লাভজনক উপায়ে পাঙ্গাস মাছের মিশ্র চাষ সম্পর্কে মৎস্য চাষিদের সঠিক ধারণা থাকা দরকার। বর্তমানে অনেকেই পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছেন। পুকুরে চাষ হওয়া মাছগুলোর মধ্যে পাঙ্গাস মাছ অন্যতম। এই মাছ চাষ করে কম সময়ে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। চলুন আজকে জানবো লাভজনক উপায়ে পাঙ্গাস মাছের মিশ্র চাষ সম্পর্কে-
লাভজনক উপায়ে পাঙ্গাস মাছের মিশ্র চাষঃ
পুকুর প্রস্তুত করাঃ
চাষের পুকুর অবশ্যই ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
পুকুর শুকানোর পর চুন প্রয়োগ করতে হবে শতকে এক কেজি হারে।
পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থেকে যায়, তবে চুন কাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
পুকুরে যদি ইতোপূর্বে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তবে চুনের পাশাপাশি শতকে ৫০০ গ্রাম হারে পটাশ সার দিতে হবে।
পুকুরে চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা এক মিটার হওয়া উত্তম। পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেয়া যাবে না।
পোনার মজুদঃ
পোনা মজুদের জন্য বিশ্বস্ত খামার থেকে ভালো মানের পাংগাস (১৮-২০ সেমি), তেলাপিয়া (৬-৮ সেমি) এবং শিং মাছের (৭-৮ সেমি) পোনা সংগ্রহ করতে হবে। সাথে কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়তে হবে ১৪-১৬ সেমি আকারের।
এ আকারের পোনা পাওয়া নিশ্চিত করা এবং চাষে অধিক লাভবান হবার জন্য ধানি পোনা সংগ্রহ করে নিজস্ব পুকুরে উপযুক্ত আকার পর্যন্ত বড় করে নিতে হবে।
খাদ্য প্রদানঃ
মাছ যে পরিমাণ খাবার খেতে পারে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন সময়মত নির্ধারিত স্থানে প্রদান করা। সে উদ্দেশ্যে পোনা ছাড়ার পর হতে নিয়মিতভাবে দিনে দুবার মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ১০-৩ ভাগ হারে খাদ্য দিতে হবে।
খাদ্যে আমিষের ভাগ ৩০% হতে হবে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বাণিজ্যিক খাবার ব্যবহার করতে হবে। খাদ্য প্রয়োগের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছ সবটুকু খাবার খেয়ে ফেলে। কারণ অভুক্ত খাদ্য পচে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। খাদ্যের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ফিড ট্রে পদ্ধতি উত্তম।
এক একর পুকুরে ১ মি. × ১ মি. মাপের ২০টি ট্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। ট্রেসমূহ পানি থেকে ০.৫ মি. গভীরতায় ঝুলিয়ে দিতে হবে। বাঁশের চাটাই দ্বারা মাচা তৈরি করেও তার উপর খাবার দেয়া যেতে পারে। খাবার দেবার ১ ঘন্টা পরে ফিড ট্রে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে মাছ সব খাবার খাচ্ছে কি
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
১। তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণের জন্য ২-৩ দিন পর পর দুপুরের সময় পানিতে নেমে অথবা হররা টেনে পানির তলদেশ আলোড়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
২। পুকুরের পানির পরিবেশ ভালো রাখার জন্য পানি আংশিক পরিবর্তন করতে হবে এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন ও খাদ্য লবণ একত্রে বা পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার