মাশরুম চাষে সাইফুলের মাসে আয় ৭০-৮০ হাজার

মেহেরপুরের গাংনীর তরুণ উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম মাশরুম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। বর্তমানে মাসে আয় করছেন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। প্রথমবস্থায় বীজ আর প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকার কারনে লাভবান হতে না পারলেও মাশরুম বিক্রি করে তিনি এখন লাখপতি।

 

 

মাশরুম চাষের শুরু কিভাবে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, বেকারত্ব থেকে মুক্তির প্রত্যয় নিয়ে বছর ছয়েক আগে সাভার মাশরুম সেন্টার থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর চাষ শুরু করেন।

 

 

প্রযুক্তিগত সমস্যা ও বাস্তব প্রশিক্ষণের অভাবে পর পর দুই বছর লোকসান হয়েছে তার। প্রথমে হোঁচট খাওয়ার পর থেমে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু না থামেননি সাইফুল। আরও দুই বছর ধরে বীজ তৈরি ও ছত্রাক আক্রমণ ঠেকানো নিয়ে কাজ করেন। এতে ধরা দেয় সাফল্য।

 

 

নিজের তৈরি বীজ আর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাম্পার ফলন পান তিনি। গত দুই বছর সফলতার সাথে মাশরুম বিক্রি করে তিনি এখন লাখপতি। বর্তমানে তিনি সফল উদ্যোক্তা। প্রায় চার বিঘা জমির উপরে এসএম মাশরুম ঘর নামে পরিচিতি পেয়েছে সাইফুলের মাশরুম খামারটি।

 

 

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে সাইফুলের এসএম মাশুরুম ঘরের মাশরুম। কাঁচা ও শুকনো দুইভাবেই মাশরুম বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২০০ কেজি মাশরুম পাওয়া যাচ্ছে এই খামার থেকে। প্রতি মাসে এখন আয় হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা।

 

 

সাইফুল ইসলামের সাথে কাজ করছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ধানের খড়-বিচুলী তাপ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার পর মাশরুম বীজ দিয়ে পলিথিন প্যাকেট করা হয় যেটাকে বলা হয় বল সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডার ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে রেখে পানি স্প্রে করার পরই বের হয় প্রত্যাশিত মাশুরুম। একটি সিলিন্ডার থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত মাশরুম তোলা যায়।

 

 

সাইফুলের মাশরুম চাষে সাফল্যের কারণে অনেকেই মাশরুম ব্যবহার করছেন এবং চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। ভোক্তা ও মাশরুম চাষে আগ্রহী যুবক জাহেদুর রহমান জানান, তিনি আগে মাশরুমের গুণাগুণ জানতেন না। পরে জানতে পেরে নিজে ব্যবহার করছেন ও অনেককেই ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। একই কথা জানান আনিচুর রহমান ও রতন সরকার।

 

 

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, সহজে আবাদযোগ্য মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ এখন সময়ের দাবি। বেকারত্ব মোচনে মাশরুম আবাদ উপযুক্ত মাধ্যম বলে মনে করছেন তিনি।

 

 

তথ্যমতে, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে মাশরুম উৎপাদন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ মেট্রিক টন মাশরুম প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

 

 

প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ প্রায় সব দেশেই মাশরুম আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে।

 

 

এছাড়া, দেশে অর্থকরী ফসল মাশরুম চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং ভূমিহীন। তাঁদেরকে মাশরুম চাষে সম্পৃক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ তৈরি হবে।

 

 

মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করতে পারলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। অন্যদিকে, দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে যারা চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা করতে পারলে মাশরুমের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি হবে।

 

তথ্যসূত্রঃ Agricare24