কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে সামুদ্রিক শৈবাল উত্পাদনের দারুণ এক সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন নিভৃত পল্লীর সাত উদ্যোক্তা। এই সাত তরুণ কৃত্রিমভাবে সামুদ্রিক শৈবাল (স্পিরুলিনা) উত্পাদনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় অধিক লাভের আশাও করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে এরশাদ হোসেনের বাড়ির উঠানে মাত্র ৩ শতক জমিতে তৈরি করেছেন স্বপ্নের ‘গ্রিনহাউজ’। ‘ফুলবাড়ী এগ্রো’ নামের একটি সংগঠন খুলে নিজেদের সু-প্রতিষ্ঠিত করতে সমাজ-সেবাসহ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণরা। উদ্যোমী এই সাত তরুণ উদ্যোক্তারা হলেন, সেলিম রেজা, এরশাদ হোসেন, গোলাম ওয়াদুদ, জাকির সরকার, হাসান বাপ্পী, মাসুদ রানা, ফাতেমা আক্তার মিতু।
সেলিম রেজা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ প ম জামাল উদ্দিনের থেকে সামুদ্রিক শৈবাল (স্পিরুলিনা) চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে বাকিদের এর চাষ কৌশল শেখান। গ্রিনহাউজের ভেতরে দুটি হাউজে ২৪ হাজার লিটার পানিতে সেই স্বপ্নের স্পিরুলিনা চাষ করা শুরু করেছেন তারা। দুই হাউজেই অক্সিজেন সরবরাহ চলছে অনবরত। পাম্পের সাহায্যে হাউজের মধ্যে পানি তুলে ছাকনি দিয়ে হারভেস্টিং পদ্ধতিতে শৈবালগুলো আলাদা করা হচ্ছে।
এই স্পিরুলিনা নামটি অধিকাংশ মানুষের কাছে অপরিচিত। স্পিরুলিনা হলো সাইনো ব্যাকটেরিয়া। এটি অতি ক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ শৈবাল, যা সূর্যালোকের মাধ্যমে মানবদেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উত্পাদন করে থাকে। বাংলাদেশে স্পিরুলিনাকে ‘গ্রিন ডায়মন্ড’ বলা হয়ে থাকে।
প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য এই খাবারটি অনেকে সামুদ্রিক শৈবাল হিসেবেই চেনেন। শক্তিবর্ধক এই সম্পূরক খাদ্যটি বর্তমানে কৃত্রিম জলাধারে বাণিজ্যিকভাবেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় উত্পাদন হচ্ছে। পুষ্টিহীনতা ছাড়াও রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিস ও কান্তি দূরীকরণে বেশ উপকারী।
উদ্যোক্তা এরশাদ হোসেন ও জাকির সরকার জানান, গ্রিনহাউজ তৈরি করে মার্চ মাসের ১১ তারিখে স্পিরুলিনার মাদার কালচার ছাড়া হয়েছে। প্রতি কেজি মাদার কালচার সরবরাহ করতে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমরা গত এক বছরের জন্য মেডিসিন ক্রয় করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।
সব মিলে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। এরই মধ্যে গত ৫ এপ্রিল থেকে স্পিরুলিনার আহরণ শুরু হয়েছে। প্রতি হাজার লিটারে সপ্তাহে গড়ে ১ কেজি করে পিওর সামুদ্রিক শৈবাল (স্পিরুলিনা) উত্পাদন হচ্ছে। আমরা বর্তমানে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মূল্যে প্রতি কেজি স্পিরুলিনা পাইকারি ভাবে বাজারজাত করতে পারবো বলে আশা করছি।
সংগঠনটির পরিচালক সেলিম রেজা ও উদ্যোক্তা মাসুদ রানা জানান, স্পিরুলিনার চাহিদা মেটাতে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বাইরের দেশ থেকে স্পিরুলিনা আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে স্পিরুলিনার চাষ হলে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। স্পিরুলিনা উত্পাদন করে প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ জানান, এই ৭ তরুণ উদ্যোক্তা স্পিরুলিনার উত্পাদন শুরু করায় উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই প্রথম স্পিরুলিনা চাষ করায় অনেকেই এক নজর দেখার জন্য ছুটছেন ওই সাত তরুন উদ্যোক্তার পাশে। উপজেলা কৃষিবিভাগ সাত তরুণ উদ্যোক্তার পাশে থাকবে।
স্পিরুলিনা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। প্রচুর ভিটামিন, লৌহ ও নীলাভ সবুজ রঙ থাকার কারণে স্পিরুলিনায় রয়েছে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধের উপাদান। সাধারণ খাদ্য হিসেবে ও নানা রোগ নিরাময়ে মূল্যবান ভেষজ হিসেবে দেশে-বিদেশে স্পিরুলিনার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক