কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করবেন পানি কচু

পানি কচু একটি পুষ্টিকর ও উপকারী সবজি। বাংলাদেশের সর্বত্র পানি কচুর চাষ করা যায়, এরা দাড়ানো পানি সহ্য করতে পারে।

 

 

উপযোগী মাটি : মাঝারি নিচু থেকে উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি সহজেই ধরে রাখা যায় অথবা জমে থাকে এমন জমি পানি কচু চাষের জন্য উপযোগী, পলি দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পানি কচু চাষের জন্য উত্তম।

 

 

জাত : লতিরাজ (উফশী) ও জয়পুরহাটের স্থানীয় জাত পানি কচুর জন্য উত্তম জাত।

 

 

রোপণের সময় : আগাম ফসলের জন্য কার্তিক এবং নাবী ফসলের জন্য মধ্যম ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখে কচু লাগানো যায়।

 

 

রোপণের দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪৫ সেমি.।

 

 

কচু রোপণের নিয়ম : পূর্ণ বয়স্ক কচুর গোড়া থেকে ছোট ছোট চারা উৎপন্ন হয়। এসব চারার মধ্যে সতেজ চারা পানি কচু চাষের জন্য ‘বীজ চারা’ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। পানি কচুর চারা কম বয়সের হতে হবে, ৪-৬টি পাতাসহ সহেজ সাকার বীজ চারা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে, চারা রোপণের সময় উপরের ২/১টি পাতা বাদ দিয়ে বাকি সব পাতা ও পুরানো শিকড় কেটে ফেলতে হবে। চারা তোলার পর রোপণের দেরী হলে চারা ভিজামাটি ও ছায়ামুক্ত স্থানে রাখতে হবে। মাটি থকথকে কাদাময় করে তৈরির পর নির্ধারিত দূরত্বে ৫-৬ সেমি. গভীরে চারা রোপণ করতে হবে।

 

 

সার প্রয়োগ পদ্ধতি : গোবর, টিএসপি, এমওপি সার চারা রোপণের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার ২/৩ কিস্তিতে দিতে হবে। তবে ১ম কিস্তি রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যেই প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা : পানি কচুর গোড়ায় সব সময় পানি জমিয়ে রাখতে হবে এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়াচারা করে দিতে হবে। চারা বাড়-বাড়তির জন্য মাঝে মাঝে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। আবার নির্দিষ্ট মাত্রায় পানি দিতে হবে। দেওয়া পানি সরানো যদি ৩/৪ বার করা যায় তবে পানি কচুর ফাল্গুটি সঠিকভাবে লম্বা ও মোটা হয়।

 

 

গোড়ার চারা সরানো : কাণ্ডের গোড়ায় যে সকল চারা হবে সেগুলি তুলে ফেলতে হবে। চারা হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাটির নিচের অংশ থেকে যে সব চারা আসবে তা থেকে ২/৩টি চারা রেখে বাকি চারা কেটে দিতে হবে।

 

 

পোকা দমন : ছোট ও কালচে লেদাপোকা পাতা খেয়ে ফেলে। এসব পোকা প্রথমত হাত দিয়ে মেরে ফেরতে হবে, সংখ্যা বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

 

 

রোগবালাই : কচুর পাতায় মড়ক রোগ হলে পাতার উপর বেগুনী বা বাদামী রঙের গোলাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এসব দাগ আকারে বেড়ে একত্রিত হয়ে পাতা ঝলসে যায়। পরে তা কচু ও কন্দে আক্রমণ করে। বেশি আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রিডোমিন বা ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার ¯েপ্র করতে হবে।

 

 

ফলন সংগ্রহ : চারা রোপণের ৪৫-৭৫ দিনের মধ্যেই কচুর লতি তোলা হয়। ১০-১৫ দিন পরপর লতি তোলা যায়। চারা রোপণের ১৪০-১৮০ দিনের মধ্যে পানি কচু সংগ্রহ করা যায়। গাছের উপরের কয়েকটি পাতা রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলে কাণ্ডটি পরিষ্কার করে বাজারজাত করতে হবে।

 

 

ফলন : লতি : ১.৫-২ টন/বিঘা, পাতাকচু: ৩-৫ টন।

 

তথ্যসূত্রঃ কৃষি উদ্যোক্তা