নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতন প্রধান অর্থকারী ফসল। এটির প্রতিটি অংশই কোন না কোন কাজে লাগে। ভালো ফলন পেতে সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। সঠিক পরিমাণে সার দিতে হবে।
নারিকেল চাষে কেমন মাটি প্রয়োজন?
নারিকেল গাছের জন্যে নিকাশযুক্ত দোআঁশ থেকে বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম।
নারিকেল চারা কখন রোপন করবেন?
জুন মাস(মধ্য জৈষ্ঠ)থেকে সেপ্টেম্বর (মধ্য আশ্বিন) মাস পর্যন্ত চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
নারিকেল গাছে পূর্নাঙ্গ সার ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
নারিকেল গাছের চারা রোপনের পূর্বে গর্ত প্রস্তুত করতে হবে। গর্তের পরিমাপ হবে(১×১× ১ মিটার)।
গর্তে কি কি সার কি পরিমাণে প্রয়োগ করবেন-
গোবর — ৮-১০ কেজি
টি এস পি-২৫০ গ্রাম
এমওপি-৪০০ গ্রাম
জিংক সালফেট-১০০ গ্রাম
বোরন সার-৫০ গ্রাম
নারিকেল গাছ লাগানোর পর থেকে প্রতিবছর নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করবোঃ-
১-৪ বছর বয়সী নারিকেল গাছের জন্যে সারের পরিমাণ;-
গোবর সারঃ-১০ কেজি
ইউরিয়াঃ-২০০ গ্রাম
টিএসপিঃ-১০০ গ্রাম
এমওপিঃ-৪০০ গ্রাম
জিপসামঃ-১০০ গ্রাম
জিংক সালফেটঃ-৪০গ্রাম
বোরিক এসিডঃ-১০ গ্রাম
৫-৭ বছর বয়সী নারিকেল গাছের জন্যে সারের পরিমাণ;
গোবর সারঃ-১৫ কেজি
ইউরিয়াঃ-৪০০গ্রাম
টিএসপিঃ-২০০গ্রাম
এমওপিঃ-৮০০গ্রাম
জিপসামঃ-২০০গ্রাম
জিংক সালফেটঃ-৬০গ্রাম
বোরিক এসিডঃ-১৫ গ্রাম
৮-১০ বছর বয়সী নারিকেল গাছের জন্যে সারের পরিমাণ;
গোবর সারঃ-২০ কেজি
ইউরিয়াঃ-৮০০গ্রাম
টিএসপিঃ-৪০০গ্রাম
এমওপিঃ-১৫০০ গ্রাম
জিপসামঃ-২৫০গ্রাম
জিংক সালফেটঃ-৮০গ্রাম
বোরিক এসিডঃ-২০ গ্রাম
১১-১৫ বছর বয়সী নারিকেল গাছের জন্য সারের পরিমাণ;
গোবর সারঃ-২৫ কেজি
ইউরিয়াঃ-১০০০গ্রাম
টিএসপিঃ-৫০০ গ্রাম
এমওপিঃ-২০০০গ্রাম
জিপসামঃ-৩৫০গ্রাম
জিংক সালফেটঃ-১০০গ্রাম
বোরিক এসিডঃ-=৩০ গ্রাম
১৬-২০ বছর বয়সী নারিকেল গাছের জন্যে সারের পরিমাণ;
গোবর সারঃ-৩০ কেজি
ইউরিয়াঃ-১২০০গ্রাম
টিএসপিঃ-৬০০গ্রাম
এমওপিঃ-২৫০০গ্রাম
জিপসামঃ-৪০০গ্রাম
জিংক সালফেটঃ-১৫০গ্রাম
বোরিক এসিডঃ-৪০গ্রাম
২০ বা তার ঊর্ধ নারিকেল গাছের জন্যে সার প্রয়োগ মাত্রা;
গোবর সারঃ-৪০ কেজি
ইউরিয়াঃ-১৫০০গ্রাম
টিএসপিঃ-৭৫০গ্রাম
এমওপিঃ-৩০০০গ্রাম
জিপসামঃ-৫০০গ্রাম
জিংক সালফেটঃ-২০০গ্রাম
বোরিক এসিডঃ-৫০ গ্রাম
নারিকেল গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ-
যেকোন বয়সের নারিকেল গাছের জন্যে দুই কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।প্রথম কিস্তিতে উপরের উল্লেখিত সারের অর্ধেক পরিমাণ মে মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বাকি অর্ধেক সার সেপ্টেম্বর মাসে গাছের গোড়া থেকে চতুর্দিকে ১ মিটার বাদ দিয়ে ১.০-২.৫ মিটার দূর পর্যন্ত মাটিতে ২০-৩০ সে.মি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।সার দেয়ার পর মাটি কুপিয়ে দিতে হবে।এ সময় মাটিতে রস কম থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।বেশি শুষ্কতা ও বেশি বৃষ্টিপাতের সময় সার প্রয়োগ করা ঠিক হবেনা।
অন্যান্য সারের তুলনায় নারিকেল গাছে পটাশ সারের মাত্রা বেশি লাগে।পটাশ সারের অভাব হলে ফল দেরিতে আসে,ফুল ঝড়ে যায় ও রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
জেনে রাখা ভালোঃ-
একটা সুস্থ নারিকেল গাছের পাতা লম্বায় জাতভেদে ২.৫-৩.৫ মিটার হতে পারে। সুস্থ, সবল একটা গাছের পাতার সংখ্যা ৩০-৪০টা।
পাতাগুলো যত উপরমুখী হবে এবং সংখ্যায় তা যত বেশি হবে,গাছ তত বেশি ফুল-ফল দানে সক্ষম হবে।
ভালো যত্ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় কাণ্ড থেকে প্রতি মাসে একটা করে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পাতা বের হয় এবং সে পাতার গোড়ালি থেকে বয়স্ক গাছে ফুল-ফলের কাঁদি বের হয়।
গাছের কচি পাতা বের হয় আকাশমুখী হয়ে, একবারে খাঁড়াভাবে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাতাগুলো নিচের দিকে হেলে পড়তে থাকে।
পাতা গজানো থেকে আরম্ভ করে পরে তা একেবারে নিচে হেলে পড়ে গাছের কাণ্ডকে স্পর্শ করে। এ পথ পাড়ি দিতে একটা পাতার সময় লাগে প্রায় ৩ বছর। ঘন, সবুজ গজানো পাতাটা শেষ বয়সে হলুদ রঙ ধারণ করে, পরে তা শুকিয়ে যাওয়ার পূর্ব ঘোষণা দেয়।
এ পাতা হলুদ হয়ে শুকানোর আগ পর্যন্ত কোনো মতেই কেটে ফেলা যাবে না। যেহেতু একটা সুস্থ গাছে প্রতি মাসে একটা করে পাতা বের হয় এবং তা প্রায় তিন বছরের মতো বাঁচে সে হিসেব করলে একটা ফলন্ত, সুস্থ, সবল গাছে ৩৫-৪০টা পাতা থাকার কথা। গাছে এ সংখ্যা ২৫টার নিচে থাকলে ধরে নিতে হবে গাছটা খাবার ও যত্নের অভাবে বড় কষ্টে আছে। পাতার সংখ্যা ২০টার নিচে নেমে গেলে গাছে ফুল ফল ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে চলে যাবে।
তথ্যসূত্রঃ ফারমস এন্ড ফারমারস