কেরেলা জাতের আগাম শিম চাষ করে আয় অর্ধ লক্ষ টাকারও বেশি

কেরালা-১ জাতের শিমটি আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের জন্য একটি উপযুক্ত ও উৎকৃষ্টমানের জাত। কারণটা হলো, অল্প গাছে বেশি ফলন, এবং বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়। চারদিকে চৈত্রের রোদ্রের প্রখর খরতাপে যখন প্রায় সকল জাতের শিম গাছের আয়ু শেষ হয়ে যায়, তখন এই কেরালা জাতের শিম গাছ গোড়া থেকেই থোকায় থোকায় ফুল-ফলে নতুন সাজে সজ্জিত হয়। গাছের গোড়া থেকে প্রতি পাতায়, সিম ধরে থোকায় থোকায়।

 

 

জাতের বৈশিষ্ট সমূহঃ

আগাম জাতের সীম
সীমের রং গাঢ়ো সবুজ

 

 

মাংশ পুরু ও সুস্বাদু
রান্না করলে শিম নরম হয়ে যায়

 

 

বাজারে চাহিদা বেশি ও কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি।
এ জাতের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল গাছের গোড়ার প্রথম গিট থেকে শুরু করে প্রত্যেক গিটে সীম ধরে।

 

 

সীমের সাইজ ৬–৭ ইঞ্চি
ফুলের রং সাদা

 

 

রোগ ও পোকার আক্রমন
ভাইরাস মুক্ত
দীর্ঘ দিন ফলন দিতে থাকে।

 

 

কেরালা ১ জাতের সীম চাষের মৌসুমঃ

বারমাসি জাত কেরালা ১ জাতের শিম। তাই এই শিম সারাবছরই চাষ করা যায়। সারা বছর একই রকম ফলন দিয়ে থাকে।

 

 

অতি আগাম চাষের জন্য (বৈশাখ–জৈষ্ঠ মাস) বীজ বপণ করতে হবে।
মধ্যম আগাম চাষের জন্য (আষার মাস) বীজ বপণ করতে হবে।
নাবি আবাদ করলে (ভাদ্র–আশ্বিন মাস) বীজ বপণ করতে হবে।

 

 

জমি প্রস্তুত

যে সকল জমিতে বর্ষার পানি উঠেনা এবং বৃষ্টির পানি জমে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে । বৃষ্টির পানি না জমলে সেই জমিতে উচু করে বেড তৈরি করার দরকার নেই। যদি বৃষ্টির পানি জমে থাকে তাহলে এমন ভাবে বেড তৈরি করতে হবে যাতে সীম গাছের গোড়া পানিতে না ডুবে যায়।

 

 

শিম গাছের মাদার দূরুত্ব

একটা মাদা থেকে আরেকটা মাদার দুরুত্ব হবে ২–৩ হাত এবং লাইন থেকে লাইনের দুরুত্ব হবে ৪.৫ হাত। অথবা প্রতি মাদায় একটি করে গাছ রাখতে চাইলে ২ ফিট পরপর মাদা তৈরি করতে হবে। আর লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব হবে তখন ৩ ফিট।

 

 

শিম গাছের মাদায় সার প্রয়োগ

বেড বা মাদা তৈরি হয়ে গেলে সার প্রয়োগ করতে হবে। বিঘা প্রতি টিএসপি সার-১০ কেজি, এম. ও. পি. সার-৫ কেজি, বোরন সার-২ কেজি, দানাদার বিষ ২ কেজি, জিপসাম-১০ কেজি, সবগুলো সার মিশানোর পরে তৈরিকৃত মাদাতে সমভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীকালে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে।

 

 

বিঘা প্রতি ডিএপি-১০ কেজি, এমওপি-৫ কেজি, বোরন-১ কেজি একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে ৩ থেকে৪ ইঞ্চি দূর দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।

বীজ রোপন

সার প্রয়োগের ১ সপ্তাহ পর মাটি উলটপালট করে দিতে হবে। ১৫-১৬ দিন পরে মাদাতে ৩-৪ টি সীমের বীজ রোপন করতে হবে।

 

 

আন্তপরিচর্যা

চারা বের হওয়ার পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে কেননা এসময় পোকামাকড়ের আক্রমন বেশি হয়। পোকা আক্রান্ত হলে হাতে দমন করতে হবে আক্রমন বেশি হলে রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। পোকামাকড়ের প্রকার ভেদে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

 

 

কেরালা শিমের মাচা তৈরি

সীমের গাছের লতাকে বিছিয়ে দেওয়ার জন্য মাচা তৈরি করতে হবে। মাচা দেওয়ার জন্য বাঁশ ব্যবহার করতে হবে। মাচা তৈরি করার পর সীমের গাছ বাড়তে থাকলে মাচাতে বিছায়ে দিতে হবে।

 

 

রোগ ও পোকা দমন

এ জাতের সীমে রোগ ও পোকার আক্রমন কম। আগাম চাষ করলে পোকার আক্রমন কিছুটা বেশি হয় এ সময় লেদা পোকা গাছের পাতা খেয়ে ছিদ্র করে ফেলে। এ পোকা দমন করার জন্য সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি ১৬ লিটারে ২০মিলি+ এমামেকটিন বেনজয়েট ১৬ লিটারে ১০ গ্রাম হারে ব্যবহার করলে এ পোকা দমন করা যাবে। আগাম চাষের ফুলে পচন ধরতে পারে পচন দেখা মাত্রই নাটিভো ১৬ লিটারে ৫ গ্রাম / ফলিকুর ১৬ লিটারে ১৬ মিলি হারে ব্যবহার করতে হবে। যদি সীমের গাছের গোড়া পঁচে তাহলে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (১৬ লিটারের ড্রামে ২০ মিলি) দিয়ে গাছের গোড়া ভালো করে স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে।

 

 

সীম সংগ্রহ
কেরালা শিমের আগাম ফলন

কেরালা শিম জাতটি খাটো জাতের। এটি অল্প বয়স থেকেই ফল দিতে থাকে। বীজ রোপনের ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফুল চলে আসে এবং ৮০-৯০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রথম বার শিম সংগ্রহের পর জমিতে রাসায়নিক সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে, যেটি আমরা মাদায় সার প্রয়োগের সময় বলে দিয়েছি।

 

 

ফলন

বিঘা প্রতি কেরালা ১ জাতের শিমের (৩৩ শতকে) ফলন সর্বনিম্ন ৭০০–১০০০ কেজি।

 

তথ্যসূত্রঃ সাকসেস ফারমস