আধুনিক উপায়ে হাঁস পালন করে আয় করুন লক্ষাধিক টাকা

হাঁস পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা যেগুলো রয়েছে সেগুলো খামারিদের সঠিকভাবে জেনে রাখতে হবে। অধিক লাভজনক হওয়ার কারণে বর্তমানে অনেকেই হাঁস পালনে ঝুঁকছেন। আজকের এ লেখায় চলুন আমরা জেনে নিব হাঁস পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে-

 

 

হাঁস পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনাঃ
হাঁস পালন করার উপকারি দিকঃ

 

 

হাঁসের ডিম ও মাংস বিক্রি করে পরিবারে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
হাঁসের ডিম ও মাংস প্রাণীজ আমিষের অন্যতম উৎস।

 

 

হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে চলতে পারে।
হাঁসের বিষ্ঠা ভালোমানের জৈব সার।

 

 

হাঁস ও মাছের চাষ এক সাথে করা যায়।
হাঁস হাওর-বিল, ডোবা-নালা ও ধানের জমিতে নিজেরা চরিয়ে খেতে পারে। এর ফলে হাঁসের প্রাকৃতিক খাবারের অভাব হয় না।

 

 

হাঁসের জাত নির্বাচনঃ

দেশি হাঁসঃ

দেশি হাঁস আকারে ছোট এবং ডিমও কম দেয়। এদের মধ্যে রয়েছে নাগেশ্বরী, মাটি হাঁস, সাদা হাঁস ও রাজ হাঁস।

 

 

উন্নত হাঁসঃ

খাকি ক্যাম্পবেল, চেরীভেলী, জিংডিং হাঁস ও ইন্ডিয়ান রানার ডিমের জন্য ভালো। খাকি ক্যাম্পবেল ও চেরীভেলী বছরে ভালো পরিবেশে ২৫০-৩৫০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। মাংসের জন্য পোকিন, মাস্কভি ও সাদা পিকিং ভালো। এরা বছরে ৮০-১২০টি ডিম দেয়। এদের মাংস বেশ সুস্বাদু।

 

 

হাঁসের বাসস্থান নির্বাচনে বিবেচ্যঃ

খোলামেলা ও নিরিবিলি পরিবেশ হতে হবে।
পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

 

উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেন বন্যার সময় পানিতে ডুবে না যায়।
বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে।

 

 

পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ভালো যোগাযোগ ব্যবস্হা থাকতে হবে।

 

 

মাংস ও ডিম বাজারজাত করার সুবিধা থাকতে হবে।
চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।

 

 

ঘরের প্রকৃতিঃ

হাঁস পালনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে এদের ঘর বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন- হ্যাচারি ঘর, বাচ্চার ঘর, গ্রোয়ার ঘর, ডিমপাড়া ঘর। যেমন- একচালা বা শেড টাইপ, দোচালা বা গ্যাবল টাইপ (‘অ ’ টাইপ), কম্বিনেশন টাইপ ও মনিটর বা সেমিমনিটর টাইপ।

 

 

ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণুমুক্ত রাখাঃ

ঘরের লিটার পরিস্কার হতে হবে এবং জীবাণুনাশক, যেমন- চুন দিয়ে তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ঘরের দেয়াল-মেঝে ভালমত পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। তবে কস্টিক সোডা দিয়ে পরিষ্কার করলে ভালো হয় । ফিউমিগেশন শুরু করার পূর্বে দরজা, জানালা, ভেন্টিলেটর প্রভৃতি বন্ধ করতে হবে যাতে ঘরে কোনো বাতাস না ঢুকে। ঘরের প্রতি ২.৮ ঘন মিটার জায়গার জন্য ৬ গ্রাম পটাসিয়াম পার-ম্যাঙ্গানেট ও ১২০ মি.লি. ফরমালিন (৪০%) দিয়ে ফিউমিগেট করতে হবে।

 

 

ডিম ফোটানোঃ

হাঁসীর বয়স ৬ মাস হবার আগেই ডিম দিতে পারে। একটি সাধারণ আকারের হাঁসী ১০-১৫টি ডিম নিয়ে ৩০-৩৩ দিন তাপে বসতে পারে। ফোটানোর জন্য ডিম উর্বর কিনা সেটা বাতি দিয়ে দেখতে হবে। ডিমে ১৫ দিন তাপ হলে পরীক্ষা করতে হবে। অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে অথবা টর্চলাইটের মাধ্যমে ডিম পরীক্ষা করতে হবে। ডিম উর্বর হলে সূতার মত পেচানো জাল দেখা যাবে। ডিম অনুর্বর হলে তার কুসুম পরিষ্কার দেখা যাবে এবং কোন ধরণের জাল বা চিহ্ন দেখা যাবে না।

 

 

বাচ্চা পালনঃ

বাচ্চা রাখার ঘর বা শেড অবশ্যই উঁচু জায়গায় নির্মাণ করতে হবে যেন ঘরের ভিটি কোন অবস্হায় ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। ঘরের মেঝে পাকা হলে ভাল হয়। ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে ধানের শুকনো তুষ বা শুকনো কাঠের গুঁড়া মেঝের উপর বিছিয়ে দিতে হবে। মেঝে নিচ থেকে ভিজে উঠতে পারে সেজন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ বার লিটার উল্টিয়ে চুন মিশাতে হবে।

 

 

এতে লিটার শুকনো থাকবে, জীবাণু ধংস হবে এবং দুর্গন্ধ দুর হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো অবস্হাতেই বৃষ্টির পানি ঘরের মেঝের উপর না পরে। কখনও লিটার ভিজে গেলে উহা ফেলে দিতে হবে এবং ড্রিংকার হতে খাবার পানি ঘরের মেঝের উপর না পরে। কখনও লিটার ভিজে গেলে উহা ফেলে দিতে হবে এবং সাথে সাথে শুকনো লিটার দিতে হবে। বাচ্চা সংগ্রহের পর এদেরকে প্রথমে ভিটামিন মিশ্রিত পানি খেতে দিতে হবে।

 

 

তারপর শুকনো খাবার সামান্য পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪ বার বাচ্চাকে খাবার দিতে হবে এবং প্রতি বাচ্চাকে ৫-১০ গ্রাম করে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ছোট বাচ্চার বেলায় খাবার দেবার সময় অবশ্যই পানির পাত্রে আগে পানি দিয়ে রাখতে হবে অর্থাৎ প্রথমে পানি দিয়ে পরে খাবার দিতে হবে নতুবা শুকনো খাবার বাচ্চার গলায় আটকে বাচ্চা মারা যেতে পারে। এক দিন বয়সের বাচ্চার জন্য ব্রুডিং-এর প্রয়োজন রয়েছে। প্রথম সপ্তাহে ঘরের তাপমাত্রা থাকবে ৯৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট, পরবর্তিতে প্রতি সপ্তাহে ৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা করে কমাতে হবে।

 

তথ্যসূত্রঃ আধুনিক কৃষি খামার