রামপালে লবণাক্ত মাটিতে সৌদির খেজুর চাষ, আয় লাখ টাকার উপরে

বাগেরহাটের উপকূলীয় জেলার রামপাল উপজেলার সন্ন্যাসী হাজীপাড়া এলাকায় সৌদি খেজুর চাষ করে এলাকার মানুষকে স্বাবলম্বী হতে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি। মরুভূমির এই ফল চাষে নতুন সম্ভাবনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা ও কৃষি বিভাগ। বাগেরহাটে শহরের আমলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন। পেশায় একজন আইনজীবী। বাগেরহাট জজকোর্টে আইন পেশা নিয়োজিত। এর পাশাপাশি তিনি এখন সৗখিন কৃষক।

 

 

১৫ একর মৎস্য ঘেরের খামারের বেড়িবাঁধে এখন আড়াই হাজারের মত গাছ রয়েছে জাকির হোসেনের। দুই বছরেই ফল এসেছে অনেক গাছে। ইতিমধ্যে অগাষ্ট মাসে প্রথম একটি গাছ থেকে ফল কেটেছেন তিনি।

 

 

জাকির হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ১৫ একর জমিতে নয়টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। পুকুরের পাড় জুড়ে বিভিন্ন ফলজ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লবণ পানির জন্য এসব ফসলে লাভ হচ্ছিল না। অন্যদিকে অতিরিক্ত লবন পানির কারণে ঘেরে গলদা চিংড়ি বা কার্প জাতীয় মাছ ভালো হয় না। তারপরে কয়েক বছরে বাগদা চিংড়িতেও লোকসানে পড়ি। পরে হতাশা কাটিয়ে উঠতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রামপাল সৌদি খেজুর বাগান নাম দিয়ে এই খেজুর চাষ শুরু করি।

 

 

তিনি বলেন, প্রথম দিকে লোকজন আমাকে পাগল বলতো। ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরও ১০০ চারা আনি। বর্তমানে আমার আজোয়, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহি এই পাঁচ জাতের আড়াই হাজারের মত খেজুরের চারা রয়েছে। এছাড়াও বিচি থেকে তৈরি আরও ২৫০০ চারা প্রস্তুত রয়েছে নার্সারিতে। বর্তমানে ৫০টি গাছে ফলন হলেও আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ গাছে খেজুর হওয়া শুরু করবে বলে আশা করি।

 

 

এছাড়া, খেজুরের পাশাপাশি ভিয়েতনামি নারকেল, কয়েক প্রজাতির আম, আমড়া, মাল্টাসহ বেশ কিছু ফলের চাষ করেন তিনি। খামারে রয়েছে ৩০টি দেশি গরু।

 

 

নতুনদের উদ্দেশ্যে জাকির হোসেনের পরামর্শ কলম এবং বিচি দু’ভাবেই সৌদি খেজুরের চারা তৈরি হয়। এই বিচির চারার বেশির ভাগ পুরুষ হয়ে যায়। যার ফলে ফল আসে না। তাই নতুন যারা শুরু করবে তাদেরকে কলম (অপ শুট)‘র চারা ক্রয়ের জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

 

 

জাকির হোসেন আরও বলেন, আমার এখানে এখন সার্বক্ষণিক তিন জন কর্মচারী রয়েছে। ভবিষ্যতে এই নার্সারীতে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আশা করি।

 

 

স্থানীয় সফল দাস, আশ্বাব আলী শেখ, একরাম আলীসহ বেশ কয়েকজন মৎস্য চাষী বলেন, এ এলাকার পানিতে অনেক লবণ। মূলত চিংড়ি চাষ করেই আমাদের জীবন চলে। তেমন কোন গাছপালা হয় না। কয়েক বছর ধরে চিংড়িতেও তেমন লাভ হচ্ছে না। ২০১৯ সালে জাকির ভাই সৌদির খেজুর লাগালে এলাকার লোকজন তাকে পাগল বলেছিল। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পেরেছি ঘেরের পাড় উচু করে সৌদি খেজুর রোপণ করে নিজেকে সাবলম্বী করা সম্ভব।

 

 

সদর উপজেলার ঘের মালিক ও চাষী আলামিন খান সুমন বলেন, আইনজীবী জাকির ভাইর ঘেরে ঘুরতে গিয়ে সৌদি খেজুেরর চাষ দেখে আমার ঘেরেও কয়েকটি চারা রোপণ করেছি। চারাগুলো বড় হয়েছে। যদি ভালো ফলন পাই ভবিষ্যতে আরও চারা রোপণ করবো।

 

 

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফসল। জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি এই খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। তবে খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকবে কি না তা এখনি বলা যাচ্ছে না। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তবে লবণাক্ত পানির এলাকার জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। সৌদির খেজুর চাষের এই উদ্যোগকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

 

তথ্যসূত্রঃ আমাদের সময়