গরুর জন্য মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী ঘর নির্মাণে ২২ টি গোপন টিপস

গরুর জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক গরুর ঘর নির্মাণ ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই গরু সুস্থ্য থাকবে ও খামার থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন অর্জণ করা সম্ভব হবে।

 

 

গরুর ঘর নির্মাণ করতে জানা অর্থ কিভাবে আপনি নিজের নির্দিষ্ট টাকা ও জায়গা দিয়ে গরুর জন্য সর্বোচ্চ আরামদায়ক সেডের ব্যবস্থা করবেন।গরুর ঘর নির্মাণ এর জন্য উঁচু সমতল ভূমি যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না এবং পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থ্যা আছে এমন স্থ্যান নির্বাচন করতে হবে।

 

 

আপনাদের করা ৮টি প্রশ্নে উত্তর দেওয়া হবে খামারিয়ান এর এই আলোচনার পর্বে। প্রশ্নগুলো হলো:-

 

গরুর ঘর নির্মাণ পদ্ধতি কেমন হবে?
কম খরচে গরুর ঘর নির্মাণ এর পদ্ধতি কি?

গরুর ঘর করার নিয়ম কি?
গরুর ঘর তৈরির নিয়ম কি?

গরু ঘর নির্মাণ কিভাবে করতে হবে?
আদর্শ গরুর ঘর বানাব কেমনে?

গরুর ঘর কেমন হয়ে উচিত?
গরুর ঘর তৈরি করতে কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়?

 

 

উল্লিখিত সকল প্রশ্নে উত্তর ২২ টি পয়েন্টের মাধ্যমে নিচে দেওয়া হয়েছে।

গরুর ঘর নির্মাণ এর সময় ৩টি বিষয় মাথায় রাখতে হবেঃ
(১) গাভীর স্বাস্থ্য ও আরাম,

(২) সহজ প্রাপ্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার,

(৩) উপযুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত নিয়মাবলী পালন করার সুবিধা।

 

 

গরুর ঘর নির্মাণ এর ২২টি নিয়মঃ

(১) ঘর সাধারণত পূর্ব-পশ্চিম লম্বা ও উত্তর-দক্ষিণ দিক আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।গোয়লঘর সাধারণত দক্ষিণমূখী হওয়া ভাল

(২) গরুর ঘর নির্মান করলে সমতল ভূমি থেকে এক ফুট উঁচু ও সবসময় শুকনা থাকে এমন ভাবে করতে হবে।

(৩) ঘরের মেঝে সামান্য ঢালু রাখতে হবে যাতে গরুর মল মূত্র ঢালু হয়ে ড্রেনে চলে যায়। মেঝে হালকা ঢালু থাকবে যাতে সহজেই গরুর চানা কিনারে চলে যায় এবং ঘর শুকনো থাকে।

(৪) এক চালা ঘরের উচ্চতা সধারণত ৮-১০ ফুট এবং দু’চালা ঘরে মধ্যবর্তী উভয় চালের শীর্ষদেশ ১৪ ফুট এবং ঢালু অংশের উচ্চতা ৭ ফুট হওয়া প্রয়োজন।

(৫) ঘরের চাল এসবেসটস দ্বারা নির্মাণ করা হলে ভাল হয়, এতে ঘর শীত/গরম উভয় ক্ষেত্র গরুর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হবে।

(৬) ঘরের ভিতরে একটি বয়স্ক গরুর জন্য অন্তত ৩ ফুট প্রস্থ ও ৫ ফুট দৈর্ঘ্য জায়গা প্রয়োজন। তার সাথে মানুষ চলাচলের জন্য জন্য ২ ফুট এবং ড্রেনের জন্য ১ ফুট প্রশস্ত জায়গা লাগবে। অর্থ্যাৎ একটি গরুর জন্য ৩ ফিট চওড়া ও ৫ ফিট লম্বা জায়গা রাখতে হবে। জায়গা বশি হলে আরো ভালো।

(৭) ৪/৫ টি গরু হলে এক সারিতে রাখার ব্যবস্থ্যা করা যেতে পারে। এজন্য একচালা একটি ঘরই যথেষ্ট। মানে গরুর সংখ্যা কম হলে এক সারি বিশিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে এবং গরুর সংখ্যা বেশি হলে দুই সারি বিশিষ্ট গোয়াল ঘর তৈরি করতে হবে।

(৮) ৮/১০ বা অধিক গরু হলে দু’চালা ঘর নির্মাণ করতে হবে এবং গরুকে ঘরে দুই সারিতে রাখার ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

(৯) উভয় সারির গরুর সম্মুখে খাদ্য দেয়ার জন্য কমন খাবার পাত্র/ম্যানজার থাকবে। এ ক্ষেত্রে উভয় সারির গরুর পিছনের ভাগ বহির্মুখী এবং সামনের ভাগ অন্তর্মুখী হবে।

(১০) সংকর জাতের গরু অধিক গরমে কাতর, তাই গোয়ালঘর শীতল রাখার জন্য ঘরে সিলিং, উত্তর-দক্ষিণে খোলা, আলো-বাতাস পূর্ণ এবং প্রয়োজনে ফ্যান এর ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

(১১) শীতকালে প্রয়োজনে গরুর গায়ে ছালার ব্যবস্থ্যা ও মেঝেতে শুকনো খরের বিছানা করতে হবে। ∙ সম্ভব হলে বাছুর গরুর জন্য পৃথক বাসস্থ্যানের ব্যবস্থ্যা করতে হবে। অর্থ্যাৎ শীত কালে গরুর যাতে শীত কম লাগে সে জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(১২) বাসস্থ্যান নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘর যাতে সহজে পরিষ্কার করা যায় সেদিকে লক্ষ রাকতে হবে।

(১৩) গরুর ঘর নির্মাণ এর সময় চালার উচ্চতা সর্বোনিম্ন ৮ ফিট রাখতে হবে। এর বেশি হলে ভালো হয়।

(১৪) ঘরের চাল বা টিনের নিচে তাপ রোধক এসবেসটস ব্যবহার করলে ভালো হয়। যদিও এত করে গরুর ঘর নির্মাণ এর খরচটা একটু বাড়তে পারে তবুও এর ফলে গরু আরামে থাকবে। আর গরু যত আরামে থাকবে স্বাস্থ্যও তত বাড়বে।

(১৫) গরুকে খাদ্য ও পানি পান করানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে।

(১৬) ঘর যেন সবসময় ভেজা না থাকে সেব্যবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে।

(১৭) রাখাল বা মানুষ বা নিজের জন্য যাতাওয়াত ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে।

(১৮) গরুর ঘর নির্মাণ এর ডিজাইনটি এমন হতে হবে যাতে গরু সহজে ঘরে ঢুকানো ও বের করা যায়।

(১৯) খামারে ঘরের মেঝে ঢালু দিতে হবে যাতে গোবর ময়লা সহজেই ড্রেনে চলে যায়। মাঝের রাস্তার স্লোপ বা ঢালু মাঝখান থেকে দুই দিকে যাবে। এতে পানি দু দিকে চলে যাবে। মেঝের ঢাল সামনে থেকে ড্রেনের দিকে গাভীর ক্ষেত্রে প্রতি ফিট এর জন্য ০.২৫ ইঞ্চি এবং ষাড় গরুর জন্য ০.৫০ ইঞ্চি করে দিতে হবে। ফলে ৮ ইঞ্চির জন্য গাভির ক্ষেত্রে ২-৩ ইঞ্চি এবং ষাড় গরুর ক্ষেত্রে ৪-৫ ইঞ্চি ঢাল দিতে হবে।

(২০) গাভির চেয়ে ষাড় গরুর ঘর নির্মাণ করতে ঢাল বেশি দেবার যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে পেছনে বেশি ঢালু থাকলে পেছনে মাংস তারাতারি বাড়ে। কিন্তু এটি সাইন্টিফিক কিনা জানি না।

(২১) গরু স্বাভাবিক ভাবে মাঠে নিচে থেকে ঘাস খায়। এটাই তার স্বভাব। তাই খাবার জায়গা উচা করে দেওয়া অর্থ তার স্বভাবের বিরুদ্ধে কাজ করা। এছাড়া মুখ নিচের দিকে থাকার কারনে মুখ দিয়ে যথেস্ট লালা আসে যা খাবারের হজমে সহায়ক। অথচ খাবার স্থান উচা করে দিলে যথেস্ট পরিমান লালা আসে না।আলাদা খাবার ও পানির পাত্র করতে ব্যাপক পরিমান খরচ হয়, অথচ এই খরচের কোন প্রয়োজন ছিল না।

(২২) গরুর ঘর নির্মাণ করার জন্য খোলামেলা উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি, একটি গরুর জন্য মাপ হতে হবে কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট। ভিটায় ১ ফুট মাটি উঁচু করে এর ওপর ১ ফুট বালু দিয়ে ইট বিছিয়ে মেঝে মসৃণ করার জন্য সিমেন্ট, বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে। গরুর সামনের দিকে চাড়ি এবং পেছনের দিকে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে ওপরে ধারি অথবা খড় ও পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে, ঘরের পাশে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি দাঁড়ানো গরুকে বাঁশ দিয়ে আলাদা করতে হবে যাতে একে অন্যকে গুঁতা মারতে না পারে। ঘরের চারপাশ চটের পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডার সময় ব্যবহার করা যায়।

 

সর্বপরি, গরুর ঘর নির্মাণ এর উপরে উল্লিখিত সমল নিয়ম মেনে গরুর ঘর নির্মাণ করতে হবে।

ধন্যবাদ খামারিয়ানের সাথে থাকার জন্য। আশা করি আপনারা গরুর ঘর নির্মাণ বিষয়ক আপনাদের মনের ভেতরে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছেন। এছাড়ও যদি আরও কোন পশ্ন বাকি থেকে থাকে এবং কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই পোষ্টটি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন সঙ্গে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক করতে ভুলবেন না।

 

 

যে সকল দর্শক আমাদের চ্যানেলের নতুন যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে আরও জানতে চান তারা খামারিয়ান.কম এ নিয়মিত ভিজিট করবেন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকেও সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন আমাদের ভিডিও নোটিফিকেশন গুলো সবার আগে পেতে হলে সঙ্গে বেল আইকনটি দাবিয়ে রাখবেন। আমাদের আজকের এই আলোচনা এখানেই শেষ করে দিচ্ছে সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন খামারিয়ান এর সাথেই থাকুন।

 

তথ্যসূত্রঃ খামারিয়ান