আধুনিক উপায়ে আগাম লাউ চাষ পদ্ধতি

লাউ হচ্ছে সবজি জগতের অন্যতম একটি নাম। দেশের সব জায়গায় এর চাষ হয়ে আসছে বহু আগে থেকে।এমন কি বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে ,উঠানে এই গাছ দেখা যায়। লাউ এর জনপ্রিয়তা বর্তমানে বহুগুন বেড়েছে। শুধু ফলই নয়, কচি ডগাও শাক হিসেবে খাওয়া হয়।লাউ এ রয়েছে ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস যা দাত ও হাড়ের গঠন মজবুত রাখে। বর্তমানে আধুনিক উপায়ে আগাম লাউ চাষ পদ্ধতি এর মাধ্যেমে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে ও কৃষক লাভবান হচ্ছে।

 

 

মাটির ধরণ

লাউ এটেল-দোআঁশ, দোআশ, বেলে-দোআশ ইত্যাদি সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়।তবে এটেল মাটির পানি ধারন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় খরা মৌসুমে এটেল মাটি লাউ চাষের জন্য উপযুক্ত। গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে,তাই জমি উচুতে হওয়া ভালো।

 

 

লাউ চাষের সময়

লাউ শীতকালীন সবজি হলেও সারা বছর চাষাবাদ করা সম্ভব। আগাম শীতকালীন বা শীতকালে চাষাবাদের জন্য ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক মাসে বীজ বপন করতে হয়। আর গ্রীষ্মকালে চাষাবাদের জন্য মাঘ-ফাল্গুন মাসে বীজ বপন করতে হয়। এছাড়াও বছরের যে কোন সময় চাষাবাদ করা সম্ভব।

 

 

লাউয়ের চারা তৈরী

বীজ সরাসরি জমিতে বপন করা যায়, আবার চারা তৈরী করেও রোপন করা যায়। চারা তৈরী করে রোপনে নিরাপত্তা, সময় কম ও ফলন বেশি হয়। প্রথমে বীজ ২-১ ঘন্টা রোদে রেখে তা ছায়ায় ঠান্ডা করে নিতে হবে। এর পর ২০-২৫ ঘন্টা পানিতে রেখে দিতে হবে।এর পর বীজগুলো গরম কাপড়/ ছালার চট ভিজিয়ে তাতে পেচিয়ে ২ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

 

 

দুই দিনে বীজ ফেটে শেকড় বের হলে তা সাবধানে পলিব্যাগে বপন করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে সামান্য একটু পানি দিতে হবে। পলিব্যগে ২ ভাগ এটেল মাটির সাথে ১ ভাগ পচা ঝুরঝুরে গোবর মিক্স করে নিতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার জন্য পলি ব্যগের নিচে ফুটো করে নিতে হবে। পলিব্যাগে রোপনের ৩ দিন পর গাছ বের হবে। গাছ বের হওয়ার ১৫-১৭ দিন পর চারা গাছের ৩-৪ টা পাতা আসলে তা রোপনের উপযুক্ত হবে।

 

 

জমি প্রস্তুতকরন

লাউ গাছের শেকড় প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।যাতে সহজে শেকড় অনেক দুর যেতে পারে তার জন্য গভীরভাবে ৩-৪ বার চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। গোবর বা জৈব সার বেশি পরিমানে ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। চাষের পর ২.৫ অথবা ৩ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরী করতে হবে। ২.৫ মিটার পর পর মাদা করতে হবে।

 

 

চারা রোপন

প্রতি মাদায় ২-৩ টি চারা অথবা ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হবে। জমি শুকনো থাকলে চারা রোপন করে পানি দিতে হবে। রোদ বেশি থাকলে রোপনকৃত চারা কিছু দিয়ে রোদ থেকে আড়াল করে রাখতে হবে।

 

 

চারা পরিচর্যা

চারায় ছাই, কেরোসিন+পানি, অথবা সাইপারমেথ্রিন/ক্লোরপাইরিফস হালকা করে স্প্রে করলে অথবা মশারি দিয়ে ঢেকে বিটল পোকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ১৫ দিন পর ২ কেজী ইউরিয়া ও দেড় কেজী এমওপি সার (এই হারে) মিক্স করে প্রতি মাদায় ২-৩ মুঠ করে গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দুরে গোল করে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছ লতা নিতে শুরু করলে বাশের কঞ্চি বা শক্ত কাঠি দিতে হবে।

 

 

লাউ গাছের মাচা তৈরী

লাউ এর গাছ অনেক ভারি হয়, তাই মাচা মজবুত করে দিতে হবে যাতে ভেঙে না যায়।

 

 

লাউ গাছের পরিচর্যা

ভালো জাত আর জমি নির্বাচনে ফলন নিশ্চিত হয় না। অধিক ফলন পাওয়ার জন্য অধিক পরিচর্যা করতে হয়। গাছের গোড়া থেকে ২.৫ ফিট পর্যন্ত বা মাচায় ওঠার আগে যে শাখাগুলো বের হয়, তা কেটে ফেলতে হবে। গাছে ফুল আসলে ফেরমনের ব্যবস্থা করতে হবে। কড়া আসলে নিয়মিত হাত পরাগায়ন করতে হবে। তাহলে প্রচুর পরিমান লাউ এর ফলন হবে। পাতা কেটে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।লাউ গাছে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই খরার সময় ৪-৫ দিন পর পর পানি দিতে হয়।

 

 

সার প্রয়োগ

লাউ গাছে প্রচুর পরিমান সার দিতে হবে, তাহলে ফলন ভালো হবে। গাছে ফল দেয়া শুরু হলে ২-১ সপ্তাহ পর পর বা গাছের শক্তি কম মনে হলে ডিএপি সার ব্যবহার করতে হবে। তবে এর সাথে সামান্য ইউরিয়া ও পটাশ সমপরিমান দেয়া যায়। মাঝে মাঝে জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম সারও খুবই সামান্য পরিমান দিতে হবে। লাউ গাছে প্রচুর ক্যালশিয়ামের প্রয়োজন হয়। তাই মাঝে মাঝে জিপসাম দিতে হবে। ফল ঝরা বন্ধ করার জন্য বোরনও দিতে হবে। গাছে যদি কড়া কম আসে, তাহলে হরমন হিসেবে লিটোসেন বা ফ্লোরা স্প্রে করতে হবে।

 

 

রোগ বালাই

লাউ গাছে ডাওনি মিলডিউ বা পাউডারী মিলডিউ রোগ দেখা যায়। পাউডারী মিলডিউ রোগে পাতার উপর ক্ষুদ্র সাদা পাউডার দেখা যায়। ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে এ রোগ ঠিক করা যায়। ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে লাউ এর পচনজনিত রোগও ঠিক হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। লাউ এর রং ও খুব সুন্দর ও আকর্ষনীয় হয়।

 

 

ফলন

লাউ কচি অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়। পরাগায়নের ১৫ দিন পরই লাউ খাওয়ার উপযুক্ত হয়। উপযুক্ত হলে সাথে সাথে কেটে মাচা পাতলা করে দিতে হবে। এতে ফলন বৃদ্ধি পাবে।

 

তথ্যসূত্রঃ সবুজের বাড়ি