অন্যান্য হাঁস থেকে অধিক লাভজনক বেইজিং জাতের হাঁস পালন , পাবেন যেখানে

বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের হাঁসের মধ্যে এই জাতের হাঁসটি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।চায়না থেকে আগত এই জাতের হাঁস পালন করে অধিক লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

 

 

অনেকের ধারণা এই বিদেশী জাতের হাঁস আমাদের দেশে লালন পালন করা যাবে কিনা অথবা আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা। নিঃসন্দেহে আমাদের দেশে এই বেইজিং জাতের হাঁস লালন পালন করা খুবই সহজ এবং কোনো প্রকারের প্রতিকূলতার সৃষ্টি হবে না এবং কোনো রকম সমস্যার সৃষ্টি হবে না।

 

 

বেইজিং হাসের রোগ বালাই

হাঁসের রোগ বালাই বলতে ২টি রোগ হয়। ডাকপ্লেগ রোগ এবং ডাক কলেরা রোগ। যেহেতু ৩ মাস বয়সে এই হাঁসটি বিক্রি করা হবে সেজন্য ২৫ দিন বয়সে ডাকপ্লেগ এবং ৪০ দিন বয়সে পুনরায় ডাকপ্লেগ টিকা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে কিছু অ্যান্টিবায়েটিক এবং ভিটামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ালেই এই হাঁসের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং সেক্ষেত্রে হাঁসের মৃত্যুহার হবে খুবই কম। যা আমাদের দেশী হাঁস পালনে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় এই বেইজিং জাতের হাঁস পালনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যার সৃষ্টি হবে না। যা নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য লাভজনক এবং এটা পালন করা সম্ভব।

 

 

বেইজিং হাসের খাদ্য

দেশীয় হাঁসের মত দেশীয় খাবার খাওয়ানো যায় বলে আমাদের দেশে এই হাঁস ভালোভাবে লালন পালন করা যাবে। এই বেইজিং জাতের হাঁস তিনভাবে পালন করা যায়। ১) আবদ্ধ পদ্ধতি, ২) আবদ্ধ ও আংশিক খোলা পদ্ধতি এবং ৩) উন্মুক্ত পদ্ধতি। হাঁস লালন পালন করতে গেলে মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই পালতে হবে। আমাদের দেশী হাঁস যেভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পালন করা হয়, এই হাঁসও সেই একই পদ্ধতিতে লালন পালন করলে লাভজনক হবে। কারণ হাঁস সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করলে ঐখান থেকে লাভ করা সম্ভব নয়।

 

 

এই হাঁসের বাচ্চা কেনার পরে প্রথম ১ মাস ব্রয়লার ফিড বা লেয়ার মুরগির ফিড খাওয়াতে হবে। ১ মাস পার হলেই ২৫ দিন বয়সে একটি ভ্যাকসিন দিতে হবে। তারপর উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মাঠে, বিলে, নদীতে বিশেষ করে যেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে যেমন শামুক, ঝিনুক, আগাছা, লতাপাতা, কচুরিপানা, শেওলা, মাঠে পড়ে থাকা ধান এসব জায়গায় পালন করতে হবে। এই প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ালে ৩ মাস বয়সে এই হাঁস ৪ কেজী ওজনে বিক্রি করা যায়। এতে প্রতিটি হাঁসে ১০০-১৫০ টাকা লাভ করা সম্ভব।

 

 

বেইজিং হাসের বাসস্থান

যেহেতু হাঁস সব সময় পানিতে থাকতে পছন্দ করে সেজন্য হাঁসের বাসস্থানের আশে পাশে পানি থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। খাবার এবং পানি দিতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। বেইজিং জাতের হাঁসগুলো সাদা রংয়ের, ঠোটগুলো হলুদ রংয়ের এবং পাগুলো একটু লালচে রংয়ের হয়ে থাকে। এই হাঁস পালন করতে হলে খামারীদের খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙ্গিনায় এই হাঁস পালন করা যায় পারিবারিকভাবে। মাত্র ৩০০ স্কয়ার ফুট জায়গার মধ্যে ১০০টি হাঁস পালন করা সম্ভব।

 

 

যদিও এই হাঁস চীনে দেখা যায় কিন্তু বর্তমানে এই হাঁস আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই হাঁস পারিবারিক এবং বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। খামারে এই হাঁসগুলো নিজেদের মত করে বিচরণ করে এবং বড় হয়। এই হাঁসের রোগ বালাই অন্যান্য জাতের হাঁসের মতই। এজন্য নিয়ম মত ১ বার বা ২বার ভ্যাকসিন দিলেই আর রোগ বালাই হয় না।

 

 

রোগ শোকে করনীয়

ডাকপ্লেগ রোগের মূল লক্ষণ হলো পা পড়ে যাওয়া, পা অবশ হয়ে যাওয়া যাকে বলে প্যারালাইজড। এরফলে হাঁস খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এরফলে এই হাঁসের খুব দ্রুত মৃত্যু হয়। ভালো ফল পেতে হলে রোগ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে ২৫ দিন বয়সে ১ম ডোজ এবং ৪০ দিন বয়সে ২য় ডোজ। এরপরে প্রতি ৪ মাস পর পর ডাকপ্লেগ রোগের টিকা দিতে হবে।

 

 

আর একটি রোগের নাম হচ্ছে ডাক কলেরা। এটা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ। এই কলেরা রোগের মূল লক্ষণ হচ্ছে সবুজ পাতলা পায়খানা, দুগন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা, পাখনা/ডানা ঝুলে যাবে। খাবার খাওয়া কমে যাবে। এর ফলে এই হাঁস ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকবে। এর মৃত্যুর হার খুব বেশি হয় না। উন্নত ঔষধ ও উন্নত পরিচর্যায় রাখলে এই হাঁস সহজেই সুস্থ্য হয়ে যায়। দেশীয় জাতের হাঁসের চেয়ে বেইজিং জাতের হাঁস পালন করা লাভজনক।

 

 

এই বেইজিং জাতের হাঁস নিজেরা বাচ্চা ফুটাতে চায় না। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটানো হয়। এই জাতের হাঁসগুলো দেশীয় জাতের হাঁসের চেয়ে ১-১.৫ মাস আগে ডিম দিতে শুরু করে এবং সারা বছর জুড়েই ডিম দিতে পারে তবে বেইজিং জাতের হাঁস মাংস উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাত্র ৩-৪ মাসেই এই হাঁসের ওজন হয় ৩.৫-৪.৫ কেজি পর্যন্ত। যদি এই হাঁস পারিবারিকভাবে অথবা বানিজ্যিকভাবে চাষ করা যায় তাহলে দেশের জন্য যেমন অর্থনৈতিকভাবে উপকারী এবং মাংসের চাহিদাও যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে।

 

 

প্রাপ্তিস্থান

নওগাঁ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র অথবা কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজনন খামার, হাজীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ।

 

তথ্যসূত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার