কিভাবে চৌবাচ্চায় বাগদা চিংড়ির চাষ করে আয় করবেন লক্ষাধিক টাকা

বাগদা চিংড়ি আমাদের দেশে একটি পরিচিত মাছ। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু এবং এটি দেখতেও সুন্দর। বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বাগদা চিংড়ি দশপদ বিশিষ্ট চিংড়ি গোত্রীয় প্রাণী। আমাদের দেশে ছোট বড় প্রায় সকলেরই প্রিয় এই মাছ। আপনি ইচ্ছা করলে চৌবাচ্চায় এই বাগদা চিংড়ির চাষ করতে পারেন। আজকের এ লেখায় আমরা জেনে নিব চৌবাচ্চায় বাগদা চিংড়ি চাষ করার কৌশল সম্পর্কে-

 

 

চৌবাচ্চা বাছাই –

ক) বাড়িতে বাগদা চিংড়ি চাষ করার জন্য আপনি মাঝারি সাইজের চৌবাচ্চা ব্যবহার করতে পারেন ।

খ) তবে খেয়াল রাখবেন যেন চৌবাচ্চাটি গভীর হয় ।

 

 

সঠিক সময়/মৌসুম –

ক) বছররের যেকোন সময়েই আপনি বাগদা চিংড়ি চাষ করতে পারেন ।

 

খ) তবে খেয়াল রাখবেন যে বাগদা চিংড়ি পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সকাল অথবা সন্ধ্যা এই দুই সময়ের যেকোন একটি নির্বাচন করতে হবে

 

গ) কারণ এসময় তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় থাকে । তা না হলে মাছ মরে যেতে পারে ।

 

পোনা ছাড়া ও তার পরিচর্যা-

 

ক) বাগদা চিংড়ি চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে পোনা সংগ্রহ করতে হবে ।

 

খ) এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ যেকোন নার্সারী হতে পোনা আহরন করতে পারেন ।

 

গ) এছাড়াও আপনি প্রাকৃতিক ভাবে নদী থেকে বাগদা চিংড়ি পোনা আহরণ করতে পারেন ।

 

চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল-

ক) বাগদা চিংড়ি চাষ করার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়ম অবলম্বন করতে হবে ।

 

খ) বাড়িতে চৌবাচ্চায় বাগদা চিংড়ি চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে বাগদা চিংড়ির পোনাকে পলিব্যাগ সহ কিছুক্ষণ চৌবাচ্চার পানিতে চুবিয়ে রাখতে হবে ।

 

গ) এরপর ব্যাগের পানি ও পাত্রের পানির তাপমাত্রা একই মাত্রায় আনতে হবে । তারপর ব্যাগের মুখ খুলে পাত্রের পানি অল্প অল্প করে ব্যাগে দিতে হবে এবং ব্যাগের পানি অল্প অল্প করে পাত্রে ফেলতে হবে ।

 

ঘ) ৪০-৫০ মিনিট সময় ধরে এরূপভাবে পোনাকে পাত্রের পানির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে ।

 

খাবারের পরিমাণ ও খাবার প্রয়োগ-

ক) বাগদা চিংড়ি চাষে আপনাকে নিয়মিত উপযুক্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে। উপযুক্ত সুযোগ বা পরিবেশে খাদ্য ব্যবহার না হলে তা বাগদা চিংড়ির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

 

খ) মাছ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শেওলা খেয়ে থাকে। তবে আপনি শামুক, ঝিনুক, কেঁচো, স্কুইড, কাঁকড়া, মাংস, ইত্যাদি দিতে পারেন।

 

ঘ) এছাড়াও চাল, ডাল, গম, ভূট্টা ইত্যাদি দানাদার উদ্ভিজ্জ খাদ্য চিংড়িকে দেওয়া যায়।

 

রোগ বালাই ও তার প্রতিকার –

ক) বাগদা চিংড়ির বেশকিছু রোগ বালাই হয়ে থাকে। মনে রাখবেন চিংড়ির জীবন চক্রে এক বা একাধিক অস্বাভাবিক অবস্থা যা চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে বা অবস্থাভেদে চিংড়ি মারা যায়।

 

খ) এছাড়াও চিংড়ি চাষে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী, ইত্যাদি দ্বারা আক্রমণ হতে পারে। তাই নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।

 

বাগদা চিংড়ির চাষে সার প্রয়োগ –

 

ক) বাগদা চিংড়ি চাষ করার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়মে সার দিতে হবে।

 

খ) তা নাহলে বাগদা চিংড়ির বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে। তাই মাঝেমধ্যে সার দিতে হবে।

 

পরিচর্যা –

ক) বাড়িতে চৌবাচ্চায় বাগদা চিংড়ি চাষ করতে হলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে চৌবাচ্চাটির তলদেশ সার্বক্ষণিক পরিস্কার রাখতে হবে।

 

খ) অন্যান্য জলজ প্রাণী নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। অসুস্থ চিংড়ি খাদ্য গ্রহন করে না। তাই অসুস্থ চিংড়িকে আলাদা করতে হবে।

 

গ) নিয়মিত পানিতে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হবে। প্রয়োজনে পানি বদল করে দিতে হবে।

 

বাগদা চিংড়ির খাদ্য গুণাগুণ-

 

ক) বাগদা চিংড়ির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টিগুন বিদ্যমান।

 

খ) এছাড়াও চিংড়িতে অনেক ধরণের খাদ্য গুন রয়েছে। এটি খেতে অনাক সুস্বাদু।

 

কখন বাগদা চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করবেন

 

বাগদা চিংড়ি মাছ যখন উপযুক্ত বয়স হবে এবং বড় হবে তখন চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করতে হবে।

 

মাছ সংগ্রহ-

বাড়িতে চৌবাচ্চায় আপনি সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করলে বেশকিছু বাগদা চিংড়ি পেতে পারেন যা আপনার পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে আপনি বাজারে বিক্রিও করতে পারেন।

 

তথ্যসূত্রঃ এগ্রো ফারমস ২৪