মাত্র তিনটি গাভি দিয়ে শুরু, এখন ৭৫টি গরু নিয়ে ইব্রাহীমের খামার

ইব্রাহীম খলিল দেশের মাটিতে তিনি এখন গরু পালনের তরুণ এক উদ্যোক্তা। আজ থেকে দুই বছর আগে নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে মাত্র ৩টি গাভি দিয়ে শুরু করেছিলেন ছোট পরিসরের একটি খামার। পরে খামার করার প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে স্ত্রী শারমিন আক্তারের উৎসাহ উদ্দীপনায় এগিয়ে যেতে থাকেন ইব্রাহীম।

 

 

শ্বশুরের চাকরির পেনশনের ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কেনেন দেশি ও উন্নত প্রজাতিসহ বিভিন্ন জাতের ছোট বড় ২৩টি গরু। আজ তার খামারে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৭৫টি গরু রয়েছে। আসছে কোরবানীর ঈদে প্রায় দেড় কোটি টাকার গরু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পুরোদমে চলছে গরুর পরিচর্যা।

 

 

খামারি ইব্রাহিম গরু বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রির জন্য বিভিন্ন ডেইরি বিক্রয় কেন্দ্রে আবেদন করেছেন। তাদের কাছে গরুর ছবি পাঠিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। ঈদের আগে গরু ক্রয়কারীর বাড়িতেও পৌছে দেয়ার সুবিধা রেখেছেন তিনি।

 

 

কুমিল্লার দেবিদ্বারে সুলতানপুর ইউপির রাধানগর গ্রামে সুমাইয়া অ্যান্ড খালিদ এগ্রো ফার্ম নামে নিজের উদ্যোগে তিনি গড়ে তুলেছেন ডেইরি ফার্ম। কুমিল্লা ইপিজেটে একটি কোম্পানীতে চাকরির পাশাপাশি তিনি এ খামারটি দেখাশোনা করেন। তার পুরো খামারটি সিসি ক্যামরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।তিনি অফিসে বসেও খামারের দেখাশুনা করেন। এছাড়া তার খামারে ৪৫ হাজার টাকা বেতন দিয়ে তিনজন শ্রমিক রেখেছেন যারা নিয়মিত গরুর খাবার দেয়ার পাশপাশি বর্জ্য-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।

 

 

গরু চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য একজন চিকিৎসকও নিয়মিত আসেন এ খামারে। তার খামারে শাহীওয়াল ক্রস ও শাহীওয়াল জাতের দু’টি গরু রয়েছে যার প্রতিটির বাজার মূল্য ৭/৮ লাখ টাকা করে। এছাড়া এ খামারে ৭০/৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছয় লাখ টাকার মূল্যের গরু রয়েছে।

 

 

ইব্রাহীম খলিল গাভী পালনের পাশাপাশি তার ফার্মের পার্শ্ববর্তী স্থানে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করেছেন। এ গ্যাস দিয়ে নিজ পরিবারের রান্নার কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আরো ৫টি পরিবারকে মাসিক এক হাজার টাকা হারে গ্যাস সরবরাহ করছেন। এছাড়া তার খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। পাইকারি দামে প্রতি লিটার ৫০ টাকা এবং খুচরা দামে প্রতি লিটার ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন।

 

 

১২ শতাংশ জায়গায় তার খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে জানিয়ে ইব্রাহীম বলেন, ১৮০ শতাংশ জমিতে তিনি গরুর জন্য জামার্নি জাতের ঘাষ চাষ করেন। এছাড়া গরুর খাবারে তিনি যোগ করেন খইল, ভূষি, ইডিমেস, চিটাগুড়, খর ইত্যাদি।

 

 

খামারী ইব্রাহীম আরো জানান, তিনটি গরু দিয়ে খামার শুরুর স্বপ্নটা এখন কোটি টাকারও বেশি স্বপ্নতে গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে তার খামারে ৮টি দেশী, ৮টি ইন্ডিয়ান, ৪টি অস্টিলিয়ান, শাহীওয়াল ক্রস ও দেশি ষাড় ২টি করে ৪টিসহ আরো বিভিন্ন জাতের ছোট বড় প্রায় ৭৫টি গরু রয়েছে। যার বাজার মূল্য বর্তমানে দেড় কোটি টাকারও বেশি।

 

 

গত বছর কোরবানীর ঈদে তিনি খামার থেকে মোটা তাজা ৭৮টি, ১১টি গাভী, ১৩টি বাছুর বিক্রি করেছেন প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা। ইব্রাহীম আরো বলেন, খামারের শুরু ছিল পদে পদে নানা প্রতিকূলতা। তবে ধৈর্য আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সব বাঁধা মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়েছি। সফল জীবন গড়ার এ লড়াইয়ে পাশে ছিলেন আমার স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং শ্বশুর (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) মো. শহীদুর রহমান ভূঁইয়া।

 

 

খামারী ইব্রাহীম খলিল জানান, ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর একটি সফল খামারী হওয়ার স্বপ্ন দেখে রাজশাহীর সিটি হাট থেকে ২৩টি গরু কিনেছিলাম। পরে গরু বোঝাই ট্রাকটি যখন ভোরে নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জে এসে পৌঁছে আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাকবোঝাই ২৩টি গরু ছিনতাই করা হয়। তখন সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশের পর তাদের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশ আমার ২৩টি গরু উদ্ধার করে দেন। গরুগুলো ফেরত পেয়ে আবার শুরু করি ডেইরি ফার্মের কাজ। এরপর আমাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

 

 

ইব্রাহীম খলিল খামারের সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথাও জানিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনায় বিপর্যস্ত সারাদেশ। মানুষের আয়-ইনকামের পথ অনেকটাই বন্ধ। আমি খুব শংকিত গরুর বাজার দর নিয়ে। এবারের গরু বাজারে যদি ধস নামে তাহলে আমার অনেক টাকার লোকসানও গুনতে হবে। ব্যাংক বা সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পেলে তার খামারের পরিধি আরো বড় করতে চান।

 

 

ইউএনও রাকিব হাসান বলেন, দেশে তরুণদের মধ্যে এসব খামারীরা স্বপ্ন জাগিয়েছেন। তারা এখন চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। ইব্রাহীম একজন সফল খামারী, তার খামারের পরিধি আরো বাড়াতে উপজেলা প্রশাসন যেকোনো সহযোগিতা করবে।

 

 

তথ্যসূত্রঃ  ডেইলি বাংলাদেশ