যমুনা পাড়ি জাতের বাঘাকৃতির ছাগল, ওজন প্রায় ৩ মণ

ভরদুপুরে খামারে একপাতে খাবার খেতে ব্যস্ত ক্ষুধার্ত ছাগলের পাল। এতে হাঁটু গেড়ে অংশ নেওয়া গায়ে ডোরাকাটা বিশালাকার একটি ছাগলকে বাঘ ভেবে ভুল করতে পারেন যে কেউ।

 

 

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর শহরের হরিনমারী গ্রামে ‘সেভ গট’ নামে খামারে দেখা মেলে যমুনা পাড়ি জাতের বাঘাকৃতির এ ছাগলটির। এর ওজন ১২০ কেজি। উচ্চতা প্রায় চার ফুট। এখানে আরো রয়েছে ৮০ কেজি ওজন ও তিন ফুট উচ্চতার হরিয়ানা, একই ওজন-উচ্চতার তোঁতাপাড়ি ছাড়াও বয়ার ও ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ নানা জাতের ছাগল।

 

 

খামারের বিশাল ছাগলটি মূলত প্রজননের কাজে ব্যবহৃত হয়। এর বাজার মূল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এর দৈনিক খাদ্য তালিকায় রয়েছে এক কেজি ছোলা, ভুষি আধা কেজি ও পাঁচ কেজি কাচা ঘাস।

 

দিনবদলের চেষ্টায় ওই খামারে দিন-রাত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রেজাউল করিম রতন (৪০) ও মাসুমা আক্তার দম্পতি।

 

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওই খামারে গিয়ে দেখা যায়, পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে খামারটি। মূলফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বাঁয়ে উচু মাচাং করে তৈরি করা হয়েছে বিশাল ছাগল রাখার ঘর।

 

 

ভেতরে রয়েছে বেশ কিছু শেড। সামনে রয়েছে চারপাশে ঘেরা চারণভূমি। এর ডান পাশে আলাদা শেডে রয়েছে খামার ও বিশ্রামের স্থান। কোনো ছাগল অসুস্থ হলে পাশের একটি ঘরে নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এ খামারেরই এক কোণে ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করেন রতন মিয়া।

 

 

রেজাউল করিম রতন জানান, এসএসসি পাশ করার পর আর লেখাপড়া চালানো সম্ভব হয়নি। জীবিকার সন্ধানে মুদি দোকান-ফলের দোকান করেও সফলতা মেলেনি।

 

এর আগে গার্মেন্টসে কাজ করেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। শেষে ছাগল পালন করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন। ছোট ভাই রহমাতুল্লাহ আল আমিন লিটুর অর্থায়নে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে দেশি-বিদেশি ছাগলের খামারটি।

 

তিনি আরো জানান, বাৎসরিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে খামারটি শুরু করেন। এতে শুরুতে ছাগলের সংখ্যা ছিল ১৭। বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা অর্ধশত। ছাগল একটি লাভজনক প্রাণী।

 

 

এদের বছরে দু’বার প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। আমরা ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সে সময় আমাদের খামারে ছাগলের সংখ্যা হবে অন্তত ৫০০টি। বর্তমানে ছাগলের খাবার-চিকিৎসা বাবদ দৈনিক গড়ে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে।

 

রতন মিয়ার স্ত্রী মাসুমা আক্তার জানান, তার স্বামী রতনরা তিন ভাই। দুই ভাই লেখাপড়া করে বড় চাকরি করছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় দিনরাত দিনবদলের যুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে এ দম্পতি। নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানো চেষ্টা করছেন তারা।

 

 

তিনি বলেন, আমাদের ছেলে মুন্না এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। মেয়ে মারিয়া প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।
পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন জানান, নিয়মিত ওই দম্পতির ছাগলের খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ-চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

 

তথ্যসূত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪