কুমিল্লার লাকসামে ছয়জন স্বপ্নবাজ তরুণের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ড্রাগন ফলের বাগান ‘নিরাপদ এগ্রো’। উপজেলার বাকই গ্রামে গড়ে তোলা ‘নিরাপদ এগ্রো’র উদ্যোক্তাদের সবাই দেশের প্রথম সারির সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। বিষমুক্ত নিরাপদ ফল ও সবজি সরবরাহ করাই মূল লক্ষ্য তাদের। ড্রাগনের পাশাপাশি ক্যাপসিকাম চাষ করেও এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তারা।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাকই গ্রামের উচ্চশিক্ষিত ছয় তরুণ আহসান হাবীব, মেহেদি হাসান জনি, ওসমান গণি, সোহানুর মোর্শেদ সৈকত, রাশেদ ইমতিয়াজ সায়মন ও শাদমান শাকীফ পৌনে এক বিঘা জমিতে ১৩২টি পিলারে ৫২৮টি ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করার মধ্য দিয়ে এই বাগান শুরু করেন।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কুমিল্লায় সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন ফল চাষ শুরু হয়। চারা রোপণের মাত্র নয় মাসেই বাগানে রঙিন ফল শোভা পেতে দেখা যায়। প্রথম বছরে যে পরিমাণ ফল এসেছে তা নিজেরা এবং চারপাশের মানুষ মিলে স্বাদ নিয়েছেন।
দ্বিতীয় বছরে এসে কিছু ফল তারা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, যার অধিকাংশই বাগান থেকে নিয়ে গেছেন ক্রেতারা। আগামী মৌসুমে বিপুল ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয়জন উদ্যোক্তার সবাই ঈদ ও বিভিন্ন ছুটিতে গ্রামে আসেন। এমনি এক ঈদের ছুটিতে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে নিজেরা মিলে একটি কৃষি প্রকল্প গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সিদ্ধান্ত হয় ড্রাগন ফলবাগান করার। পরদিন থেকেই কাজে নেমে পড়েন তারা।
নিয়মিত পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের ফলে ইতোমধ্যেই এ বাগান থেকে দুই মৌসুমে ফল সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশব্যাপী উন্নতমানের চারাও সরবরাহ করা হয়েছে। শৌখিন ছাদবাগান ও আঙিনাবাগান চাষিদের কাছে ছাড়াও কুমিল্লা ও বান্দরবানে দুটি বাণিজ্যিক বাগানের জন্য ড্রাগন ফলের চারা সরবরাহ করেছে ‘নিরাপদ এগ্রো’।
উদ্যোক্তারা জানান, এপ্রিল-মে মাস থেকে শুরু করে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল আসে। একটি পূর্ণ বয়স্ক চারা গড়ে ১০ কেজি করে ফলন দিতে পারে। একবার চারা রোপণ করলে তা ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খরচের পরিমাণ কমতে থাকে এবং গড় আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
তাই বাড়ির আঙিনা বা ছাদে ড্রাগন চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। স্বপ্নবাজ ছয়জন তরুণের গড়ে তোলা ড্রাগন ফলের বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ আসছেন। দৃষ্টিনন্দন বাগানে আকৃষ্ট হয়ে অন্যরাও এমন বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন