবে নামকরণ করা যায় কিনা তা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, লালমি ঠান্ডা জাতীয় ফল। রোজার সময় শশা, খিরা জাতীয় ফলের চাহিদা বেশি থাকে। এই লালমি খেলে নাকি শরীর ঠান্ডা থাকে।
তথ্যসূত্রঃ agricare24.com