আপনি যদি এক টুকরো জমি কিনে বাড়ি বানাতে চান যা শহরে কিংবা গ্রামে তা ভিন্ন বিষয়। আর যদি আপনি মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে জমি বা প্লটে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে বেশ কিছু বিষয় বুঝে শুনে আগাতে হবে।
জমিতে বিনিয়োগের যেমন অনেক সুবিধা আছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। তবে তুলনামূলক সুবিধা বেশি, এমনকি অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও, জমিতে বিনিয়োগ বেশ সম্ভাবনাময় ও কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত।
যেমন অন্য বিনিয়োগে দেখভাল করার বিষয় থাকে অন্যদিকে একটি খালি জমি কিনলে আপনাকে তার জন্য নতুন করে কিছুই করতে হবে না। অন্য বিনিয়োগ যেমন শেয়ার বাজার যা ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, অন্যদিকে জমিতে বিনিয়োগে এর ভিন্ন।
আপনি যখন একটা টুকরো জমি কিনবেন তখন সেই জমিতে দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন এই জমির মালিকানা আপনার। যা সমাজে প্রভাব পতিপত্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
আপনি যদি খেয়াল করেন তবে দেখবেন গ্রামে যাদের জমি জমা বেশি থাকে তাদের অন্যরা বেশি গুরুত্ব দেয়, এই বিষয়টা যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। আবার এই জমির জন্য বেশির ভাগ সময় নানা ধরনের সমস্যা হয়।
আমাদের দেশে যতগুলো কেস-মামলা চলমান আছে এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি এই জমি-জমা নিয়েই। একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনি যখন জমিতে বিনিয়োগ করবেন তখন বেশ কিছু বিষয় আমলে নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
প্রথম বিষয় হচ্ছে, এটি কোনো স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ না। কম পক্ষে ৫ বছরের অধিক একটা জমি ধরে রাখলে ভালো টাকা লাভ করা যেতে পারে।
জমিতে বিনিয়োগের বড় সুবিধা হচ্ছে এককালীন বিনিয়োগ করার পর, অর্থাৎ জমিটি কেনার পর আর কিছুই করতে হয় না। সময়ের পরিক্রমায় এর দাম বাড়তে থাকে। যেমন একটা বিজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ বছরে জমির দাম বেড়েছে একশ’ গুণ।
তবে বর্তমান সময়ে কেউ যদি জমি কিনে আর ২০ বছর পর বিক্রি করে তাহলে যে ১০০ গুন বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে তা মনে হয় না। তবে এটা ঠিক যে, জমির চাহিদা সব সময় ছিল এবং সামনে আরো থাকবে।
অনেকের ধারনা, ২০৫০ সালে আমাদের দেশে জনসংখ্যা হবে ৩২ কোটি ফলে জমির চাহিদা অনেকে বেড়ে যাবে, তবে আমার বিশ্বাস এমনটি হবে না।
কেননা লক্ষ লক্ষ পরিবারে এখন দু সন্তান বা এক সন্তান। এর একটা বড় অংশ আবার যাচ্ছে বিদেশে। খেয়াল করে দেখবেন, দেশে SSC পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তেমন বাড়ছে না!
ফলে ২০ বছর আগে জমিতে বিনিয়োগ করে যা পাওয়া যেত যা বর্তমানের পেক্ষাপটে প্রায় অর্ধেক নেমে আসতে পারে। বড় শহর যেমন ঢাকা, চট্রগ্রামে জমির দাম বাড়লেও এই গতি কমে আসতে পারে।
কেননা, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে এর আশে পাশের জেলাগুলোতে শিল্প বিপ্লব ঘটবে, ইন শা আল্লাহ। তাই বর্তমানে বড় শহরের থেকে ছোট শহর বা মফস্বলে জমিতে বিনিয়োগ করে ভালো রিটান আসতে পারে।
যখন একজন বিনিয়োগকারী জমিতে বিনিয়োগ করে তখন সে বর্তমানে কি পাবে তার চিন্তা করে না। তার চিন্তা থাকে সামনে ১০/১২ বছর বা এর অধিক সময় পর ঐ এলাকার কি কি সম্ভাবনা থাকে এর উপর।
একটি জমির ভবিষ্যত কী হবে তার বড় একটা অংশ নির্ভর করবে ঐ এলাকায় বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং উন্নয়নমূলক পরিকল্পার উপর।
অর্থাৎ,ঐ জমির কাছাকাছি অবস্থানে রাস্তা ঘাট, অবকাঠামো এবং বাণিজ্যিক মূলক কোন উন্নয়ন চলতে থাকে, বা সামনে শুরু হতে পারে তাহলে সেখানে জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জমিতে বিনিয়োগ করে অনেকেই ভালো টাকা আয় করতে পারলেও কিছু মানুষ ক্ষতির মধ্যেও পরে। বিশেষ করে জমির ব্যাপারে খোজ-খবর না নিয়েই যদি বিনিয়োগ করে।
একটা জিনিষ মাথায় রাখতে, যেই এলাকা ইতিমধ্যে অনেক উন্নত হয়েছে, আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে, এর থেকে যেই এলাকা তুলনামূলক কম উন্নত, অব-কাঠামো তেমন গড়ে উঠে নাই, তবে সম্ভাবনা আছে তেমন এলাকায় জমি কেনা উত্তম বিনিয়োগ হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, জমিতে বিনিয়োগে তারল্য থাকে না।
যেমন আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে, তাহলে ২/৩ দিনের মধ্যে টাকা ক্যাশ করতে পারবেন। আর জমিতে বিনিয়োগ করলে বিক্রি করার টাইমে বেশ সময় লাগতে পারে।
জমিতে বিনিয়োগ নিরাপদ তবে কেনার সময় ভালো ভাবে কাগজপএ যাচাই বাছাই করে কিনতে হবে।
শেষ কথা, ক্যাশ টাকা থাকলে জমিতে বিনিয়োগ করতে পারেন, তবে কখনোই লোন বা কিস্তিতে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। এই লোণ বা কিস্তি সামনের ৮/১০ বছর আপনার ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকবে, যা শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কাজে হাত দিতে পারবেন না।
তথ্যসূত্রঃ বাংলা প্রিনিউর