গরু চাষ করেও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শার্শার পুটখালি গ্রামের নাছির নামের এক যুবক। ভারত থেকে চোরাইপথে আসা দেশের সবচেয়ে বড় খাটাল (গরু রাখার স্থান) যশোরের পুটখালি গ্রামে।
গ্রামের ১০ জনের মতো নাছিরও একসময় গরু ব্যবসা করতো। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হলেও গরুর প্রেমে পড়ে পুটখালির মাঠে গড়ে তুলেন বিশাল খামার।
মাত্র পাঁচটি গরু নিয়ে ছোট্ট একটি খামার শুরু করে আজ সেখানে শোভা পাচ্ছে প্রায় ৯শ গরুর বিশাল কর্মযজ্ঞ। ৯ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের গরুর খামার। ২০১৩ সালে নেপালি জাতের মাত্র ৫টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন খামারের।
পরবর্তীতে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ ও নিজস্ব কিছু পুঁজি দিয়ে আরও ৫টি গরু ক্রয় করেন। ১০টি গরু থেকে পর্যায়ক্রমে বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে আজকের এ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে খামারটি। বর্তমানে তার খামারে ১২০ টি দুধের গাভি রয়েছে।
এসব গাভি থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ লিটার দুধ পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি ও স্থানীয় মিস্টির দোকানে এসব দুধ সরবরাহ করে থাকেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে ১২০টি গাভি, ৫৫০টি ষাঁড় ও ১২০টি বাছুর রয়েছে।
যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। ডেইরি খামারের পাশাপাশি রয়েছে একটি ছাগলের খামার। যেখানে দেশি ও উন্নত জাতের প্রায় ১২৫ টি ছাগল রয়েছে।
বর্তমানে তার খামারে কাজ করছেন ৮৫ জন শ্রমিক। তাদের ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিচ্ছেন। শ্রমিকরা জানান, এখানে কাজ করতে পেরে তারা অনেক খুশি।
খামারি নাছির উদ্দিন জানান, প্রত্যেক বছরে খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে ২ কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে। গরুর খাদ্যের দাম ও দুধের বাজার ওঠা-নামার সাথে আয়ও ওঠা-নামা করে থাকে। তার খামারের সফলতার পেছনে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সহযোগিতা রয়েছে। খামার করার পর থেকে আজ পর্যন্ত বড় ধরনের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
পুটখালি গ্রামের আল আমিন জানান, আত্মনির্ভরশীল নাছির এখন এলাকাবাসী ও পরিবারের কাছে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মানুষ। তাঁকে অনুসরণ করে এলাকায় এখন অনেকেই গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির খামার করছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ নাছিরের সাফল্যে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
যশোর জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের কর্মকতা ড. রাশেদুল হক জানান, নাছিরের খামার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর খামার। তিনি একজন দক্ষ খামারি।
তাকে দেখে গ্রামের অন্যান্যরা গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। তার খামারের গরু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমারা কনোরায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের সরকারী ভাবে প্রনোদনা দেয়ার চেষ্টা করছি।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন