ছিলেন পুরোপুরি বেকার। পকেটে ছিল না কোন টাকা। ছিল না পুকুর। কিন্তু বেকারত্ব ঘোচাতে মাছ চাষের আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহ থেকে মাত্র ১৬ শতকের এক টুকরো পুকুর লিজ নিয়ে জেলেদের কাছ থেকে বাকিতে রেণু পোনা কিনে মাছ চাষ শুরু। ৪১ বছর আগের গল্পটা এমন হলেও এখন তিনি ১৬০ বিঘা জমির মালিক। সেখানে রয়েছে ১৩টি পুকুর।
যশোরের মৎস্য চাষী ও উদ্যোক্তা আব্দুল আলিমের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এগুলো। যিনি শূন্য থেকে হয়েছেন কোটিপতি আদর্শবান মৎস্য চাষী। নিজের বেকার জীবনের অভিশাপ ঘোচাতে মাছ চাষ করতে নেমে এখন বড় উদ্যোক্তা। অন্তত ৪০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। যশোর শহরতলীর হরিণার বিল সংলগ্ন কাজীপুর গ্রাম।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম। ৪১ বছর আগে ছিলেন বেকার। পারিবারিক সচ্ছলতা আনতে ও বেকারত্ব ঘোচাতে মাছ চাষের কথা চিন্তা করেন। কিন্তু মাছ চাষের জন্য কোন পুকুর ছিল না। মাত্র এক হাজার টাকা জোগাড় করে ১৬ শতকের ছোট একটি পুকুর লিজ নেন। কিন্তু মাছ কেনার টাকা ছিল না। স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে বাকিতে রেণু পোনা কেনেন। সেই মাছ বড় হলে বিক্রি করে জেলেদের টাকা পরিশোধ করেন। এভাবে মাছ চাষে যুক্ত হওয়া তার।
আব্দুল আলিম জানান, ১৬ শতক ওই পুকুরে মাছ চাষে যে লাভ হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই আস্তে আস্তে পরিধি বাড়তে থাকে। এরপর তিনি মাছের হ্যাচারি করেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মুক্তেশ্বরী ফিশ হ্যাচারি। হ্যাচারিটি ৫০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত। সেখানে মাছের ডিম ফোটানো, রেণু পোনা তৈরি ও বিক্রি করা হয়। এর বাইরে বাড়ি থেকে অদূরে হরিণার বিলে ১৩টি বড় পুকুর রয়েছে। যা ১৩০ বিঘা জমির ওপর তৈরি। প্রতিটি পুকুরে মাছ মোটাতাজাকরণ করেন। এরপর সেগুলো বিক্রি করেন যশোর শহরের বড় মাছবাজার, বসুন্দিয়া, বারোবাজারসহ বিভিন্ন হাটে।
১৩০ বিঘা জমিতে থাকা ১৩টি পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিক ও জেলেরা কেউ মাছ ধরছেন, কেউ মাছের খাবার দিচ্ছেন। কেউ আবার মাছের খাবার তৈরি করছেন। কয়েকজন শ্রমিক আবার এক পুকুর থেকে ছোট মাছ ধরে অন্য পুকুরে দিচ্ছেন। এই পুকুর পাড়ে কথা হয় আব্দুল আলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব জাতের মাছ এক পুকুরে থাকলে ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
এজন্য কাতলা মাছগুলো আলাদা করে বড় করার জন্য পাশের পুকুরে দিচ্ছেন। ২০১৪ সালে তাকে নাটোরে কার্প মাছ মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি দেখাতে নিয়ে যায় একটি এনজিও। সেখান থেকে শিখে এসে তিনি এখন সেই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। ৭ বছর ধরে এভাবে তিনি মাছ চাষ করে ভাল লাভ পাচ্ছেন। মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদনে তার মুক্তেশ্বরী ফিশ হ্যাচারিতে মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী আছেন ২১ জন।
দৈনিক ভিত্তিতে ১০ জন ও অন্যান্যভাবে আরও ৮ থেকে ১০ জন নিয়োজিত রয়েছেন। যেখানে নিজে বেকার ছিলাম, সেখানে আজ ৪০ জনের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি এটাই জীবনের সেরা পাওয়া। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানি উপকেন্দ্র যশোরের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, কাজীপুরের আলিম গত ৭ বছর কার্প মাছ মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে চাষ করছেন। এতে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এই মাছ চাষী এখন যশোরের মডেল।
তথ্যসূত্রঃ গাজীপুর কথা