সিঙ্গাপুরফেরত সোহাগের সাফল্য ব্লাক রাইস চাষে, প্রতি কেজি চালের দাম ৫০০ টাকা

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কামার পাড়া ইউনিয়নে ব্লাক রাইস (কালো ধান) ধান চাষ হচ্ছে। সিঙ্গাপুর ফেরত রেজওয়ানুল সরকার সোহাগ নামের এক যুবক এই ব্লাক রাইস চাষ করছেন।

 

 

৩০ জুলাই জমিতে চারা রোপণ করা এই ধান আসছে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘরে তোলা যাবে। অথচ ব্লাক রাইস ধানক্ষেতে থাকতেই বীজ হিসেবে ক্রয়ের জন্য খানসামার কৃষকদের সাড়া পড়ে গেছে। রীতিমত খানাসামা উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

রেজওয়ানুল সরকার সোহাগ চলতি মৌসুমে ৫২ শতক জমিতে এই ব্লাক রাইস চাষ করছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কিছুই জানে বলে জানিয়েছে।

 

 

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৪ নং খামার পাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া আদিবাসি স্কুলের পাশে এই ধানের চাষ করেছেন তিনি। রেজওয়ানুল সরকার সোহাগ খানসামা উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত জোনাব আলী সরকারের ছেলে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন সিঙ্গাপুরে। দেশে আসার পর তার বাবা মারা যান। এরপর আর সিঙ্গাপুর ফিরে যাওয়া হয়নি তার।

 

 

সোহাগ বলেন, সিঙ্গাপুরে আমি দেখেছি সেখানকার মানুষ, বিশেষ করে চীনের মানুষ ব্লাক রাইস বেশি দামে কিনে খেত। আমারা ৫ কেজি সাধারণ চাল কিনতাম ১২ থেকে ১৬ ডলারে, আর তারা ৫ কেজি ব্লাক রাইস কিনত ২০ ডলারে। তারা বলত ব্লাক রাইস শরীরে চর্বি জমতে দেয় না ধীরে ধীরে হজম হয়। এ কারণে খুদা কম লাগে। দেশে ফিরে আসার পর এখন বাবার রেখে যাওয়া জমি জমা দেখাশোনা ও চাষবাস করি।

 

 

এক বন্ধুর মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে এর বীজ সংগ্রহ করে বাড়িতে পরিবার নিয়ে খাওয়ার জন্য এবং উৎপাদন কেমন হয় তা জানার জন্য এই প্রথম ব্লাক রাইসের চাষ করছি। এই ধান একরে ৩৫ মণ পর্যন্ত হতে পারে। দাম যদি ভালো পাওয়া যায় এবং চাহিদা যদি থাকে তাহলে আগামীতে ব্লাক রাইসের চাষ আরো বৃদ্ধি করব।

 

 

সোহাগ জানান, ব্লাক রাইসের উপরে প্রামাণ্য চিত্র দেখে তিনি জেনেছেন কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। তাই কালো চাল উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন। অনেকে বিদেশ থেকে বেশি দামে চাল কিনে খায়।

 

 

ঢাকায়ও বিদেশি কোম্পানিগুলো এই চাল হাজার টাকায় কেজি বিক্রি করলেও স্থানীয়ভাবে তিনি প্রতি কেজি কমপক্ষে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান সোহাগ। এ চালের উৎপাদন সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করছেন।

 

 

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোহাগ তার আদিবাসী স্কুল সংলগ্ন নিজের জমিতে কালো চালের সুবজ পাতায় বেগুনি শীষের ধানের গাছগুলো পরিচর্যা করছেন। ধানের শীষও সাধারণ ধানের চেয়ে বড়। অন্যান্য আর সাধারণ ধানের মতোই পরিচর্যা করতে হয় এই ধানের। অতিরিক্ত কোনো কিছুই করতে হয় না। ব্লাক রাইসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং বাংলাদেশে চাষের উপযোগী।

 

 

তিনি আরো জানান, কালো চাল দেখতে যেমন কালো, এ চালের ভাতও কালো এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, সুগন্ধযুক্ত দামি ও স্বাস্থ্যকর এ কালো চাল সারা পৃথিবীতে খুবই সমাদৃত।

 

 

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায়ের কাছে ব্লাক রাইস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্লাক রাইস সম্পর্কে জানিনা বা আমার জানামতে খানসামা উপজেলায় কেউ ব্লাক রাইস ধান রোপণ করেননি।

 

তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪